একনাথ শিন্ডে, বালাসাহেব ঠাকরে এবং উদ্ধব ঠাকরে। — ফাইল চিত্র।
শুধু মাত্র মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রিত্ব নয়, উদ্ধব ঠাকরের হাত থেকে আরও অনেক কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েই দলভাঙার যুদ্ধে নেমেছিলেন একনাথ শিন্ডে। লড়াইয়ের ফল বলছে, তিনি সফল। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন রায় দিয়ে দিল, ‘শিবসেনা’ নাম এবং তার নির্বাচনী প্রতীক ‘তির-ধনুক’ দু’টিই পাচ্ছেন শিন্ডে। যে বালাসাহেব ঠাকরের হাত ধরে শিবসেনার জন্ম, তাঁর উত্তরাধিকারী পুত্র উদ্ধব হেরে গেলেন যুদ্ধে।
ভাঙনের পর, প্রথম থেকেই শিবসেনার বিদ্রোহী শিবিরের দাবিদাওয়াতে স্পষ্ট ছিল, মহারাষ্ট্রের সচিবালয়ের পাশাপাশি তাদের নজর শিবসেনার নাম, পতাকা, প্রতীকেও। নজর প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের ‘আসল’ রাজনৈতিক উত্তরাধিকারে। নির্বাচন কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে উদ্ধবরা আইনের দ্বারস্থ হলে ভবিষ্যতে যা-ই ঘটুক না কেন, আপাতত সেই উত্তরাধিকারী শিন্ডেই।
ষাটের দশকে হিন্দুত্ববাদী আদর্শ এবং মরাঠি মানুষের স্বার্থরক্ষার যে অঙ্গীকার করে বালাসাহেব নয়া দল ‘শিবসেনা’ গড়েছিলেন, অতীতেও তাতে কয়েক বার ভাঙন ধরেছে। কিন্তু সে সব ক্ষেত্রে দলের ‘আদর্শ ‘ছিনতাই’-এর সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। ছগন ভুজবল, নারায়ণ রানের মতো ‘হেভিওয়েট’ মরাঠি নেতারা সে চেষ্টা করেনওনি। কারণ, বিপরীত আদর্শের দল কংগ্রেসে নাম লিখিয়েছিলেন তাঁরা।
সে দিক থেকে দেখতে গেলে, প্রথম বার সেই দাবি শোনা গিয়েছিল রাজ ঠাকরের মুখে। বালাসাহেবের জীবদ্দশাতেই ২০০৬ সালে তাঁর প্রিয় ভাইপো রাজ শিবসেনার সঙ্গ ছেড়ে নিজের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) গড়েছিলেন। পিতৃব্যের নামে একটিও অভিযোগ না করলেও, প্রকাশ্যে উদ্ধবের ‘নেতৃত্বগুণ’ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। সুবক্তা রাজ রাজনীতিতে এসেছিলেন উদ্ধবের অনেক আগে। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাও ছিল সুবিদিত। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে মরাঠি জনসমাজে ঢেউ তুললেও দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বালাসাহেব তখনও জীবিত থাকায় রাজের ‘কাজ’ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কঠিন ছিল। বাস্তব পরিস্থিতি বিচার না করে কট্টরপন্থী অবস্থান নেওয়া এবং হিংসাত্মক আন্দোলনের কারণে ক্রমশ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে রাজ কোণঠাসা হয়ে পড়েন বলেও ওই অংশের মত। তা ছাড়া, আর এক হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপিকে পাশে পাননি তিনি। যেমনটা শিন্ডে পেয়েছেন।
মহারাষ্ট্রে ২০১৯ সালে শেষ বিধানসভা নির্বাচনে জোট করে লড়েছিল শিবসেনা এবং বিজেপি। ভোটের পরই জোট ভাঙে। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলান উদ্ধব। গোড়ায় এনসিপি বিধায়ক এবং শরদের ভাইপো অজিত পওয়ারের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস। কিন্তু সে সরকার দিন দুয়েকের বেশি টেকেনি। এর পর শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ধব। শিন্ডেকে তিনি নগরোন্নয়ন ও পূর্ত দফতরের দায়িত্ব দেন।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতির বাইরে শিবসেনা নেতা শিন্ডের তেমন কোনও পরিচিতি ছিল না ২০২২-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত। ওই বছর ২০ জুন একদল শিবসেনা বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তিনি শিরোনামে। প্রথমে গুজরাত, তার পর অসম, এবং তার পর গোয়া— তিন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের শীর্ষনেতা উদ্ধবের সঙ্গে দর কষাকষি চালাতে থাকেন। এক সময় বোঝা যায়, শিবসেনার অধিকাংশ বিধায়কই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। অতঃপর নিরুপায় উদ্ধবের ইস্তফা। ৩০ জুন, ২০২২ বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সরকার গড়েন শিন্ডে। উপমুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির ফডণবীস।
সরকার দখলের পর, শিবসেনার নাম ও প্রতীক দখলের লড়াই শুরু করেন শিন্ডে। সেই লড়াইয়েও আপাতত উদ্ধবকে হারিয়ে তিনিই জয়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy