প্রতীকী চিত্র।
বাঙালি মানেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। সদ্য শেষ হয়েছে আলো ঝলমলে দেবী কালীর আরাধনা, কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে আরেক শক্তি আরাধনা - জগদ্ধাত্রী পুজো। এই উৎসবগুলির অন্যতম প্রধান উপকরণ হল ফুল। দেবীর চরণ থেকে শুরু করে মন্দির সজ্জা, নানা রীতির জন্য ফুল লাগে রাশি রাশি। কিন্তু পুজো মিটে গেলেই এই ফুলগুলির কী গতি হয়? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি নদী, পুকুর বা গাছের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। আর এখানেই ঘটে বিপত্তি। এই বিপুল পরিমাণ ফুলের বর্জ্য জল ও পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। তাই উৎসবের আনন্দ যখন শেষ হয়, তখন সেই ফেলে দেওয়া ফুলের ভার যেন পরিবেশের উপর না চাপে, সেই ভাবনাই এখন জরুরি।
এই সমস্যার একটা চমৎকার, সহজ এবং সুরভিত সমাধান রয়েছে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার এই পথে আপনিও হাঁটতে পারেন। পুজোর ব্যবহৃত ফুলগুলিকে ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণ করে সহজেই সেগুলিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সম্ভব। এর জন্য চাই শুধু সামান্য উদ্যোগ আর ঘরের কিছু উপকরণ। আর এতেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার নিজস্ব সুগন্ধি ধূপকাঠি। শুনে কাজটি খুব কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং মজার। ঘরের সুগন্ধ, পরিবেশের সুরক্ষা আর সৃষ্টিশীলতার মিশেলে এই কাজটি হয়ে উঠতে পারে উৎসব-পরবর্তী এক নতুন আনন্দের উৎস।
তা হলে জেনে নেওয়া যাক, কী ভাবে পুজোয় অর্পিত এই ফুল, পাতা ইত্যাদি দিয়ে বাড়িতেই তৈরি করা যায় সুগন্ধি ধূপ। প্রথমে পুজোর ফুল ও পাতাগুলি ভাল করে সংগ্রহ করে নিতে হবে। এ বার এই ফুলগুলিকে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। ধরা যাক দুই থেকে তিন মুঠো ফুল শুকিয়ে যখন এক মুঠো পরিমাণে দাঁড়াবে, তখনই বোঝা যাবে তা প্রস্তুত। এই শুকনো ফুলগুলি সাবধানে মিক্সারে দিয়ে মিহি গুঁড়ো তৈরি করতে হবে। এই গুঁড়োর মধ্যে এ বার মেশাতে হবে এক কাপ ভাল মানের কর্পূর। মনে রাখবেন, কর্পূরও যেন আগে থেকে গুঁড়ো করা থাকে।
এর পরের ধাপে যোগ করতে হবে কাঠের গুঁড়ো। কাঠ দিয়ে জিনিসপত্র বানানোর সময় যে গুঁড়ো বা ধুলো পাওয়া যায়, সেটিই এখানে কাজে লাগবে। কাঠের গুঁড়োর পরিমাণটা ফুলের গুঁড়োর সমান হতে হবে – অর্থাৎ এক কাপ ফুলের গুঁড়োর সঙ্গে মেশাতে হবে অন্তত এক কাপ কাঠের গুঁড়ো। এ বার একটি বড় পাত্রে এই মিশ্রণটির সঙ্গে লোবান, গুগুল এবং চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে। সুগন্ধের মাত্রা বাড়াতে এ বার দিতে হবে এক চামচ এসেনশিয়াল অয়েল। সব শেষে এতে যোগ করতে হবে আধা কাপ ঘি এবং মধু। প্রয়োজন অনুসারে এই ঘি ও মধুর পরিমাণ কম বেশি করা যেতে পারে, কারণ এটিই মিশ্রণকে একটা নরম আকার দেবে।
সব উপকরণ ভাল ভাবে মিশে গেলে, লুচি তৈরি করার জন্য ময়দা থেকে যেভাবে ছোট ছোট লেছি কাটা হয়, সেভাবে মিশ্রণটি থেকে লেছি কেটে নিতে হবে। এটি যেহেতু খুব নরম হবে, তাই সহজে এটিকে ধূপের আকার দেওয়া যাবে। ধূপের আকার দেওয়া হয়ে গেলে সেগুলিকে ভাল করে শুকিয়ে নিলেই তৈরি আপনার পরিবেশবান্ধব সুগন্ধি ধূপ। উৎসবের স্মৃতি বুকে নিয়ে এই ধূপ যখন সুবাস ছড়াবে, তখন তা শুধু মাত্র ঘরের গন্ধই ভাল করবে না, পরিবেশ দূষণ কমানোর নীরব বার্তাটিও পৌঁছে দেবে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।