movie review

অসম্ভব স্বপ্ন নিয়ে বোনা হলেও বাস্তবতায় ডুবে থাকা এক সতেজ ছবি ‘অঙ্ক কি কঠিন’

কলকাতার ঝাঁ-চকচকে বহুতলের ছায়ায় বস্তিতে বড় হওয়া তিনটি শিশুর স্বপ্ন দেখা শুরু হয় কোভিড অতিমারির ঠিক আগে। কেমন হল তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ১৩:৫৪
Share:

‘অঙ্ক কি কঠিন’ ছবিতে এক বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্নো মিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

বড় বাজেট, জনপ্রিয় পরিচালক এবং তারকায় ভরা বাংলা সিনেমার ভিড়ে সৌরভ পালোধি পরিচালিত ‘অঙ্ক কি কঠিন’ যেন এক ঝলক টাটকা হাওয়া। সাধারণত বাংলা ছবিতে যে সাজানো গোছানো শহুরে জগতের দেখা মেলে, তার থেকে বহু দূরে এক অন্য পরিবেশে গড়ে ওঠা এই ছবির জগৎ খুবই বাস্তব।

Advertisement

কলকাতার ঝাঁ-চকচকে বহুতলের ছায়ায় বস্তিতে বড় হওয়া তিনটি শিশুর স্বপ্ন দেখা শুরু হয় কোভিড অতিমারির ঠিক আগে। বাবিন (ঋদ্ধিমান বন্দ্যোপাধ্যায়), ডলি (গীতশ্রী চক্রবর্তী) আর টায়ার (তপোময় দেব)— এক জরাজীর্ণ সরকারি স্কুলের পড়ুয়া। তাদের প্রতিদিনের বিশৃঙ্খল ক্লাসে স্বপ্ন দেখতে শেখান তাদের এক শিক্ষক। যখন জিজ্ঞেস করা হয় তারা বড় হয়ে কী হতে চায়, বাকিদের মতো বাস কিনে চালানো বা পুলিশকে কিনে নেওয়ার স্বপ্ন না দেখে বাবিন হতে চায় ডাক্তার, ডলি নার্স আর টায়া ইঞ্জিনিয়ার হতে।

সরকারি স্কুলের তিন পড়ুুুয়া বাবিন (ঋদ্ধিমান বন্দ্যোপাধ্যায়), ডলি (গীতশ্রী চক্রবর্তী) আর টায়ার (তপোময় দেব। ছবি: সংগৃহীত।

করোনা অতিমারি পরবর্তী সময়ে এই স্বপ্নগুলোর সামনে আসে অনেক প্রশ্নচিহ্ন। যখন সারা রাজ্যের শত শত সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে পড়ে থাকছে, তখন এই পড়ুয়াদের স্কুলও তেমনই বন্ধ। কিন্তু তিন খুদে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না হয়েও তৈরি করে নতুন মোড়। নেমে পড়ে এক নতুন প্রকল্পে।

Advertisement

পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে ওরা গড়ে তোলে হাসপাতাল। নিজেদের সাধ্যমতো। কুড়িয়ে পাওয়া কাঁচি, খুঁজে আনা স্টেথো (ওদের ভাষায় ‘টেথো’) আর চুরি করা (আদতে নয়) অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তৈরি হ। এক আশ্চর্য জগৎ।

বাবিন, ডলি আর টায়ারের সবচেয়ে বড় ভরসার পাত্র হলো শাহরুখ (প্রসুন সোম), এক মুসলমান যুবক যে খাবার ডেলিভারি করে। সে আবার প্রেমে পড়েছে নার্স কাজলের (পার্নো মিত্র)। শাহরুখই ওদের ‘ফিনান্সার’। ছোট ছোট কাজে সে হাত বাড়ায়— কখনও ওষুধের দোকান থেকে ধার করে মাস্ক কিনে দেয়, কখনও হাসপাতালের একমাত্র বেডের ঘরে একটা বাল্ব লাগিয়ে দেয়। হাসপাতালে আছে কেবল একটা ভাঙা টিভি, কিছু চেয়ার আর জোড়াতালি দিয়ে বানানো আলমারি। সেই আলমারিকে ঘিরে রয়েছে একরাশ স্বপ্ন।

অভিনেতা প্রসূন সোম এবং পার্নো মিত্র সম্পর্কের রসায়ন এ ছবিতে অক্সিজেন জুগিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

বাবিনের মা-বাবা, ডলির মা আর টায়ারের মা কখনোই তাঁদের জীবনের কঠিন বাস্তব জোর করে তাঁদের ছেলেমেয়েদের সামনে দাঁড় করান না। বরং তাঁদের অনুপ্রেরণা বড়োই মায়াবী, সহানুভূতিশীল। এমনকি ছবির খলনায়করাও প্রকৃত অর্থে খলনায়ক নন। এরা নিজেদের অবস্থান রক্ষা করতে চাওয়া কিছু মানুষ, যেমনটা দেখা যায় বাস্তবে।

‘অঙ্ক কি কঠিন’-এর কেন্দ্রবিন্দুতে তিনটে খুদে চরিত্র হলেও এরাই ছবির সবচেয়ে দুর্বল অংশ। আলাদা আলাদা ভাবে কখনও কখনও তারা উজ্জ্বল, কিন্তু নিজেদের মধ্যে বা অন্যদের সঙ্গে সংলাপে বেশ আড়ষ্ট। কোনও কোনও দৃশ্য বড় বেশি ‘স্ক্রিপ্টেড’ মনে হয়। মাঝেমধ্যে হাসি পেলেও বেশির ভাগ সময়ই তাদের সংলাপ— বিশেষত কৌতুক মনে গাঁথে না।

অন্য চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রসূন সোম অভিনীত শাহরুখ নজর কাড়ে। শিশুদের সঙ্গেই হোক বা পার্নো মিত্রের সঙ্গে—তাঁর রসায়ন অসাধারণ। বাবিনের দিনমজুর বাবার ভূমিকায় শঙ্কর দেবনাথ এবং গৃহকর্মী মায়ের চরিত্রে রয়েছেন সঞ্জিতা; বাবিনের সঙ্গে তাদের মুহূর্তগুলি খুবই আবেগময়। টায়ারের মা যৌনকর্মী, তার চরিত্রে দীপান্বিতা নাথ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ডলির মা নার্স, সেই চরিত্রে উষসী চক্রবর্তীকে কিছুটা বেমানান লাগে। অন্যদিকে নার্সের ভূমিকায় পার্নো মিত্র খুবই সাবলীল। এরা সবাই মিলে তিনটি শিশুর অভিনয়ের খামতি ঢেকে দেন। দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের সুরারোপও যেন সেই কাজে সাহায্য করে অনেকখানি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement