Special Education School

বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুর বাবা-মা করিয়ে দিতে চান সব কাজ! কী ভাবে স্বনির্ভর হবে সন্তান?

কেন্দ্র সরকারের অধীনস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য এমপাওয়ারমেন্ট অফ পার্সনস উইদ ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটিস (এনআইইপিআইডি)-র মাধ্যমে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ফিরিয়ে আনতে পারেন সমাজের মূল স্রোতে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ১৪:১৫
Share:

নিজেরদের স্বনির্ভর করার পাঠ। ছবি: সংগৃহীত।

এক সময় তাদের পরিচয় ছিল, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের থেকে একটু বেশিই চাহিদা তাদের— একটু বেশি মনোযোগ, যত্ন, সহমর্মিতার চাহিদা ওদের থাকে। কিন্তু এটুকুই সব নয়। আসলে ওরা বিশেষ ভাবে সক্ষম। আর পাঁচটি সাধারণ কাজ ওরাও করতে পারে, নিজেদের মতো করে। বিশেষ ভাবে ওরাও সক্ষম।

Advertisement

সাধারণত সন্তানের আড়াই-তিন বছর বয়স হতে না হতেই বাবা-মা খোঁজ শুরু করেন স্কুলের। পড়াশোনার পাশাপাশি আর কোন কোন শিক্ষা দেওয়া যায় তাদের তা নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। ঠিক সেই সময় বা আর একটু পরে, বছর পাঁচেক বয়সের মধ্যে শিশুর চলন বা কথা বলার ধরনে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা গেলে বুঝে নিতে হবে সন্তান বিশেষ ভাবে সক্ষম।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তান বিশেষ ভাবে সক্ষম হলে অভিভাবকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তৈরি হয় একরাশ অনিশ্চয়তা। বেশির ভাগ পরিবার বুঝেই উঠতে পারে না, সন্তানকে কী ভাবে লালন পালন করতে হবে। অথচ, বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদেরও সমাজের মূল স্রোতে থেকে শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে।

Advertisement

২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষা আইন বলছে, বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে পড়াশোনা করার অধিকার রয়েছে। আইন থাকলেও সামাজিক ভীতি কাটেনি। অনেক সময়ই অভিভাবকেরা আতঙ্কে থাকেন, সাধারণ সঙ্গে স্কুলে গেলে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন সন্তানের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হবে! পাশাপাশি স্কুলে গিয়ে শিশু আদৌ কিছু শিখতে পারবে কি না, তা নিয়েও দ্বন্দ্বে ভোগেন তাঁরা।

সে ক্ষেত্রেই কেন্দ্র সরকার অধীনস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউড ফর দ্য এমপাওয়ারমেন্ট অফ পার্সনস উইথ ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটিস (এনআইইপিআইডি) সহায়ক হবে। বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের পরিবার এর সাহায্যেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারবে সন্তানকে। এনআইইপিআইডি কলকাতার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দশরথ চৌধুরী জানিয়েছেন, এই শহরে পাঁচটি স্তরে শিশুদের পড়ানো হয়— প্রাক্‌-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, প্রাক্‌-বৃত্তিমূলক এবং বৃত্তিমূলক।

শিশুর তিন বছর বয়স হলেই ভর্তি করানো যায় প্রাক্‌-প্রাথমিক স্তরে। দশরথ বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের সমস্ত কাজ তাদের অভিভাবকেরা করে দিতে চান। তারা কী খাবে, কী পড়বে— সব সিদ্ধান্ত বাবা মা নিয়ে থাকেন। আমরা কিন্তু শিশুদের স্বনির্ভর হতে শেখাই। প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন ‘স্পেশাল এডুকেটর’রা।”

বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের বাবা-মায়ের সব থেকে ভয়ের কারণ কিন্তু এই স্বনির্ভরতাই। কালের নিয়মে বাবা-মায়ের মৃত্যু হলে সন্তানের দেখাশোনা করবে কে, মূলত এই চিন্তাই তাঁদের কুড়ে কু়ড়ে খায়। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোন পদক্ষেপ করতে হবে, তা-ও অনেক সময় বুঝতে পারেন না তাঁরা। তাই, বিশেষ প্রশিক্ষণে একেবারে ছোটবেলা থেকে শিশুদের শিখিয়ে দেওয়া হয়, ফোন কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, একা একাই কোথাও যাতায়াত কী ভাবে করতে হবে ইত্যাদি। বৌদ্ধিক (ইন্টেলেকচুয়াল), অস্থি সংক্রান্ত বা দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা-সহ মোট ২১টি প্রতিবন্ধকতার বিভাগ রয়েছে। কোনও শিশুর ইউডিআইডি কার্ড (বিশেষ ভাবে সক্ষম হওয়ার নথি) থাকলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। না হলে তিন মাসে জন্য ১০০ টাকা জমা দিতে হয় প্রতি পড়ুয়াকে।

প্রতিষ্ঠানের লেকচারার ইন স্পেশাল এডুকেশন অলকনন্দা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “এখানে আর পাঁচটা স্কুলের মতো রুটিন মেনে পড়ানো হয় না। এখানে আমরা বাচ্চাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। কোন শিশু কোন কাজে কতটা স্বাবলম্বী তা আগে ভাল করে দেখে নেওয়া হয়। তার পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।”

অলকনন্দা জানান, দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন, হাত ধোয়া, জামাকাপড় বদলানো, চুল আঁচড়ানো থেকে শুরু করে দোকানে গিয়ে কোনও জিনিস কিনে আনা, একা যাতায়াত, গণপরিবহণের সঙ্গে পরিচিত করানো— সবই এই প্রশিক্ষণের অঙ্গ। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আইকিউ পরীক্ষা করে পড়ুয়াদের মেধাও যাচাই করা হয়। যাতে বোঝা যায়, তারা কতটা শিখে উঠতে পারছে।

দশম বা দ্বাদশ উত্তীর্ণ হওয়া নয়, এই প্রতিষ্ঠানে শেখানো হয়, কী ভাবে নিজেদের স্বনির্ভর করে পেশাজগতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। এনআইইপিআইডি স্পেশাল এডুকেটর পাপিয়া বন্দোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়ার বয়স ১৮ বছর হলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে কম্পিউটার টাইপিং, প্রিন্টিং প্রেস, ডায়েরি বানানো, খাবার বানানো, চা বানানোর মতো কাজ শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সুযোগও দেওয়া হয়।”

কলকাতার এনআইইপিআইডি-এ সরাসরি যোগাযোগ করে ভর্তি হতে পারেন যে কোনও পড়ুয়া। প্রতি আট জন পড়ুয়া ভিত্তিতে একজন করে স্পেশাল এডুকেটর থাকেন। এ ছাড়াও ওপিডি (ইন্ডিভিজুয়্যাল প্ল্যানিং) রয়েছে। সেখানে এক জন শিশুর জন্য একজন স্পেশাল এডুকেটর থাকেন। তিনি ওই শিশুর মেধার ভিত্তিতে এক বছরের একটি পরিকল্পনা চার্ট তৈরি করেন। তারপর তার ভিত্তিতে বাড়িতেও নানা কাজ দেওয়া হয় পড়ুয়াদের।

এনআইইপিআইডি-র সমস্ত প্রশিক্ষণই স্পেশাল এডুকেটরের তত্ত্বাবধানে চলে। তাই এই প্রতিষ্ঠানে স্পেশাল এডুকেশন নিয়েও নানা কোর্স করানো হয়। ডিভিআর (ডিপ্লোমা ইন ভোকেশন্যাল রিহ্যাবিলিটেশন), ডিএড, বিএড, এমএড পড়ার সুযোগ রয়েছে। রাজ্যে এই সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যেখান থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement