সকাল সকাল খালি পেটে চা খাওয়া কেন ক্ষতিকর, এই ভুল সকলেই করেন। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
ঘুম থেকে উঠে সকালে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক না দিলে দিনটা শুরুই হতে চায় না। সেই চায়ে যদি কয়েক টুকরো আদা থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। সে আদা বা লেবু দিয়ে হোক অথবা লাল চা— যে রকম চা-ই পছন্দ করুন না কেন, সকালে খালি পেটে চা পান কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? অনেকেই বলবেন, গরম ধোঁয়া ওঠা চা ছাড়া আবার দিন শুরু করা যায় নাকি! চা ছাড়া তো আলস্যই কাটবে না। যদিও স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে অনেকেই এখন দুধ-চিনি দেওয়া চা খাওয়া বন্ধ করেছেন। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, সকালে খালি পেটে চা খেলে তার অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
খালি পেটে চা পানের বিড়ম্বনা
অম্বল-গ্যাস-বদহজম-পেটের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা জানেন, কোনও কোনও দিন চা একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেলে শরীর কী ভাবে জানান দেয়। অথচ তার পরেও চা খাওয়ায় খুব বেশি রাশ টানতে পারেন না। দিনভর চলে কাপের পর কাপ চা। কিন্তু সকালে খালি পেটে যেই চা খাবেন, অমনি অম্বলের সমস্যা বাড়বে। কিছু না খেয়েও গলা-বুক জ্বলবে, সকালের জলখাবার খাওয়ার পরে হজমের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।
চায়ে থাকে বেশি পরিমাণে ট্যানিন, যা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় শরীরে গেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু এর পরিমাণ বাড়লেই, তা পাকস্থলীতে প্রদাহ তৈরি করবে। বিপাকক্রিয়ার হার কমিয়ে দেবে, ফলে খাবার হজম হতে দেরি হবে।
খালি পেটে চা খেলে হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, এমনকি, শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। চা খেলে আলস্য কাটবে ভাবেন অনেকে, আসলে খালি পেটে চা ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়।
রোজ সকালটা ক্যাফিন আসক্তি দিয়ে শুরু করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। বরং গ্রিন টি যদি খেতে পারেন, তা হলে তা কিছুটা উপকার দেয়। তবে গ্রিন টি খালি পেটে খাওয়া ঠিক নয়।
খালি পেটে চা খাওয়ার আরও একটি খারাপ দিক হল, এতে খিদে কমে যায়। শরীরে জলশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ে।
চায়ের ট্যানিন রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে কিডনির ক্ষতিও হতে পারে।
সকাল সকাল চায়ের বিকল্প কী?
১) এক কাপ দই, আধ কাপের মতো ওট্স, একটি গোটা আপেল ও একটি কলা মিক্সারে ভাল করে পিষে নিন। গ্লাসে ঢেলে উপর থেকে বিটনুন ও অল্প মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। এই স্মুদিতে প্রোটিন ও ফাইবার থাকায় অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি রাখবে।
২) তুলসীর চা খুব ভাল। ঠান্ডার মরসুমে সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। তবে যদি রোজ এক কাপ করে তুলসী চা খেতে পারেন, তা হলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে। একটি পাত্রে জল গরম করে তাতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। তার পর মধু ও লেবু মিশিয়ে নিলেই তৈরি তুলসী চা। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
৩) হজমের সমস্যা থাকলে পুদিনার চা খেতে পারেন। জল গরম করে তাতে কুচি কুচি করে কয়েকটা পুদিনা পাতা কেটে মিনিট ১৫ ঢাকা দিয়ে রাখুন। এই চা খেলে যেমন গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমবে, তেমনই ক্লান্তিও দূর হবে।
৪) কিশমিশ এবং কেশর শরীরের পক্ষে উপকারী। ৬-৮টি কিশমিশ এবং দুটো কেশর গরম জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মিশ্রণটিকে খালি পেটে পান করতে হবে। এর ফলে রক্ত পরিশোধিত হবে। দেহে আয়রনের ভারসাম্য বৃদ্ধি পাবে এবং পেট পরিষ্কার থাকবে।