মুম্বইয়ের ওরলি পার্ক অডিটোরিয়ামের মঞ্চে রাজ ঠাকরে (বাঁদিকে) এবং উদ্ধব ঠাকরে (ডানদিকে)। ছবি: পিটিআই।
১৮ বছর পরে আবার এক মঞ্চে হাজির তাঁরা দু’জনে। অঙ্গীকার সেই মহারাষ্ট্র এবং মরাঠি মানুষের স্বার্থরক্ষা। প্রথম জন বললেন, ‘‘একসঙ্গে থাকার জন্যই আমরা এক মঞ্চে এসেছি।’’ দ্বিতীয় জনের মন্তব্য, ‘‘বালাসাহেব ঠাকরে যা পারেননি, দেবেন্দ্র ফডণবীস (মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা) তা সম্ভব করে দিয়েছেন।’’
প্রথম জন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (ইউবিটি)-র প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। দ্বিতীয় জন, তাঁর তুতো ভাই তথা মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-র প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান রাজ ঠাকরে। শনিবার দুপুরে মুম্বইয়ের ওরলি পার্ক অডিটোরিয়াম ছাপানো বিপুল জমায়েতে ঐক্যের বার্তা দিলেন দু’ভাই। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে দুই ‘সেনা’র এই ঐক্যের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।
ঘটনাচক্রে, ষাটের দশকে হিন্দুত্ববাদী আদর্শ এবং মরাঠি মানুষের স্বার্থরক্ষার অঙ্গীকার করে প্রয়াত বালাসাহেব যে ‘শিবসেনা’ গড়েছিলেন, তার নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘তিন-ধনুক’ তাঁর পুত্র উদ্ধব বা ভ্রাতুষ্পুত্র রাজের দখলে নেই। বালাসাহেব জমানায় দলের দ্বিতীয় সারির নেতা একনাথ শিন্ডে তিন বছর আগে ফডণবীস এবং তাঁর দলের মদতে তা করায়ত্ত করেছেন। গত নভেম্বরে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফল বলছে, শিবসেনার ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশও শিন্ডেসেনার দখলে। এই আবহে শনিবার হিন্দি ভাষার আগ্রাসন রুখে দেওয়ার বিজয়োৎসবের মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দিলেন উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরে।
ইতিহাস বলছে, ২০০৬ সালে রাজ শিবসেনার সঙ্গ ছেড়ে নিজের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) গড়েছিলেন। বালাসাহেব তখনও বেঁচে এবং রাজনীতিতে সক্রিয়। পিতৃব্যের নামে একটি অভিযোগ না করলেও প্রকাশ্যে উদ্ধবের ‘নেতৃত্বগুণ’ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। সুবক্তা রাজ রাজনীতিতে এসেছিলেন উদ্ধবের অনেক আগে। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাও ছিল সুবিদিত। বস্তুত, দীর্ঘ দিন বালাসাহেবের ‘রাজনৈতিক সহযোগী’ ছিলেন রাজই। সে সময় উদ্ধব ব্যস্ত থাকতেন বন্যপ্রাণীদের ক্যামেরাবন্দি করার শখ নিয়ে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে মরাঠি জনসমাজে ঢেউ তুললেও দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি রাজ।
বালাসাহেব তাঁর জীবদ্দশায় উদ্ধব-রাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি (এর আগে ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের দ্বিতীয় প্রয়াণদিবসে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল উদ্ধব এবং রাজকে। যদিও তা ছিল পুরোপুরি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান)। সেই প্রসঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করেই শনিবার ফডণবীসের প্রতি ‘সৌজন্য’ প্রকাশ করেন রাজ। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে স্কুলে ‘তিন ভাষা’ বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করেও প্রবল বিরোধিতার জেরে পিছু হটেছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শিন্ডেসেনা-এনসিপি (অজিত)-এর জোট সরকার। তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার নির্দেশিকা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস। সেই উপলক্ষেই শনিবার ওরলি পার্কে সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় বালাসাহেব ঠাকরের দ্বিতীয় প্রয়াণবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ২০২৪ সালে হয়েছিল বলে লেখা হয়েছিল, যা ঠিক নয়। গোচরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এই গুরুতর তথ্যগত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী)