প্রতিবেদন: সুবর্ণা, চিত্রগ্রহণ: প্রিয়ঙ্কর, সম্পাদনা: অসীম
বাংলা ভাষাকে আঁকড়ে ধরে শাহাদৎ বরণের ইতিহাস শুধু ২১ ফেব্রুয়ারিতেই থেমে থাকেনি। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের প্রায় দশ বছর বাদে, মাতৃভাষা বাংলার জন্য আর এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী থেকেছে এ দেশও। ১৯ মে-র বরাক উপত্যকার গল্প আজ খানিকটা বিস্মৃতির আঁধারে। অসমের শিলচর স্টেশনের মাটিতে সে দিন মিশেছিল ১১ বাঙালির রক্ত। সেই ১১ ভাষা শহীদের মধ্যে ছিলেন ষোড়শী কমলা ভট্টাচার্য, এক দিন আগেই যাঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। কমলার অনেক সহপাঠীও ছিলেন সে দিনের মিছিলে। যেমন, নীলিমা বসু পাল। ৬২ বছর আগের এক সকালে মা-র মেখে দেওয়া পান্তা আর লঙ্কাপোড়া খেয়ে, দাদা আর বোনের হাত ধরে রওনা দিয়েছিলেন মিছিলে পা মেলাতে। কাঁদানে গ্যাসের জ্বালা সহ্য করে, অসম পুলিশের চোখরাঙানি অগ্রাহ্য করে ছুটে গিয়েছিলেন ভাষার ভালবাসায়। নীলিমা ফিরলেও ফেরেননি তাঁর ক্লাসনোট ভাগ করে নেওয়ার বন্ধু কমলা, যেমন ফেরেননি আরও দশ। কাঁদানে গ্যাসের দাপটে ছলছল করা চোখে দেখেছেন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু। অশীতিপর চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হলেও এখনও ১৯-এর ১১ জ্বলজ্বল করেন নীলিমার স্মৃতিতে। আফসোস থেকে যায়, বাংলা তাঁর সাথীদের মনে রাখেনি।
১৯৬০ সালে ঘোষণা করা হয় অসমের সরকারি ভাষা হবে অহমিয়া। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিস্তীর্ণ বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী মানুষ, শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। অতঃপর ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, মৃত্যু হয় ১১ জনের। শিলচরের সন্তান শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের কথায়, যে ভাষায় গান লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ, সেই ভাষাকে বুকে আঁকড়ে রাখতে ১৯৬১-র কবিপক্ষে রক্তে ভিজেছিল বরাকের মাটি। সরকারি দমনপীড়নে আন্দোলনের ইতি ঘটলেও, থেকে যায় গভীর এক ক্ষত, বরাকের হাওয়ায় কান পাতলে শোনা যায় চাপা কান্না। সেই কান্নাই সুর হয়ে ওঠে দোহারের কণ্ঠে-দোতারায়। বার বার মনে করিয়ে দেয়, 'শোনো ডাকে ওই একাদশ শহীদেরা, ভাই/ আর দেরি নয়, দেরি নয়’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy