(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে) ছবি: সংগৃহীত।
বৈঠক শেষের মুখে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের প্রতিবাদে কি ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে গঠিত ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল থেকে তৃণমূলের এক মাত্র প্রতিনিধি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে নেওয়া হবে? উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘না। উনি মাতৃভূমির জন্য গিয়েছেন। যত দিন আমাদের পার্টি বেঁচে আছে, আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাব। এটাই আমাদের কাজ। কেউ এখন দেশে ফিরবে না। ওঁর কাজ উনি করবেন। দেশ কারও একার নয়। দেশ আমাদের সবার।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা সিঁদুরকে সম্মান করি। মহিলারা তাঁর স্বামীর থেকে সিঁদুর পরেন। আপনি সেই সিঁদুরকে অসম্মান করছেন। আপনি সকলের স্বামী নন। নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না কেন? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এ কথা বলতে হচ্ছে।’’
মমতা: ‘‘বাংলা আপনার (কেন্দ্রের) কাছে এক লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পায়। আগে সেই টাকা দিন, তার পর কথা বলুন।’’
মমতা: ‘‘আপনাকে খোলা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। আজ বাংলা নিরাপদ বলে আপনি ঠিক নির্বাচনের আগে এখানে আসেন। আসেন বাংলার মানুষকে ভুল বোঝাতে, কুৎসা রটাতে, ষড়যন্ত্র করতে। মণিপুরে গেলেন না কেন? আপনার তো আগে ওখানে যাওয়া উচিত ছিল।’’
এর আগেও ১০০ দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা থেকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ বাংলাকে বঞ্চিত করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে আপনারা কাজ করিয়ে নিয়েছেন, টাকা দেননি। আমরা সব দিলাম। কেন চার বছর ধরে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা বন্ধ করেছেন? বাংলার স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ভেঙে দিতে চাইছেন উনি।’’
মমতা বলেন, ‘‘এত বড় বড় কথা বলেন। সেনাকে স্যালুট করতে আসবেন ভেবেছিলাম। সিকিমে তো গেলেনই না। ভয় পান নাকি? বিদেশে তো এত ঘুরতেন। প্রচার হওয়া উচিত সেনার। এখনও জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে পারেননি কেন? সব দেখানোর জন্য।’’
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতে বার বার প্রধানমন্ত্রীকে ‘বন্ধু’ বলেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘ এত বড় নেতা আপনি, আমেরিকা বললেই চুপ হয়ে যান!’’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণের জবাব হিসাবে মমতা বলেন, ‘‘আগে নিজের দোষ দেখুন। আপনাদের দুর্নীতি অনেক বেশি। কোনও কিছুতে দুর্নীতি ধরা পড়লে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু যখন আপনার গুজরাতে, মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানের চরবৃত্তি করার জন্য কেউ ধরা পড়েন, তখন আপনারা কী করেন?’’
নরেন্দ্র মোদীকে লক্ষ্য করেও সরাসরি আক্রমণ শানালেন মমতা। বললেন, ‘‘উনি আগে নিজেকে চা-ওয়ালা বলতেন। পরে বললেন, পাহারাদার! আর এখন সিঁদুর বেচতে এসেছেন?’’
মোদীর জনসভা নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘উনি বিভাজনের রাজনীতি করছেন। কেন আজ ওঁকে অসম থেকে লোক নিয়ে আসতে হল? তার মানে উত্তরবঙ্গের মানুষ ওঁকে চিনে গিয়েছেন। ওঁর উপর আর মানুষের বিশ্বাস নেই।’’
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ওই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ ওঁরা দিয়েছেন। এই নাম দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। যে সময় বিরোধীরাও দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেই সময় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে এখানে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী!’’
ঠিক দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ বলতে শুরু করলেন মমতা। প্রথমেই কথা বললেন আসন্ন দুর্যোগের প্রস্তুতি নিয়ে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হবে দক্ষিণবঙ্গে। উত্তাল থাকবে সমুদ্রও। উপকূলে মৎস্যজীবীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গভীর সমুদ্রে যেতেও বারণ করা হয়েছে। উপকূলে প্রস্তুতিও নিয়েছে প্রশাসন।
মোদীর উল্লিখিত পাঁচটি ‘সঙ্কট’ প্রসঙ্গে পাল্টা জবাব দেয় তৃণমূলও। এসএসসি দুর্নীতির প্রসঙ্গে সর্বভারতীয় স্তরের নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি, ৪৫ শতাংশ বেকারত্বের হার— ইত্যাদি নানা উদাহরণ তুলে মোদী সরকারকে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূলও। ১০০ দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা থেকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ বাংলাকে বঞ্চিত করা নিয়েও প্রশ্ন তোলে তারা।
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মোদী আরও বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ-মালদহে যা হয়েছে, তা বর্তমান সরকারের নির্মমতার উদাহরণ। এখানকার সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রতি বার আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ ভাবে কি কোনও সরকার চলতে পারে?’’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের ঘটনার সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ঘটনার মিল রয়েছে। এই সরকারকে আমাদের উৎখাত করতেই হবে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই তা হবে।’’
এসএসসি দুর্নীতিতে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের দুর্নীতির জন্য এখানকার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এঁরা নিজেদের ভুল মানতেই চাইছেন না। উল্টে আদালতকে আক্রমণ করছেন এঁরা। তৃণমূল সরকার অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি তা হতে দেবে না।’’
বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে সিটি গ্যাস বিতরণ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে শাসকদল তৃণমূলকে নানামুখী আক্রমণও করেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘এই রাজ্যে পাঁচটি সঙ্কট রয়েছে।’’ দুর্নীতি, নারীদের নিরাপত্তা, শিক্ষা ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গে তৃণমূল সরকারের গাফিলতিগুলি তুলে ধরে আক্রমণ শানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy