Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

১৯ এপ্রিল ২০২৪ ই-পেপার

সপ্তাহশেষে ঘুরে আসুন ইতিহাসের সাক্ষী গঙ্গার এই দুই ঘাটে

এগুলি নিছক ঘাট নয়, শহর কলকাতার ইতিহাস জড়িয়ে আছে এখানে।

বিকাশ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৪২
প্রতীকী চিত্র


প্রতীকী চিত্র

হঠাৎ কোনও উইকএন্ডে সকালবেলায় উঠেই যদি একটু আউটিংয়ের ইচ্ছে হয়, তবে গন্তব্য হতেই পারে গঙ্গার ঘাট। কলকাতা জোড়া নানা ঘাট। এগুলি নিছক ঘাট নয়, শহর কলকাতার ইতিহাস জড়িয়ে আছে এখানে। তেমনই দু’টি ঘাট জগন্নাথ ঘাট ও নিমতলা ঘাট। ঐতিহ্যমণ্ডিত এই ঘাটগুলো যেন ইতিহাসের পটচিত্র।

চারিদিকে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি। সারা ঘাট জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশো মানুষ। তাঁদের চোখ গঙ্গার জলে, যেখানে এক মধ্য চল্লিশের যুবক সদলবল স্নান করতে নেমেছেন। তাঁরা ডুব দিলেন। মধ্যমণি যুবকের বড় বড় চুল ছড়িয়ে রয়েছে জলের উপর। এক সময় তাঁরা উঠে দাঁড়ালেন। আরও জোরে সম্মিলিত শাঁখ বেজে উঠল। যুবকটিগেয়েউঠলেন, “বাংলার মাটি, বাংলার জল/বাংলার বায়ু, বাংলার ফল/ পুণ্য হউক, পুন্য হউক..”। সকলে তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন।
১৯০৫। যুবকের নাম রবীন্দ্রনাথ। স্থান জগন্নাথ ঘাট। রবিঠাকুরের সঙ্গীরা হলেন অবিনঠাকুর, দীনুঠাকুর প্রমুখ। এখান থেকেই রবীন্দ্রনাথ লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রাখিবন্ধন উৎসব শুরু করেছিলেন। রাস্তার দু’পাশে, বাড়ির ছাদে, গাড়িবারান্দায় লোকে লোকারণ্য । মহিলারা খই আর ফুল ছড়াচ্ছিলেন। স্নান করে উঠে, একে অপরকে রাখি পরিয়ে তাঁরা পথঘাটের লোকজনদের তো বটেই, রবিঠাকুর কাছের আস্তাবলের মুসলমান সহিসদের, নাখোদা মসজিদের মৌলবিদেরও রাখি পরিয়েছিলেন। এই জগন্নাথ ঘাট তখন থেকেই যেন পুণ্যস্থান হয়ে আছে। আদতে এটি শোভারাম বসাকদের ঘাট। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করে প্রচুর মুনাফা করে এই ঘাট প্রতিষ্ঠা করেন শোভারাম। তার পর তাঁদের গৃহদেবতা জগন্নাথদেবের নামে ঘাটের নামকরণ করেন। কেউ কেউ বলেন, জগন্নাথ ঘাট একটু এগিয়ে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে ঘাটে এসেছিলেন সেটিই জগন্নাথ ঘাট, যেখান থেকে জোড়াসাঁকো ও মসজিদ, দু’টিই কাছে।
এটি বহু প্রাচীন ঘাট। ১৭৮৪ সালের সরকারি ম্যাপে এর উল্লেখ আছে। তবে নামকরণের ব্যাপারে বিতর্কও আছে। এটি পাথরের তৈরি ঘাট। দূর থেকে বড় বড় নৌকায় করে পাথর এনে এই ঘাটে ফেলা হয়েছিল। তার থেকে কিছু পাথর এখানে লাগিয়ে বাকি পাথর অন্য কাজে লাগানো হয়েছিল। কথিত যে, বাকি পাথরগুলো রেলওয়ে তৈরির কাজে লাগানো হয়। রেল কোম্পানির প্রতিষ্ঠা ১৮৪৪ সালে। আমাদের এখানে প্রথম ট্রেন চলেছিল ১৫ অগস্ট, ১৮৫৪। আর এই ঘাটের কথা, আগেই বলা আছে, ১৭৮৪ সালের ম্যাপে আছে। পাথর রেলপথ তৈরিতে লাগতেই পারে, ৬০-৭০ বছর বিনা নামকরণে এই ঘাট পড়ে ছিল, সেটা ভাবা যাচ্ছে না।

এ বার যে ঘাটে রবীন্দ্রনাথ চিরদিনের জন্যে রয়ে গিয়েছেন, সেই নিমতলা ঘাটের কথা বলি। দীনবন্ধু মিত্রের কলমে ‘নিমতলা সমাধি শ্মশান’ সব দিন সব রাত জেগে থাকে। ১৯৪১-এর ৮অগস্ট রবিঠাকুরের শেষযাত্রা এখানে এসে থেমেছিল। ঘাটে সেদিন যখন রবীন্দ্রনাথের শেষকৃত্য চলছিল, তখন উল্টোদিক থেকে দেখার জন্যে সার সার নৌকায় বহু লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবার ঘাটের সীমানা ধরে রেলওয়ে ভ্যান, মোটরগাড়ি, পিছনের বড় বড় গাছ, দূরের বাড়ির ছাদ— সব লোকে লোকারণ্য ছিল।

Advertisement

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর অ্যালেন গিনসবার্গের এই ঘাট খুবই প্রিয় ছিল। এখানে তাঁরা সাধু, ভিখারি ও অন্যান্য আরও নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে অনেক রাত কাটিয়েছেন। শুধু রবিঠাকুর নন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত এই ঘাট এখন ‘ভূতনাথ মন্দিরের’জন্যে বিখ্যাত। আর যদি অতি সুস্বাদু লিট্টি চাখতে চান আলুর চোখা সহযোগে, তা হলে ভূতনাথ লিট্টি শপ হোক আপনার গন্তব্য।

Advertisement