Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta High Court

হাই কোর্টে কামদুনির রায়ে চিন্তিত মুক্তিরচকের দুই ধর্ষিতা

গত শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট ফাঁসির আসামীদের মধ্যে এক জনকে বেকসুর খালাস করে দেয়। অন্য দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।

An image of Calcutta High Court

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

নুরুল আবসার
আমতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২১
Share: Save:

উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুনের দায়ে তিন জনকে ফাঁসি, তিন জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। গত শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট ফাঁসির আসামীদের মধ্যে এক জনকে বেকসুর খালাস করে দেয়। অন্য দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। নিম্ন আদালতে আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়া তিন জনের সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৭ বছর করে। ইতিমধ্যে ১০ বছর জেল খেটে ফেলায় তারা মুক্তি পেয়ে যায়।

এই মামলায় নিম্ন আদালতের রায় হাই কোর্টে ‘লঘু সাজা’য় পরিণত হওয়ায় আতঙ্কে ভুগছেন হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামের দুই নির্যাতিতা বধূ। গত ২৯ এপ্রিল আমতা আদালতে এই মামলায় দোষী আট যুবকের প্রত্যেককে কুড়ি বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্তেরা জেলে আছে। রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে আবেদন করেছে। শুনানি শুরু হয়নি। এক নির্যাতিতা বলেন, ‘‘কামদুনির মামলায় হাই কোর্টে যে ভাবে সাজা কমে গেল, আমরা আতঙ্কে পড়ে গিয়েছি। আমাদের মামলায় নিম্ন আদালত দোষীদের যে সাজা দিয়েছে, আমরা খুশি। কিন্তু কামদুনির মতো যদি হাই কোর্টে সাজা লঘু হয়ে যায়, আমরা তো গ্রামে থাকতে পারব না!’’

মুক্তিরচকের ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই রাতে কয়েক জন যুবক বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে দুই বধূকে গণধর্ষণ করে। দশ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আমতা আদালত আট জনকে সাজা দেয়। দু’জনকে নির্দোষ ঘোষণা করে।

দুই নির্যাতিতা জানান, মামলার শুরুতে পদে পদে বাধা পেতে হয়েছে। সরকারি আইনজীবী পাওয়া যাচ্ছিল না। উপায় না দেখে তাঁরা নিজেরা আইনজীবী নিয়োগ করেন। শেষে সরকারি আইনজীবী পাওয়া গেলেও তিন বার বিচারক বদলি হয়ে যান। সাক্ষীদের কাউকে কাউকে পরোয়ানা জারি করে আদালতে হাজির করাতে হয়। এর মধ্যেই ধৃতেরা জামিন পেয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক নির্যাতিতা বলেন, ‘‘এই সব চাপ সহ্য করেই আমরা নিম্ন আদালতে লড়েছি। কিন্তু হাই কোর্টে মামলার তদ্বির করব কী ভাবে?’’

নিম্ন আদালতে দুই নির্যাতিতার আইনজীবী রেজাউল করিমের বক্তব্য বলেন, ‘‘চার্জশিটে এই মামলা যে ভাবে আইনের ভিত্তিতে বাঁধা হয়েছে, তাতে দোষীদের পক্ষে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। তবে হাই কোর্টে মামলার তদ্বিরের উপরে সব নির্ভর করছে।’’

এক নির্যাতিতার স্বামী অবশ্য বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতে মামলা চলার সময়ে শত বাধার মুখেও হার স্বীকার করিনি, এখনও হাল ছাড়ব না।’’ তাঁর সংযোজন, কামদুনি মামলায় হাই কোর্টের রায় তাঁদের বরং সতর্ক করেছে। তাঁরা যোগাযোগ করেছেন হাই কোর্টের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সব্যসাচী বলেন, ‘‘সব মামলা এক নয়। মুক্তিরচকের মামলার সঙ্গে বরাবর জড়িত ছিলাম। নির্যাতিতাদের পরিবারকে আইনি পরামর্শ দিয়েছি। হাই কোর্টে ওঁদের হয়ে দাঁড়াব। মামলার তদ্বির এবং সওয়ালের ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Kamduni Case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE