উৎসবের দিন গুনছে বাঙালি। ঢাকে কাঠি পড়ার আর বেশি দেরি নেই। মণ্ডপে মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এমন আনন্দ অবসরে যদি হঠাৎ ছন্দপতন হয়, আসে বিপদ, তার চেয়ে উদ্বেগের কিছু হয় নাকি? উৎসবের মরসুমে আনন্দের জোয়ারে গা ভাসানোর আগে তাই শরীর নামের যন্ত্রটার খেয়াল রাখা জরুরি। একালের জীবনযাপনে হৃদরোগ একটা বড়সড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু বয়স্করা নন, তরুণদেরও আকছার কাবু করছে এই রোগ। পুজো মানেই প্রচুর ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া। তাই এই সময়ে নিজের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তার জন্য চিনে রাখা ভাল বিপদ সঙ্কেত।
বুকে ব্যথা: শুধু কি গ্যাস? শরীরে কিছু ছোটখাটো লক্ষণ দেখা যায়, যা অনেকেই এড়িয়ে যান। এই লক্ষণগুলোই কিন্তু হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন বুকে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি। এই অনুভূতিটা এক এক জনের কাছে এক এক রকম হতে পারে। অনেকে বলেন, বুকে যেন হাতুড়ির ঘা পড়ছে, আবার কারও অভিজ্ঞতা, বুকটা যেন চেপে ধরে আছে কেউ। এই ধরনের ব্যথা কয়েক মিনিটের জন্য থাকতে পারে এবং তা বিশ্রাম বা শারীরিক পরিশ্রমের সময়েও হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, যদি এক বা দুই সেকেন্ডের জন্য ব্যথা হয়, তা হলে সম্ভবত তা হৃদরোগ নয়।
হজমের সমস্যা এবং মাথা ঘোরা অনেক সময়ে বুক জ্বালা বা হজমের সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা যায়। মহিলারা বলেন, পেটে ব্যথা হচ্ছে। আবার মাথা ঘোরা বা হালকা মাথা ব্যথার মতো লক্ষণকেও অবহেলা করা ঠিক নয়। অনেক সময়ে এমন হতে পারে, আচমকা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন অথবা মাথা ঘুরছে। এর সঙ্গে যদি বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হয়, তা হলে সতর্ক হতেই হবে।
হাতের ব্যথা কি শুধু পেশির টান? হৃদরোগের একটি পরিচিত লক্ষণ হলো, বাঁ হাতের দিকে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা। এটি সাধারণত বুক থেকে শুরু হয়ে বাইরের দিকে ছড়িয়ে যায়। আবার এমন মানুষও আছেন, যাঁদের কেবল হাতেই ব্যথা হয়, কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় এটি হৃদরোগের লক্ষণ।
গলা বা চোয়ালের যন্ত্রণা গলায় বা চোয়ালে ব্যথাও হতে পারে, বিশেষত যদি তা বুকের মাঝখান থেকে ছড়াতে থাকে।
হঠাৎ ক্লান্তি: কারণ কি শুধু কাজের চাপ? আগে যা সহজেই করতেন, এখন তাতেই হাঁফিয়ে যাচ্ছেন– এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। বিশেষত, মহিলাদের মধ্যে এই ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা যায়।
নাক ডাকা এবং কাশি রাতে জোরে জোরে নাক ডাকা, দম আটকে আসা বা হঠাৎ কাশি যা সহজে থামছে না, এই ধরনের লক্ষণগুলিও অবহেলা করা উচিত নয়। এর সঙ্গে যদি সাদা বা গোলাপি রঙের কফ বেরোয়, তা হলে তা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।
পা ফোলা: জল জমার লক্ষণ? অনেক সময়ে পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে যায়। এর কারণ হল হৃৎপিণ্ড সঠিক ভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না। ফলে রক্ত শিরায় ফিরে যায় এবং ফোলা ভাব তৈরি হয়।
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন অনেক সময়ে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়। যদি কোনও কারণ ছাড়াই হৃৎপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হয় অথবা মাঝেমধ্যে এক-দু’টি স্পন্দন বাদ যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আনন্দের মাঝেও সচেতনতা পুজোয় আনন্দে মাতুন, কিন্তু সুস্থ থাকতে হলে শরীরের এই ছোট ছোট লক্ষণগুলির দিকে নজর রাখুন। তালিকার কোনও লক্ষণ বা কোনও রকম অস্বাভাবিকতা নজরে এলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ( এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)