ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে প্রথমবার কলকাতায় এসেছিলাম। তখন সন্ধে হলেই রাস্তার ধারে গ্যাস লাইট জ্বলত। সকালে ঘুম ভাঙলেই দেখতাম গঙ্গার জলে রাস্তা ধোয়া হচ্ছে। সেই সময় ৪ চাকার দাপট অনেক কম ছিল। দূষণ ছিল অনেক কম। কবির বর্ণনায় যেমন আকাশ আমরা কল্পনা করি, তখনকার যুগে সকালে চোখ খুললে সেই নীল আকাশই আমরা দেখতে পেতাম। এখন যেন বড্ড দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে জীবনযাপন করছি। যদিও কয়েক মাস আগে দেশ জুড়ে লকডাউনের জন্য বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক কমেছে। কিন্তু সেই দূষণ কমে যাওয়ার মাত্রা এতই কম যে আমার কাছে এই শহর মাঝেমধ্যে অসহ্য মনে হয়। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। স্বজন হারানোর ভয় বলতে পারেন।
তবে ছোটবেলা কিংবা যৌবনের কলকাতা কিন্তু এমন ছিল না। দুর্গাপুজোর সময় বন্ধুদের সঙ্গে নিউ আলিপুর থেকে হেঁটে কলেজ স্ট্রিট গিয়ে প্যারাডাইসে হরেক শরবত খেয়েছি। পুঁটিরামের ছোলার ডাল-কচুরি, কিংবা দক্ষিণ কলকাতায় রাধুবাবুর দোকানের চপ-কাটলেট, শ্রী হরির আলুর দম-রাধাবল্লভির স্বাদ যেন এখনও জিভে লেগে আছে। তবে কালের নিয়মে এগুলো ধীরে ধীরে বিরল প্রজাতির হয়ে যাচ্ছে। এখনও নিশ্চয়ই সেখানে ভিড় হয়। যদিও আগের মতো আপ্যায়ন, আবেগ আছে বলে মনে হয় না। এমনও সময় গিয়েছে যখন রায়দিঘি থেকে নিয়ে আসা ১ কিলো কাতলা মাছ মাত্র ৬ টাকায় কিনেছি। খাসির মাংসের দাম ছিল সওয়া ৩ পয়সা কিলো।
আমাদের সময় সমর্থকরাই ছিলেন শেষ কথা। ভাল খেললে যেমন ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত কাঁধে তুলে নাচানাচি চলত, তেমনই মাঠে খারাপ ফল করলেই ড্রেসিংরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতাম। খেলোয়াড় জীবন থেকে কোচিং কেরিয়ারেও অনেক বার এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছি। তবে এখন তো কর্পোরেট যুগ। তাই কেউ আর মাঠে এসে সময় নষ্ট করেন না। বরং নেটমাধ্যমের সাহায্যে আমাদের আক্রমণ করেন।
তবে এখন আর সেই দিন ভেবে লাভ নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এটাই বাস্তব। আমার কাছে আগের কলকাতা বেশি প্রিয় হলেও, এই দূষিত কলকাতার মধ্যেই জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতে হবে।
Advertisement