Advertisement
০৩ মে ২০২৪
West Bengal Health Department

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কি মনোনীত, জল্পনা স্বাস্থ্য শিবিরে

স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, প্রার্থীর প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা, গবেষণাপত্র, শিক্ষক-চিকিৎসক থাকার মেয়াদ-সহ আরও কয়েকটি বিষয়কে ডিএমই পদের যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা হয়।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৯
Share: Save:

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন। এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তার মধ্যেই নতুন জল্পনায় বিতর্ক দানা বাঁধছে স্বাস্থ্য শিবিরে। সেটি হল, ইন্টারভিউ নিয়ে কোনও সিনিয়র শিক্ষক-চিকিৎসক বা অধ্যক্ষকে আর রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা করা হবে না। তার বদলে নিজেদের মনোনীত চিকিৎসককে ওই পদে বসাবে রাজ্য।

প্রায় তিন মাস ধরে স্থায়ী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নিয়োগ না হওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। নতুন জল্পনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুরোটাই বিশেষ এক গোষ্ঠীর হাত ধরে চলাকে আরও নিশ্চিত করছে বলে মনে করছেন সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ।

যদিও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই) মনোনীত করা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও আধিকারিকই মন্তব্যে রাজি হননি। এ দিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের অবসরের পরে কে ওই পদে বসবেন, তার জন্য মাসকয়েক আগে অধ্যক্ষ ও প্রফেসর-চিকিৎসক মিলিয়ে ১১ জন ইন্টারভিউ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও কোনও নামের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি স্বাস্থ্য প্রশাসন। বদলে কাজ চালাচ্ছেন কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা।

স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, প্রার্থীর প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা, গবেষণাপত্র, শিক্ষক-চিকিৎসক থাকার মেয়াদ-সহ আরও কয়েকটি বিষয়কে ডিএমই পদের যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা হয়। সেই মতো ওই পদের ইন্টারভিউয়ে যিনি সর্বোচ্চ নম্বর পান, তাঁকেই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা পদে নির্বাচিত করা হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য শিবিরের একটি অংশের কথায়, ‘‘ইন্টারভিউয়ের পরে এত দিন কেটে গেলেও কাকে ওই পদে বসানো হবে, তা-ই ঠিক হয়নি। গোপনে অন্য কোনও পরিকল্পনা হচ্ছে বলেই সন্দেহ।’’ আর সেই পরিকল্পনার নেপথ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন ধরে ‘নিয়ন্ত্রণ করে চলা’ বিশেষ গোষ্ঠীর (উত্তরবঙ্গ লবি) ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ স্বাস্থ্য শিবিরের। সিনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থায় কি কোনও যোগ্য ব্যক্তি নেই? যাঁরা ইন্টারভিউ দিলেন, তাঁরা কি সবাই অযোগ্য? যদি তা না হয়ে থাকে, তা হলে স্থায়ী নিয়োগে এত গড়িমসি কেন? পছন্দের লোককে বসাতেই কী শেষ পর্যন্ত নিয়ম বদল হবে?

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘রাজ্যে স্থায়ী স্বাস্থ্য-অধিকর্তা নেই সাত মাস, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই পাঁচ মাস এবং স্থায়ী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নেই তিন মাস। শুধু তা-ই নয়, ডিএমই নিয়োগ নিয়ে বিগত কয়েক মাস কার্যত নাটক চলছে। এখন কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ডিএমই মনোনীত হবেন। তা হলে ইন্টারভিউ নেওয়া হল কেন? সেই প্যানেলের কী হল? সেগুলিও তো জানাতে হবে!’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসলে শাসকদলের লবিবাজি ও স্বাস্থ্য দফতরকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণের অনৈতিক প্রচেষ্টা রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষাকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’’

যদিও চিরাচরিত ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নির্বাচিত করার পদ্ধতির বদল করে তা মনোনীত করতে হলে, প্রথমে সেই প্রস্তাব রাজ্য মন্ত্রিসভায় পেশ করতে হবে। এবং মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সেটি কার্যকর করতে হবে। এমনটাই জানাচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। তবে মনোনীত করা হলে তাতে স্বজনপোষণ বৃদ্ধি পাবে বলেও তাঁর মত। ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘জল্পনা সত্যি হলে দলতন্ত্র তৈরি হবে। যে রাজনৈতিক দল রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে, তারা নিজেদের ‘ইয়েস-ম্যান’-কে ওই পদে বসাবে। তাতে আখেরে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষার ক্ষতি হবে।’’

বিজেপির পক্ষে চিকিৎসক মধুছন্দা কর বলেন, ‘‘ডিএমই নিয়োগে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নেই। কিন্তু এমন জল্পনা বাস্তবায়িত হলে ইন্টারভিউয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা সেটি নেওয়ার যৌক্তিকতা কী ছিল, সেটাই প্রশ্ন উঠছে।’’ স্বাস্থ্য শিবিরের জল্পনাকে স্বাস্থ্যকর্তারা মান্যতা দিতে না চাইলেও, সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘যা রটে, তা কিছুটা হলেও তো বটে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE