Advertisement
০৪ মে ২০২৪
PM Narendra Modi

আঞ্চলিক যুদ্ধ যেন না হয়, সতর্ক করলেন মোদী

মোদী বলেন, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সঙ্কটকে দ্বিরাষ্ট্রীয় স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমেই দূর করতে হবে। যদিও বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বৈঠকের পর জানিয়েছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে জি২০-র সব দেশ একমত নয়।

An image of PM Narendra Modi

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৩
Share: Save:

ইজ়রায়েল এবং হামাসের সংঘাত যেন আঞ্চলিক যুদ্ধের চেহারা না নেয় এবং তা সুনিশ্চিত করার জন্য একযোগে যা করার করতে হবে— আজ ভিডিয়ো মাধ্যমে জি২০ বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রনেতাদের এই আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মোদী আজ তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, “সেপ্টেম্বরে যখন আমি ভিডিয়ো মাধ্যমে জি২০ আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন আমাদের ধারণাও ছিল না আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত মাসে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় সংঘাত এবং নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলি সকলের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।“

বৈঠক শেষে রাতে প্রধানমন্ত্রী ফের সরব হন ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এ দিনের জি২০ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষের বিষয়টিই ছিল প্রধান এবং তাতে সুর এতটাই চড়া ছিল যে বৈঠকের শেষেও ভারসাম্যের স্পষ্ট বার্তা এবং নাম না করে প্যালেস্টাইনের শিশু ও নারীমেধ যজ্ঞের কঠোর নিন্দাও করতে হয়েছে মোদীকে। তিনি বলেন, “উপস্থিত সকলেই সন্ত্রাসবাদের কড়া নিন্দা করেছেন। বলা হয়েছে, সন্ত্রাবাদ নিয়ে কোনও ধরনের সহনশীলতা না দেখানোর কথা। বিশেষ করে নিষ্পাপ শিশু এবং মহিলাদের উপর আক্রমণ একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।”

মোদী বলেন, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সঙ্কটকে দ্বিরাষ্ট্রীয় স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমেই দূর করতে হবে। যদিও বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বৈঠকের পর জানিয়েছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে জি২০-র সব দেশ একমত নয়। তবে পণবন্দিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে সব দেশই।

কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, গত কয়েক সপ্তাহ ইজ়রায়েল-হামাস সংঘর্ষ ভারতের বিদেশনীতিকেও প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দেশে এখন ভোটের মরসুম। প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই স্পষ্ট ইজ়রায়েলপন্থী অবস্থান নিয়ে হামাসের সন্ত্রাসকে কঠোরতম ভাষায় সমালোচনা করে এসেছেন। ইজ়রায়েল অস্বস্তিতে পড়তে পারে, রাষ্ট্রপু্ঞ্জে আনা এমন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ভারত। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী রাজনীতিতে এবং আরব মুসলিম দেশগুলিতে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্যালেস্টাইনের শিশু, নারী হাসপাতালের উপর ইজ়রায়েলের নারকীয় আক্রমণ নিয়ে ভারতের মুখ বন্ধ কেন? এই সমালোচনাও শোনা গিয়েছে, ভারত সরকার তার দীর্ঘ দিনের প্যালেস্টাইন নীতি থেকে সরে গিয়েছে মুসলিম বিদ্বেষের কারণে।

এরপর কিন্তু ক্রমশ দ্বিরাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধানের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে সাউথ ব্লককে। প্রধানমন্ত্রীর জি২০ বক্তৃতাতেও শোনা গিয়েছে ভারসাম্যের কথা। মোদী সাবধান করেছেন উন্নত দেশগুলিকেও, যাতে এই সংঘাত আরব বিশ্ব বনাম পশ্চিমের মধ্যে ধর্মযুদ্ধের আকার না নেয়। তাঁর কথায়, “পশ্চিম এশিয়ার অস্থির পরিস্থিতি আমাদের সবার জন্য গভীর উদ্বেগের। ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাত যাতে কোনও ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধের চেহারা না নেয় তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। মানবিকতার খাতিরে সন্ত্রাস এবং হিংসার বিরুদ্ধে আমাদের সরব হতে হবে। আজ সঙ্কটের মেঘ আকাশে। আমাদের এক পরিবার হয়ে পূর্ণ শক্তিতে মানবতার কথা বলতে হবে।”

বিদেশ মন্ত্রকের মতে, যুদ্ধ আরও বড় আকার নিলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জ্বালানি, সার এবং খাদ্যের এমন সঙ্কট তৈরি হবে, মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছবে, মন্দার এমন গভীর গহ্বর তৈরি হবে যে তা আর সামলানো যাবে না। তদুপরি তৈরি হবে বিশ্বযুদ্ধকালীন মানবিকতার সঙ্কট। কূটনৈতিক শিবিরের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান তাই সময়োপযোগী এবং সে জন্য সঠিক মঞ্চও তিনি নির্বাচন করেছেন। মোদীর কথায়, “সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু, তা সে যেখানেই হোক না কেন, ঘোর নিন্দাযোগ্য। পশ্চিম এশিয়ায় পণবন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার খবরকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি, বাকিদেরও শীঘ্রই ছাড়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE