Advertisement
২৮ এপ্রিল ২০২৪
FirhadHakim

নজরে বর্ষাতি-দুর্নীতি, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথে পুর কর্তৃপক্ষ

পুর শিক্ষা বিভাগে শৌচাগার দুর্নীতি-কাণ্ডের জেরে ইতিমধ্যেই ওই বিভাগের তদানীন্তন চার আধিকারিক ও কর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুরসভা।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৮
Share: Save:

স্কুলপড়ুয়াদের জন্য কেনা বর্ষাতি-কেলেঙ্কারির ঘটনায় এ বার দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুর কমিশনারকে নির্দেশ দিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। যদিও প্রশ্ন উঠছে, ফাইলের উপরে মেয়র ‘নো’ লিখে দেওয়ার পরেও এত বড় দুর্নীতির খবর তাঁর কাছে এত দিন ছিল না কেন? পুরসভার উপরে মেয়রের নিয়ন্ত্রণ তা হলে কতটা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

পুরসভা সূত্রের খবর, গত সোমবার মেয়র পুর কমিশনারকে নির্দেশ দেন, বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এর পরেই পুর কমিশনার শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশ দেন, বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে যা যা অনিয়ম হয়েছিল, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখে দোষীদের চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করতে হবে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘বর্ষাতি কেনার সময়ে যে সব আধিকারিক কর্মরত ছিলেন, তাঁদের সকলকেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’’ বৃহস্পতিবার ফিরহাদ বলেন, ‘‘দুর্নীতির সঙ্গে যিনি বা যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পুর শিক্ষা বিভাগে শৌচাগার দুর্নীতি-কাণ্ডের জেরে ইতিমধ্যেই ওই বিভাগের তদানীন্তন চার আধিকারিক ও কর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুরসভা। বছর ছয়েক আগে একই সময়ে শৌচাগার ও বর্ষাতি— দু’টি ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয়েছিল। তবে স্কুলের শৌচাগারের থেকে বর্ষাতি কেলেঙ্কারির ঘটনার গভীরতা বেশি বলে দাবি পুরসভার। তাই পুর কমিশনার গত মাসের শেষে শিক্ষা দফতরের থেকে এ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হওয়ায় এ বার বর্ষাতি কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিস্তারিত ফাইল চেয়ে পাঠান তিনি। পুরসভা সূত্রের খবর, বর্ষাতি কেনার বিষয়ে ফাইলের গুরুত্বপূর্ণ নথি গত বুধবার পুর শিক্ষা দফতরের তরফে কমিশনারের কাছে জমা পড়েছে।

পুর মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা বলেন, ‘‘মেয়রকে অন্ধকারে রেখে যে প্রক্রিয়ায় স্কুলপড়ুয়াদের জন্য মোটা টাকার বর্ষাতি কেনা হয়েছিল, তা অন্যায়। মেয়র পুরো ঘটনাটি জানতে পেরেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় যে বা যাঁরা দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও তাঁকে ‘অন্ধকারে’ রেখে এত বড় দুর্নীতির আভাস কেন আরও আগে পাননি ফিরহাদ, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে পড়ুয়াদের বর্ষাতি কেনার জন্য শিক্ষা দফতর যে দরপত্রের প্রক্রিয়া করে, তাতে একাধিক অসঙ্গতি থাকায় পুর অর্থ দফতর আপত্তি করেছিল। পরে বর্ষাতি কেনার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়ায় ‘ছাড়’ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মেয়রের কাছে ফাইল যায়। কিন্তু মেয়র ওই ফাইলের উপরে ‘নো’ লিখে জানান, এই ভাবে দরপত্র প্রক্রিয়া করা যাবে না। অভিযোগ, তার পরেও পুর শিক্ষা দফতরের তরফে ৭৩ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার মূল্যের ২২,০৪০টি বর্ষাতি কেনা হয়! যা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ বলে আগেই পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিটে ধরা পড়েছে।

পুরসভার রেসিডেন্ট অডিট অফিসার রিপোর্টে জানান, একটি বিশেষ সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কোনও দরপত্র ছাড়াই মোটা টাকা খরচ করে বর্ষাতি কেনা হয়েছিল। পুরসভার অডিট রিপোর্টে বর্ষাতি কেনায় অসঙ্গতি ধরা পড়ার পরেই মেয়র পুর ভিজিল্যান্স দফতরকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, রিপোর্টের খসড়া ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ ‘বেআইনি’ ভাবে মেয়রকে অন্ধকারে রেখে পড়ুয়াদের জন্য বর্ষাতি কেনা হয়। বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে কোনও নিয়মকানুনও মানা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

FirhadHakim KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE