কাশ্মীরি চিকিৎসক আদিল আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
শুধু আরডিএক্স তৈরির ৩৬০ কেজি মশলা নয়, মোট ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ফরিদাবাদের ঘটনার পর বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানাল জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। ২৯০০ কেজির মধ্যে ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার করা ৩৬০ কেজির বিস্ফোরকও রয়েছে। হরিয়ানা পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, ওই বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হতে পারে। তা আরডিএক্স তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
কিছু দিন আগে কাশ্মীর পুলিশ শ্রীনগরে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটার অভিযোগে এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছিল। তাঁর সূত্রেই রাজধানী দিল্লির অদূরে ফরিদাবাদে বিস্ফোরক মজুতের হদিস পাওয়া যায়। সোমবার সেখানে একটি ভাড়া বাড়িতে হানা দেয় হরিয়ানা এবং কাশ্মীর পুলিশের যৌথ বাহিনী। উদ্ধার করা হয় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক এবং বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র। ২০টি বোমার টাইমার, রিমোট এবং ওয়াকিটকিও ছিল ওই বিস্ফোরকের সঙ্গে। কাশ্মীর পুলিশ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এর সঙ্গে জইশ জঙ্গিদের যোগ রয়েছে। এ ছাড়া, আনসার ঘাজ়ওয়াত-উল-হিন্দ নামের আর এক পাকিস্তানি গোষ্ঠীর খোঁজও মিলেছে।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কাশ্মীরে নাশকতার উদ্দেশে সম্প্রতি একটি বিশেষ গোষ্ঠী সক্রিয় হয়েছে। তারা সামাজিক সেবামূলক কাজের আড়ালে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। তা দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র এবং বিস্ফোরক সরবরাহ করছে। এ ছাড়া, ব্যক্তিবিশেষকে চিহ্নিত করে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই চক্রের তদন্তে এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করে কাশ্মীর পুলিশ। ধৃতেরা হলেন, আরিফ নিসর দার, ইয়াসির-উল-আসরফ, মকসুদ আহমেদ দার, ইরফান আহমেদ, জ়ামির আহমেদ, চিকিৎসক আদিল এবং চিকিৎসক মুজ়াম্মিল আহমেদ।
এই সংক্রান্ত তদন্তের জন্য কাশ্মীরের শ্রীনগর, অনন্তনাগ, সোপিয়ানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ ছাড়া, হরিয়ানা পুলিশের সহযোগিতায় ফরিদাবাদে এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সহযোগিতায় সাহারানপুরে হানা দিয়েছেন কাশ্মীরের তদন্তকারীরা। আইইডি তৈরির মোট ২৯০০ কেজি উপাদান এই সমস্ত জায়গা থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মিলেছে একাধিক পিস্তল এবং একে ৪৭ রাইফেল।
ধৃত চিকিৎসক দু’জনেই কাশ্মীরি। মুজ়াম্মিল ফরিদাবাদের একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ, তাঁর সাহায্যেই ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক এবং অস্ত্রশস্ত্র কাশ্মীর থেকে এনেছিলেন আদিল। টাইম্স অফ ইন্ডিয়া সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, মুজ়াম্মিলের সহকর্মী এক মহিলা চিকিৎসকের গাড়ির ভিতর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে ওই মহিলাও তদন্তকারীদের নজরে। কাশ্মীরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদিও মহিলাকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। আদৌ তিনি এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত, না তাঁকে না-জানিয়ে তাঁর গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছিল, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিরাপত্তার বেষ্টনী এড়িয়ে কী ভাবে কাশ্মীর থেকে দিল্লির এত কাছে এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পৌঁছে দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠেছে।