বহড়ানে রাজার সাজে অম্বিকাপ্রসাদ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজা চলেছেন সাইকেলে। পরনে সাদা ধুতি। ব্যাগে ফুল-বেলপাতা, পুজোর সরঞ্জাম। রাজপুত্র মাটির মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত। রাজার পুত্রবধূ পুকুরে বাসন মাজছেন। অতল সমস্যায় ‘রাজ পরিবার’!
রাজার এই হাল কেন? বাড়ির কুলদেবতার পুজো শেষ করে এমন প্রশ্ন শুনেই হাসতে থাকেন ‘রাজা’। বলেন, “রাজা সাজাই হল। হাল ফিরল না।” দারিদ্রই যেন রাজা
হওয়ার চাবিকাঠি।
সারা বছর পুজোপাঠ করে পেট চালান এই ‘রাজা’ অম্বিকাপ্রসাদ চট্টরাজ। ৮৫ বছর বয়সেও তার বিরাম নেই। প্রতিদিন চার-পাঁচটা বাড়িতে পুজো করেন। আর প্রতি ১২ বছর অন্তর (গত দু’বার ধরে ৯ বছর অন্তর হচ্ছে) দোলের দিন, জয়দুর্গা পুজো ঘিরে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বহড়ান গ্রাম ‘রাজতন্ত্র’ ফিরে আসে। সেখানেই গত ৫ বার নিয়ম করে ‘রাজা’ সেজেছেন এই বৃদ্ধ।
প্রথমে ‘রাজা’ পথ-পরিক্রমায় বেরোতেন পায়ে হেঁটে। পরে যাত্রাদলের ভাড়া করা ঝলমলে পোশাক, মুকুট, পেল্লায় গোঁফ লাগিয়ে ভ্যান-মোটরভ্যানের উপরে সজ্জিত সিংহাসনে ‘রাজা’ বসতেন। এ বার আরও একটু উন্নতি হয়েছে। রাজার স্থান হয়েছিল সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে।
দেশ জুড়ে যে সময়ে গণতন্ত্রের উৎসব শুরু হয়েছে, সেই সময়ে বহড়ানে চলেছে এমন ‘রাজতন্ত্র’। সাইকেল টানার ফাঁকেই ‘রাজা’ বলেন, “আমি এক দিনের রাজা হয়ে কত কিছু আশ্বাস দিয়ে থাকি। কত জনকে সাজা দিই। কত ধরনের ভাল ভাল কথা বলি। রাজা সাজা শেষ হয়ে গেলে সে সব কী আর মনে রাখি? না কি আমার কথা কেউ মনে রাখে? তেমনই এই ভোটবাবুরা। ভোট ফুরোলে সব কথাই উবে যায়। খাঁচায় থাকা পাখি ফাঁক পেলেই উড়ে যায়। তেমনই তাঁরাও ভোটের পরে ফুড়ুত!”
কোনও এক সময়ে সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছিলেন অম্বিকা। টিনের চালের ঘরে বাস। ছেলে অরিন্দমও সম্বৎসর পুজো-আচ্চা করেন। আবার দেবদেবীর মূর্তিও তৈরি করেন। তিনি বলেন, “আমরা গরিব ব্রাহ্মণ। মাসে তিন হাজার টাকা জোগাড় করতেও হাঁফিয়ে উঠি। সে ভাবেই সংসার চালাতে হচ্ছে। বাবা রাজা সাজলেও আমাদের সংসার কিন্তু সাজে না।”
গণতন্ত্রের দেশে ‘রাজা’কে যাঁরা ভাল রাখতে পারতেন, তাঁরা কী বলছেন? তৃণমূলের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সবাই ভাল আছেন। আমাদের সরকারের মাধ্যমে সবাই উপকৃত। মাথায় ছাদ, খাবারের সংস্থানের অভাব কারও নেই।” বিজেপি নেতা গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “নরেন্দ্র মোদী সবাইকে ভাল রাখতে চান। কিন্তু তৃণমূল সরকারের সেই ইচ্ছেটাই তো নেই। সে জন্য অম্বিকাবাবুদের হাল ফেরে না।” দেওয়ালের গায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজার রথ ‘সাইকেল’। তার গায়ে হেলান দিয়ে রাজা বলেন, “ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। আমার চেয়ে ভাল বোঝে আর ক’জন! আমি চাই, ভোটবাবুরাও সেটাও বুঝুন। তবেই আমার মতো প্রজারা দুধে-ভাতে থাকতে পারবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy