‘ভিঞ্চি দা’র লুকে ঋত্বিক চক্রবর্তী।
কেমন আছেন?
দারুণ। প্রচুর কাজকর্ম হচ্ছে।
এপ্রিলে তো বক্স অফিসে আপনারই রাজত্ব…
রাজত্ব কিনা জানি না। তবে এপ্রিলে তিনটে ছবি আসছে। আরও অনেকগুলোর শুটিং, ডাবিং হয়ে গিয়েছে। অতনু ঘোষের ‘বিনি সুতোয়’ করলাম। আমি আর জয়া আহসান। ‘বুড়ো সাধু’ রেডি। ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ও তাই। অনীক দত্তর ‘বরুণ বাবুর বন্ধু’ করলাম।
অনীক দত্তর ছবি, আবার কি…
(হা হা হা) এইটা সেই অর্থে পলিটিক্যাল ছবি নয়। তবে সোসাইটি তো অনীকদার ছবিতে নানান ভাবে আসে। আগের ছবিটার মতো অতটা বোধহয় কিছু হবে না। তবে আন্দাজ করা কঠিন…।
সৃজিতের ‘ভিঞ্চি দা’ এবং চূর্ণীর ‘তারিখ’ দুটোই আপনার ছবি। একই দিনে রিলিজ…
হ্যাঁ, এটা আমার আগে হয়নি। এই প্রথম একই দিনে দুটো ছবি রিলিজ করছে।
আরও পড়ুন, ‘ও জানতেই পারল না, আমার ওকে মনে আছে…’
সেটা কি ভাল?
অবশ্যই আগে পরে হওয়াটাই ছিল আদর্শ। কিন্তু এটার পিছনে সত্যি বলতে আমাদের হাত থাকে না। রিলিজ সংক্রান্ত প্ল্যান থাকে। যিনি বিজনেস করছেন মূলত তাঁর প্ল্যান। তবে সব ছবিরই নিজস্ব কিছু অডিয়েন্স থাকে। ‘ভিঞ্চি দা’ আর ‘তারিখ’-এরও নিজস্ব কিছু অডিয়েন্স রয়েছে। আবার নাও থাকতে পারে। একটা ছবির ঠিক যত জন দর্শক, তার একটা বড় অংশের কাছে রিচ করতে পারলেই আমার মনে হয় লাভ হবে। আমি আসলে এটার মধ্যে থেকে একটা পজিটিভ পয়েন্ট খোঁজার চেষ্টা করছি (হাসি)। দু’টো ছবি আলাদা কথা বলে। আলাদা মাত্রার। আলাদা স্বরের কথা বলে।
‘ভিঞ্চি দা’র দৃশ্যে রুদ্রনীলের সঙ্গে ঋত্বিক।
‘ভিঞ্চি দা’তে রুদ্রনীল ঘোষ এবং ‘তারিখ’-এ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়— দুই তুখোড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলেন। ওঁদের পারফরম্যান্স দেখে হিংসে হল কোথাও?
না। হিংসে হয়নি। আমি বরং এতে আনন্দের বিষয় টের পাই।
আনন্দ?
হ্যাঁ। কারণ যখন দেখি টালিগঞ্জে অভিনেতাদের গুরুত্ব বাড়ছে, তখন মনে হয় আমরা এটাই চেয়েছিলাম। অপুদা বা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলেও এটাই বলবে। ভাল লাগে যখন লোকে বলে, অভিনেতাদের দরকার। যদিও আমরা খুবই দুর্ভাগা। এখনও সবাই বলে, অমুক ছবিতে স্টারেদের নিয়েছি অভিনেতাদের নিইনি। এমন একটা দুর্ভাগা ইন্ডাস্ট্রি, সবাই ধরেই নেয় যে স্টারেরা অভিনয় পারে না। এখনও এমন ধারণা মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে। আর এখন সবাই বলে, কনটেন্ট কিং। তাই যদি হয়, তা হলে সেটা ডেলিভার করার জন্য অভিনেতা লাগবেই। ফলে আশেপাশে সবাই যখন ভাল পারফর্ম করতে থাকে, তখন কম্পিটিটিভ না হয়েও এমনিই পারফরম্যান্সটা ভাল হয়ে যায়। কোঅ্যাক্টর ভাল হলে, অভিনয়টা আরও একটু ভাল হবেই।
‘ভিঞ্চি দা’তে আপনি তো সিরিয়াল কিলার?
হ্যাঁ। সিরিয়াল কিলার। আদি বোস।
আরও পড়ুন, সাংবাদিকদের সম্পর্কে কী ধারণা পার্নোর?
প্রস্তুতি কেমন ছিল?
এই চরিত্রের সুবিধে হচ্ছে, এর কোনও মডেল আমার চেনা নেই। চেনা মানুষ বা পড়া ঘটনার মধ্যে পড়ে না। এমন ধরনের চরিত্র আগে করিনি। ফলে চরিত্রটা রিচ করার জন্য স্ক্রিপ্টের ওপর অনেকটা নির্ভর করতে হয়েছে। আর কল্পনারও অনেকটা স্পেস রয়েছে। যেহেতু কোনও মডেল নেই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আবার স্বাধীনতাও ছিল প্রচুর। খুব ইন্টারেস্টিং জার্নি।
সৃজিত নাকি খুব কড়া পরিচালক? অন্তত তেমন গল্প শোনা যায়। আপনার দুটো ছবির অভিজ্ঞতাও কি তাই?
সৃজিত খুব পার্টিকুলার। ওর চাওয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আছে। আমার দুটো ছবি হল ওর সঙ্গে। আমি তো তেমন কিছু দেখিনি। ওর একটা চাহিদা আছে। ন্যাচরালি পরিচালকের চাহিদা থাকবে। সেটা তো স্বাভাবিক। পেশাদার অভিনেতা হিসেবে পরিচালকের চাওয়াটা রিচ করাটাই আমার কাজ। আপনি যেটা বললেন, সৃজিতের এক্সট্রিম কড়া হওয়ার গল্প আমিও শুনেছি। কিন্তু দেখিনি কখনও (হাসি)।
আরও পড়ুন, ‘আমার দুর্গা’র পর কী করছেন সঙ্ঘমিত্রা?
‘তারিখ’ও রিলিজ করছে ১২ এপ্রিল…
হ্যাঁ। ‘তারিখ’ তিন বন্ধুর গল্প। রাইমা (সেন), অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) আর আমি। এদের মধ্যে বন্ধুত্ব রয়েছে। নির্ভরশীলতা, অভিমান আছে। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব আছে। আসলে তারিখ প্রত্যেকটা দিনের কথা বলে। দিনগুলোই আমাদের কাছে সব। একটা করে দিন চলে যায়, আর আমরা এগিয়ে যাই ডেস্টিনেশনের দিকে। ফাইনাল ডেস্টিনেশন আসলে মৃত্যু। তারিখে একটা কথা আছে, আমার সম্ভাব্য মৃত্যুদিন আমি প্রত্যেক বছর পেরিয়ে যাই। হয়তো সে দিন খুব আনন্দ করি। ফলে দিনকে অবহেলা করো না। সেলিব্রেট করো।
অসাধারণ ভাবনা…
সত্যিই অসাধারণ। আধুনিক পৃথিবী, মানুষের সঙ্কট, সম্পর্কের সঙ্কট নিয়ে কথা বলে ছবিটা। আর ভার্চুয়াল আইডেন্টিটি কী ভাবে ডিল করবে, তা বোধহয় মানুষের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। ‘তারিখ’ এ সব নিয়ে ভাবনাচিন্তার খোরাক দেয়। সম্পর্কের গল্প বলে। যে আঙ্গিকে ‘তারিখ’ আজকের পৃথিবীকে দেখছে, সে ভাবে আগে বাংলা ছবিকে দেখা হয়নি। বাংলা ছবিও নয়, আমি বলব, আধুনিক সমাজ ভাবতে পারে এ ভাবে।
‘তারিখ’-এর দৃশ্যে ঋত্বিক এবং রাইমা।
আপনার ভার্চুয়াল আইডেন্টিটি রয়েছে?
আমার কতগুলো অ্যাকাউন্ট আছে। তবে খুব সক্রিয় নই। ডিপলি ইনভলভ নই।
কেন?
আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার এই ব্যাপারগুলো ডিজাইনই করা হয় যাতে মানুষ অ্যাডিকটেড হয়। ফলে সচেতন ভাবেই খানিকটা দূরে থাকি। এটাতে ঢুকলে রিয়ালাইজ করা যায়, সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু খুব একটা আমি অন্তত করছি না।
আরও পড়ুন, ‘আমি ভাগ্যবান #মিটু ফেস করিনি, কিন্তু কেন ভাগ্যবান বলব বলুন তো?’
কিন্তু এখন তো সোশ্যাল মিডিয়াতেই ছবির প্রচার বলুন বা ক্রিটিসিজম— সব হয়ে যাচ্ছে!
দেখুন, ছবির প্রচার তো লোকে করবেই। কোনও প্রচার কাজে লাগবে, কোনওটা লাগবে না। আর অনেস্ট ক্রিটিসিজম শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, কোথাওই যে খুব একটা হয়, এমন নয়। শুধু সিনেমা বলে নয়। আমরা জাতি হিসেবে কি এই মুহূর্তে অনেস্ট ক্রিটিসিজম নিতে প্রস্তুত? এটা নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ফলে শুধু সিনেমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু মানুষ ভাল-মন্দ বলে। ছবির রেজাল্ট দেখেই সেটা বোঝা যায়।
আপনার আরও একটা ছবি আসছে এপ্রিলেই, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’…
হুম। আমার কাছে এটা একটা ড্রিম প্রজেক্ট।
আরও পড়ুন, প্রেম আর কাজ ঠিক ব্যালান্স করতে পারি না, বলছেন এনা
প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, আপনি রয়েছেন বলে আলাদা প্রস্তুতি নেবেন…
হা হা হা…। বুম্বাদার সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলাম। বুম্বাদা বলেছেন জানি। ওটা ওর মহানুভবতা। আমি একটা কথা বলতে পারি, আমরা যারা বুম্বাদার থেকে অনেকগুলো জেনারেশন পরের অভিনেতা, তাদের আপাদমস্তক শেখার আছে। এতটা ডেডিকেশন, এতটা সিরিয়াসনেস, নতুন অভিনেতাদের মধ্যেও চট করে দেখা যায় না। কাজের বাইরে অন্য কিছু নিয়ে ভাবেই না। এটা কোথাও ইনসিকিওরও করে দেয়।
তাই?
হ্যাঁ, বুম্বাদাকে দেখে মনে হয়, বাবা! এত সিরিয়াস! আমি এতটা সিরিয়াস এখনও হয়ে উঠতে পারিনি। ফলে আমি হই আর যে-ই হোক, বুম্বাদা বুম্বাদার মতো করে সব সময়ই প্রস্তুত। সেটাই বুম্বাদার কাজের প্যাটার্ন। যাই করুক, সেটার পিছনে সিনেমা জড়িয়ে আছে। আমরা লাকি, যে বেশির ভাগ সময়ই বাংলা সিনেমা। বুম্বাদার বয়সে এতটা সিনসিয়ার কি আমি আদৌ থাকতে পারব, এটা ভাবলেই কেমন সব ধোঁয়া হয়ে যায় (হাসি)।
‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এর পোস্টারে প্রসেনজিত্ এব ঋত্বিক।
‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র জার্নিটা কেমন?
দুই ভাইয়ের গল্প। তাদের সম্পর্ক, ইকুয়েশন, টানাপড়েন, এতটা রিয়েলিটি দিয়ে এই সম্পর্কটা বার বার দেখা হয় বলে মনে হয় না। আমার চরিত্রটা দারুণ। এ ছাড়া কৌশিকদার নিজস্ব মাস্টারি, বুম্বাদার নিজস্ব প্রেজেন্স তো আছেই।
যে ইনসিকিওরিটির কথা বলছেন, সেটা অনস্ক্রিন মনে হয়নি?
না! ছবিতে ইনসিকিওর্ড মনে হয়নি। কারণ আমারও একটা স্পষ্ট চরিত্র আছে। সেটা তৈরি করতে পারলেই নিজের কাজটা কমপ্লিট হয়ে যায়। খুব ইমপর্ট্যান্ট কিছু সিন আছে। সেগুলো নিয়ে মানুষ পরে কথা বলবে বলে আমার মনে হয়।
আরও পড়ুন, ‘আর কী করলে আমাকে অন্য চরিত্রেও ভাববে, জানি না’
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এলেন কেরিয়ারে। প্রফেশনাল খারাপ লাগা শেয়ার করতে চাইবেন?
১০, ১২ বছর হয়ে গেল আমার। খারাপ লাগা নিশ্চয়ই তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে সব আর আলাদা করে বহন করি না। কারণ, শূন্য থেকেও নয়, আমি মাইনাস থেকে শুরু করা একটা মানুষ। আর কী হতে পারে জীবনে? এক সিনের ডায়লগহীন চরিত্র দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছি। ফলে খারাপটাও দেখেছি। তখনও খুব জোর ছিল। আর এখন মনে হয় ওগুলো জীবনে না থাকলে এই আমিটা হয়ে উঠতে পারতাম না।
ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু হয়?
খুব প্রাণের বন্ধু ইন্ডাস্ট্রিতে আমার নেই। সবাই কলিগ। কেউ কেউ বন্ধু।
আরও পড়ুন, পুরুষ না মহিলা, কেমন সঙ্গী পছন্দ? চান্দ্রেয়ী বললেন…
কারা?
বিশ্বনাথের কথা বলব। আর প্রদীপ্ত। যদিও ওকে ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু হিসেবে ধরি না। আমরা অনেক দিনের বন্ধু। যখন ইন্ডাস্ট্রিতে কেউই এসে পৌঁছইনি তখন থেকেই।
ছেলে কেমন আছে?
ভালই। সাড়ে পাঁচ হল ওর।
ছেলে কখনও টিভিতে হলেও দেখেছে আপনাকে?
সে ভাবে নয়। ওর দেখার বয়সও হয়নি। ইন্টারেস্টিং হল, ছেলে জিজ্ঞেস করে, আজকে কী সাজবে? আমি বলি, একটা লোক। পরের দিন আবার জানতে চায়, আজকে কী সাজবে? আমি বলি, আর একটা লোক। হা হা হা…।
(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)