Advertisement
০৭ মে ২০২৪

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃত ১

এক দিনের জ্বরে বাড়িতে মারা গেলেন এক যুবক। সোমবার সকালে মালবাজার ব্লকের রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতে দক্ষিণ হাঁসখালি গ্রামের ঘটনা। ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই যুবকের নাম বিনোদ রায় (২৭)। চিকিৎসার সময় না পাওয়ায় দিনমজুর যুবকের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে মালবাজার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপক দাস বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি ও মালবাজার শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

এক দিনের জ্বরে বাড়িতে মারা গেলেন এক যুবক। সোমবার সকালে মালবাজার ব্লকের রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতে দক্ষিণ হাঁসখালি গ্রামের ঘটনা। ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই যুবকের নাম বিনোদ রায় (২৭)। চিকিৎসার সময় না পাওয়ায় দিনমজুর যুবকের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে মালবাজার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপক দাস বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।” ১৬ জুলাই ওই পঞ্চায়েত এলাকার শহিরন বেওয়া (৬৫) একই ভাবে মারা যান। এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে পাঁচ দিনে দু’জনের মৃত্যু হল ওই গ্রামে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার মেডিক্যাল টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

জলপাইগুড়ি অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২ পূরণ শর্মা জানান, আজ মঙ্গলবার গ্রামে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হবে। রক্ত নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ছাড়া এলাকায় কত জন জ্বরের রোগী রয়েছেন তা দেখা হবে। দক্ষিণ হাঁসখালি গ্রামের অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জ্বর, অচৈতন্য হয়ে পড়া রোগীদের ভিড় বাড়ছে। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক শুভজিৎ মল্লিক এই দিন বলেন, “এলাকায় প্রতি বাড়িতে জ্বরের রোগী। এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ইতিমধ্যে দু’ জন মারা গিয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে রোগী আসছেন।”

১৭ জুলাই মালবাজার মহকুমায় নাগরাকাটা ব্লকের সুখানি বস্তির বাসিন্দা নবিজান আলি (৬০) উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। মহকুমার তিনটি ব্লকে ৩০ জনের বেশি অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। রাজাডাঙা, সোনগাছি চা বাগানের নাখটি ডিভিশন, নাগরাকাটার সুখানি বস্তি এলাকায় শতাধিক জ্বরে আক্রান্ত রয়েছেন। মালবাজার শহরেও জ্বরে আক্রান্ত সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার কাজ চলছে। মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি জানান, আজ মঙ্গলবার থেকেই মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে।

এ দিন মৃত বিনোদের স্ত্রী পার্বতী রায় জানান, ক্রান্তির উত্তর সারিপাকুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে রবিবারই চিকিৎসক দেখান বিনোদ। কিন্তু রবিবার রাত থেকে তাঁর পরিস্থিতির অবনতি হয়। জ্বর, বুকে ব্যথা, মাথা ব্যথা ছিল। অচৈতন্য হয়ে পড়ছিল। রাতে জ্বরের ঘোরে উল্টোপাল্টা কথা বলছিলেন বিনোদ। ভোরের দিকে খিঁচুনি দিয়ে কাঁপতে থাকে। সকালে মারা যান। বিনোদের মা নুতুবালা রায় জ্বরে আক্রান্ত। বিনোদের প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন বলেন, “প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাতে চিকিৎসক থাকে না। ঠিক করি সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাব। সেই সুযোগ দিল না।”

জ্বরে আক্রান্ত এলাকার মহম্মদ হাফিজউদ্দিন, করিমুল ইসলাম। তাঁরা জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কিছু ওষুধ দিয়েছে। তাতে জ্বর কমছে না। পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন ক্রান্তির যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি মেহবুব আলম। স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেডিক্যাল টিম পাঠানোর দাবি তুলেছেন ওই যুব নেতা। তিনি বলেন, “কেন জ্বর হচ্ছে বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন না। কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি সেটা জানানো হোক।” তিনিও অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য দফতর থেকে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে কোনও রকম প্রচার করা হয়নি। স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আঞ্জুমা খাতুন এই প্রসঙ্গে বলেন, “পরপর দু’জন রোগীর মৃত্যুর পরে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে জ্বর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE