
চাকরিহারাদের পাশে শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
আন্দোলনকারীরা বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মূলত ৪টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আন্দোলন জারি রাখলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত করবেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিদ্যালয়ে না গিয়েই পড়াবেন তাঁরা।
এক নজরে আন্দোলনকারীদের সিদ্ধান্ত-
১. শিক্ষাদফতরের বাইরে পড়ুয়াদের পাঠদান করবেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা।
২. বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান চলবে।
৩. বৃহস্পতিবারে পুলিশের আঘতে আহত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও যোগ দেবেন অবস্থান মঞ্চে।
৪. শনিবার দুপুর সাড়ে ৩টে তে করুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিল করবেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘অবস্থানে সহানুভূতি জানাতে আসবে পড়ুয়ারা। আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকারা তাদের পড়াবে শিক্ষা দফতরের বাইরে।’’
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার সময়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসছেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষা কর্মীদের ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নিয়ে গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করল রাজ্য সরকার।
শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি আপনাদের আন্দোলনে মাঝে মাঝেই আসব। একদিন আপনাদের সঙ্গে আন্দোলনস্থলে রাত কাটাব।’’ আঙুল তুলেছেন নবান্নের দিকে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য শুভেন্দুর কাছে আবেদন জানান চাকরিহারারা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আপনারা অরাজনৈতিক যে কোনও স্থানে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমি সব সময় আপনাদের কথা শুনব। সাহায্য করব।’’
শুভেন্দু বলেন, ‘‘পুলিশ অত্যাচার করেছে। ধিক্কার জানাই।’’
৯ জুন বিধানসভায় অধিবেশন শুরু হচ্ছে। চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে ওই দিন বিধানসভা অচল করার ডাক দিলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সহ্য এবং ধৈর্য রাখবেন। জয় আপনাদের হাতের কাছে।’’
শুক্রবার শিক্ষকদের ধিক্কার সভায় উপস্থিত হলেও মঞ্চে উঠলেন না শুভেন্দু। তিনি মঞ্চের পাশে বসে রইলেন। ভাষণ দিলেন বেশ কয়েক জন।
শিক্ষকদের ধিক্কার সভায় উপস্থিত হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বিজেপির কয়েক জন নেতা শুক্রবার চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়াতে বিকাশ ভবনের সামনে তাঁদের অবস্থানে যান। তবে কারও হাতেই ছিল না দলীয় পতাকা বা ঝান্ডা। উল্লেখ্য, চাকরিহারারা শুক্রবারই দাবি করেন, সব রাজনৈতিক দলকেই তাঁদের আন্দোলনে স্বাগত জানানো হবে। তবে অবশ্যই দলীয় ঝান্ডা বা পতাকা ছাড়া আসতে হবে।
বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও যাতে কোনও আধিকারিক বা কর্মী বিকাশ ভবনে আটকে না পড়েন, সেই কারণে বেলা ৩টের পর ছুটি ঘোষণা করা হল। সূত্রের খবর। ৩টের মধ্যে সমস্ত কর্মীদের চলে যেতে বলা হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় বলেন, ‘‘আমরা কোনও বলপ্রয়োগ করিনি। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে চাকরি গিয়েছে। ইচ্ছে করে কেউ এখানে আন্দোলন করছে না। এখন ওরা প্রোটোকলের কথা বলছে। তবে যখন চাকরি স্বচ্ছভাবে দেওয়ার কথা ছিল তখন এই প্রোটোকল কোথায় ছিল?’’
চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা বিকাশ ভবনের কর্মীদের আটকালেই পরিস্থিতি পাল্টে যায় বলেই দাবি পুলিশের। সুপ্রতীম বলেন, ‘‘বিকেল পর্যন্ত পুলিশ সংযত ছিল। কিন্তু ছুটি হওয়ার পরও প্রায় ৫০০-৬০০ জন বিকাশ ভবনে আটকে পড়েন। তাঁদের বার করার সময়ই আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর চড়াও হন। পরিস্থিতি সামাল দিতেই বাধ্য হয়ে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে।’’ তৃণমূল নেতা তথা বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বিকাশ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। সব্যসাচীর গাড়ির সামনে অনেকে শুয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে ধাক্কা মারা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের দাবি, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে সব্যসাচী নিজের কাজে বিকাশ ভবনে এসেছিলেন। তখন আন্দোলনকারীরা তাঁকে আটকান।’’
বৃহস্পতিবার রাতে বিকাশ ভবনের সামনে লাঠিচার্জের প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল পুলিশ। সুপ্রতীম সরকার (এডিজি দক্ষিণবঙ্গ) বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকেই সংযত ছিল।’’ কেন লাঠিচার্জ করল পুলিশ, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁ কথায়, ‘‘১০ দিন ধরে চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা পালা করে বিকাশ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন। পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা করেছে। তবে গতকাল পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চাকরিহারাদের একাংশ ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশ ভবন চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করেন। জোরপূর্বক ভেতরে ঢোকার চেষ্টা হয়। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও করা হয়। তবে তখনও পুলিশ সংযত ছিল।’’
চাকরিহারাদের তরফে মেহবুব মণ্ডল, চিন্ময় মণ্ডলেরা শুক্রবার বিকাশ ভবনের সামনে থেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ঝান্ডা ছেড়ে যদি কেউ আমাদের লড়াইয়ে থাকতে চান, তবে স্বাগত। যাঁরা মার খেয়েছেন, তাঁদের পাশে গোটা দেশবাসী রয়েছেন। জীবন-জীবিকা ফিরিয়ে আনবই। আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। সত্যিই বলেছি বলেই আমরা মার খেয়েছি।’’
বিকাশ ভবনের সামনে অনেক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তারা ব্যারিকেড করে রেখেছে মূল গেটের সামনে। শুধুমাত্র বিকাশ ভবনের কর্মচারী ছাড়া অন্য কেউ ভেতরে ঢুকতে না পারেন, সেই দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে। প্রত্যেক কর্মীর পরিচয়পত্র যাচাই করার পরই বিকাশ ভবনে ঢোকার অনুমতি মিলছে।
আন্দোলনকারীরা যাতে বিকাশ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই কারণে মূল গেট-সহ বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ব্যারিকেড করল পুলিশ। বিকাশ ভবনের কর্মীদের যাতে ঢুকতে বা বার হতে অসুবিধা না হয়, তারও ব্যবস্থা করছে তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামানো হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা নিজেরাই রাতে বিকাশ ভবনের অদূরে ব্যারিকেড করে অবস্থান শুরু করেন। তবে রাত বাড়তেই নাকি বেশ কয়েকটি বাইক তাঁদের অবস্থান মঞ্চের পাশ দিয়ে যাতায়াত করে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। তাঁদের অভিযোগ, বিকাশ ভবনের সামনে রাতে বাইকবাহিনী দাপট দেখায়। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীই তাণ্ডব চালায়। পুলিশকে বলা সত্ত্বেও তারা নিষ্ক্রিয় ছিল, অভিযোগ চাকরিহারাদের।
পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন। জানানো হয়, পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে শুক্রবার ধিক্কার দিবস পালন করবেন তাঁরা। রাজ্য জুড়ে স্কুল এবং কলেজগুলিতে এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান চাকরিহারারা। শুধু তা-ই নয়, বিকেলে বিকাশ ভবনের সামনে গন কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই মঞ্চে বিশিষ্টজনদের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের’ সদস্যেরা। সেইমতো নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে জমায়েত শুরু হয়। তবে সেই জমায়েত বিকাশ ভবনের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করলেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অভিযোগ, কয়েক জন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরেও ঢুকে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে পুলিশের রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে আন্দোলনকারীরা বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানে বসেন। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে আশ্বাস না-দিলে তাঁরা অবস্থান থেকে নড়বেন না। তবে রাত গড়াতেই পরিস্থিতি অন্য দিকে গড়ায়। রাতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের লাঠির আঘাতে কয়েক জন চাকরিহারা আন্দোলনকারীর মাথাও ফাটে বলে দাবি। তার পরই বিক্ষোভকারীরা জানায়, তাঁরা রাতভর বিকাশ ভবনের অদূরে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন।
বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। —নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy