BJP

দলে ‘ফ্যামিলি প্ল্যানিং’ নয়, রাজ্য বিজেপি-র ‘আদি-নব্য’ বিবাদকে ওড়ালেন অমিত

বিজেপি আদিদের একাংশের আশঙ্কা তাঁদের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও আড়ালে অনেকে বলছেন, বিজেপি-র ‘তৃণমূলায়ন’ হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৫৩
Share:

অমিত শাহ।

দেশের জন্য ‘ফ্যামিলি প্ল্যানিং’ দরকারি। কিন্তু দলের জন্য নয়। এমনটাই মনে করেন অমিত শাহ। বাংলায় সফরে এসে সংবাদমাধ্যমকে এমন কথা বলে কি দলের ভিতরে ‘আদি-নব্য’ ভাগাভাগি নিয়ে সরবদেরই বার্তা দিলেন অমিত? বৃহস্পতিবার রাত থেকে এমন প্রশ্ন ঘুরছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।

Advertisement

জেপি নড্ডা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হলেও এখনও বিজেপি-র সাংগঠনিক বিষয়ে যে প্রাক্তন সভাপতির কথাই শেষ কথা, তা সম্যক জানেন রাজ্য নেতারা। তাই অমিতের এই প্রকাশ্য বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে আদি-নব্য দুই শিবিরই। বৃহস্পতিবার দিনভর দলীয় কর্মসূচির শেষে একটি সংবাদমাধ্যমের শিখর সম্মেলনে যান অমিত। সেখানেই রাজ্য বিজেপি-তে নতুনদের যোগদান নিয়ে আদিদের আশঙ্কার কথা উঠে আসে। তার জবাবেই অমিত বলেন, ‘‘দলকে সব সময় বড় করতে হয়। দলে ফ্যামিলি প্ল্যানিং চলে না। এটা দেশের জন্য দরকারি হলেও দলের জন্য নয়।’’

তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায় বিজেপি-তে যোগদানের পর থেকেই শুরু হয়েছিল ‘আদি বনাম নব্য’ বিবাদ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সদ্য দলে যোগ-দেওয়া অনেককেই প্রার্থী করা হয়েছিল। সেই ‘নবাগত’-দের অনেকেই এখন সাংসদ। কিন্তু নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে বিজেপি একেবারে হাট করে দলের দরজা খুলে দিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো উল্লেখযোগ্যরা ছাড়াও প্রতিদিনই দলে কেউ না কেউ অন্য রাজনৈতিক দল থেকে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই এক ডজনের বেশি অন্য দলের বিধায়ক এসেছেন বিজেপি-তে। যোগ দিয়েছেন কয়েক জন অভিনেতা-অভিনেত্রীও। তাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে পদ্ম প্রতীকে লড়ার টিকিটও পেতে পারেন।

Advertisement

সেই সম্ভাবনা দেখা দিতেই দলের আদিদের একাংশ তাঁদের গুরুত্ব কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করতে শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও আড়ালে অনেকে বলছেন, বিজেপি-র ‘তৃণমূলায়ন’ হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে এ সব সমালোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা বৃহস্পতিবার সম্ভবত নতুন করে স্পষ্ট করলেন অমিত। তবে এই প্রথম নয়। এর আগে পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন জল্পনাতেই অনেকে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। তার জন্য তাঁদের দলের কোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল। আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ দশরথ তিরকে এবং নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক সুকরা মুন্ডার বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্যও দুই নেতাকে শো-কজ করেছিল বিজেপি। দলের ‘তৃণমূলায়ন’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গেও বৃহস্পতিবার তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন অমিত। জানিয়েছেন, য়াঁরা বাইরে থেকে আসবেন, তাঁরাও বিজেপি-র আদর্শ মেনেই চলবেন। বিজেপি তাঁদের আদর্শে চলবে না।

শুভেন্দু, রাজীব এবং তাঁদের অনুগামীরা বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে বিজেপি-তে ‘আমরা-ওরা’ বিভাজনও দেখা দিয়েছিল। যার মূলে রয়েছে গত লোকসভা ভোটের আগে-পরের হিসাবনিকাশ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৮ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেই নির্বাচনের নিরিখে ১২১টি বিধানসভা আসনে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। সেই সূত্রেই এখন রাজ্য বিজেপির ‘আদি’-দের একাংশ লোকসভা নির্বাচনের পরে যাঁরা দলে যোগ দিয়েছেন তাঁদের ‘নব্য’ হিসেবে ধরছেন। সেই ‘আদি’-রাই আওয়াজ তুলছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করা নেতাদেরই এগিয়ে থাকা ১২১টি আসনে প্রার্থী করা হোক। যাঁরা পরে এসেছেন এবং এর পরেও আসবেন, তাঁরা লড়ুন বাকি ১৭৩ আসনে। তবে অমিত যে সেই দাবিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা-ও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। আসনে আদি ও নব্য দুই দলের নেতাদের উপস্থিতিতেই অমিত বলে দিয়েছেন, ‘‘প্রার্থী বাছা হবে তাঁদেরই, যাঁরা জিততে পারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন