প্রতীকী চিত্র।
ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার সবচেয়ে পুরনো শাখাগুলির মধ্যে অন্যতম সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। বসত বাড়ি থেকে শুরু করে পাহাড় ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণ— আধুনিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতী বিষয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। তাই, প্রায় কোনও যুগেই কমে না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা।
ভূমিকা ও দায়িত্ব—
বসত বাড়ি বা কোনও দফতর ভবন, রাস্তাঘাট, সেতু, এয়ারপোর্ট, বাঁধ নির্মাণের মতো যে কোনও কাজে একেবারে গোড়া থেকে যুক্ত থাকেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা। নকশা তৈরি, প্রকৌশলবিদ্যার প্রয়োগ এবং পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও থাকে তাঁদের উপরেই। দীর্ঘমেয়াদে এই সব কাঠামো কতটা টেকসই হবে, তা বিশ্লেষণ করতে হয় ইঞ্জিনিয়ারদেরই। সমীক্ষা রিপোর্ট, ম্যাপ এবং অন্য তথ্য ঘেঁটে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কোনও প্রকল্প তৈরি করতে হয়। এমনকি, নির্মাণ কাজে ব্যয় ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাবের দায়িত্বও থাকে তাঁদের উপরেই।
কোর্স—
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় আসতে হলে, এই বিষয়ে চার বছরের বিটেক বা বিই ডিগ্রির পর দু’বছরের এমটেক বা এমই ডিগ্রি অর্জন করা যেতে পারে। এ ছাড়া, এই বিষয়ে তিন বছরের ডিপ্লোমাও করা যায়।
বিটেক বা বিই ডিগ্রির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা—
কোনও স্বীকৃত বোর্ড থেকে বিজ্ঞান শাখায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অঙ্ক-র মতো বিষয় নিয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হতে হবে। তার পর জাতীয় বা রাজ্য স্তরে বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা, যেমন—জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জ়ামিনেশন মেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জ়ামিনেশন অ্যাডভান্সড, ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জ়ামিনেশন-এ উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মিলবে।
এমটেক বা এমই-র ডিগ্রির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা—
স্নাতকে উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা এমটেক বা এমই কোর্স করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রেও গেট (গ্র্যাজুয়েট অ্যাপ্টিটিউড টেস্ত ইন ইঞ্জিনিয়ারিং)-এর মতো প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
স্পেশ্যালাইজ়েশন—
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ুয়ারা একাধিক বিষয়ে স্পেশ্যালাইজ় করতে পারেন। সেগুলি হল—
১। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং:
এ ক্ষেত্রে বাড়ি, সেতু, রেললাইন নির্মাণের নকশা ও পরিকল্পনা করার খুঁটিনাটি শেখানো হয়।
২। এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং-
প্রযুক্তির সাহায্যে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে নির্মাণ কাজ করার নানা দিক পড়ানো হয়।
৩। ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-
পরিবহণ ব্যবস্থা যেমন- রাস্তাঘাট, সেতু, রেললাইন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি দেখাশোনা করা যায় কী ভাবে, তা পড়ানো হয়।
৪। ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং-
জলাশয় ও অন্য সম্পদকে অবিকৃত রেখে কী ভাবে খরা বা বন্যা প্রতিরোধ করা যায়, সে সমস্ত বিষয় মাথায় রেখে নির্মাণ কাজ করার বিষয় পড়ানো হয় এ ক্ষেত্রে।
৫। জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-
মাটি ও পাথরের গুণাগুণ খতিয়ে দেখে নির্মাণ কাজ কী ভাবে করা যায়, তা পড়ানো হয়। জানতে হয় ভূতত্ত্বের নানা দিক। এরই একটি উপশাখা সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং।
পরবর্তীকালে এই সমস্ত বিষয় নিয়েই পড়ুয়ারা গবেষণা করতে পারেন।
ডিপ্লোমার জন্য যোগ্যতা—
এ ছাড়াও পড়ুয়াদের জন্য ডিপ্লোমা পড়ানো হয় এই বিষয়ে। যারা দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ইংরেজি, বিজ্ঞান ও গণিত সহ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, তারাই কোর্সে ভর্তির সুযোগ পান।
দেশের কোন কোন প্রতিষ্ঠানে পড়া যায় এই বিষয়?
১। আইআইটি বম্বে
২। আইআইটি দিল্লি
৩। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
৪। আইআইইএসটি শিবপুর
৫। আইআইটি খড়গপুর
চাকরির সুবিধা—
এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে নানা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ থাকে। বিমানবন্দর, সুড়ঙ্গ, সেতু, দমকল পরিষেবা, খনি, বন্দর, রেল-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে চাকরি করার সুযোগ পান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা।
আইটি ক্ষেত্রেও চাকরির সুযোগ রয়েছে।
আবার, গবেষণা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগও মিলতে পারে।
এমনকি আইএএস, আইপিএস-এর মতো পেশাও বেছে নিতে পারেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা। এ ছাড়া, বর্তমানে, নিজেদের স্টার্ট আপ ব্যবসা খোলার দিকেও ঝোঁক বেড়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে।
বেতন কাঠামো—
চাকরিক্ষেত্রে বছরে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকা থেকে ১৩ লক্ষ টাকার বেশির রোজগার করতে পারেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা। তবে অবশ্যই এই আনুমানিক বেতনটি অভিজ্ঞতা, কোম্পানি, সরকারি না বেসরকারি ক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে।