গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। হলও তা-ই। ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দিল আমেরিকা। বুধবার বিকেলে (ভারতীয় সময় অনুসারে) এই শুল্কহার ঘোষণা করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ অগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। কেন ভারতের উপর এই শুল্ক চাপানো হল, নিজের সমাজমাধ্যম পোস্টে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ট্রাম্প।
ভারতীয় সময় অনুসারে বুধবার বিকেল ৫টা ৩৯মিনিটে সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এর পাতায় ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সেখানে ভারতকে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে অসন্তুষ্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন পণ্যের উপর ভারতীয় বাজারে চড়া হারে শুল্ক নেওয়া হয়। সেই কারণেই আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই শুল্কের পাশাপাশি ভারতের উপর একটি জরিমানা চাপানো হবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও সেই জরিমানার পরিমাণ কত, তা সমাজমাধ্যম পোস্টে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেননি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
সমাজমাধ্যম পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “মনে রাখবেন, ভারত আমাদের বন্ধু হলেও, বছরের পর বছর ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা তুলনামূলক ভাবে খুব কম হয়েছে। কারণ ওরা অনেক বেশি শুল্ক নেয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক নেওয়া দেশগুলির মধ্যে একটি। ওদের সঙ্গে ব্যবসায় অনেক বিরক্তিকর বাধা রয়েছে, যার সঙ্গে আর্থিক কোনও সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া, ওরা সব সময় নিজেদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় অংশ রাশিয়া থেকে কেনে। রাশিয়ার জ্বালানি সবচেয়ে কেনে ওরা।” তাঁর দাবি ভারতের মতো চিনও রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “যখন সকলে চাইছে রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যালীলা বন্ধ করুক, তখন এ সব কাজ ভাল নয়। তাই ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে এবং উল্লিখিত বিষয়গুলির জন্য একটি জরিমানাও নেওয়া হবে ১ অগস্ট থেকে।”
ঘটনাচক্রে, সপ্তাহ দুয়েক আগেই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা দেশগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কিভের সঙ্গে যুদ্ধ থামানোর জন্য মস্কোকে ৫০ দিন সময় দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে রাশিয়া হামলা বন্ধ না করলে মস্কোর বাণিজ্যিক বন্ধুদের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি। দু’দিন আগে আবার ট্রাম্প জানান, যুদ্ধ থামানোর জন্য তিনি ১০-১২ দিন সময় দিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে।
মঙ্গলবার স্কটল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার সময়েই ট্রাম্প আভাস দিয়েছিলেন ভারতের উপর ২০-২৫ শতাংশ শুল্ক চাপাতে পারে আমেরিকা। তবে তখনও তা সম্ভাবনার পর্যায়েই ছিল। ওই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা হতে না হতেই তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভারত চাইছিল যাতে শুল্কহার আরও কম থাকে। ১৫-২০ শতাংশের মধ্যেই এই শুল্ককে বেঁধে রাখতে চাইছিল ভারত। বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রে এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তির পর বিষয়টির উপর আরও জোর দিচ্ছিল ভারত। ওই দুই দেশের পণ্যেই ১৯ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে আমেরিকা। সে ক্ষেত্রে ভারত চাইছিল, এই দুই দেশের থেকে কম শুল্কহারের প্রস্তাব দিক ট্রাম্প প্রশাসন।
সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সঙ্গীকে ১৫ শতাংশ বা তারও কম হারে শুল্কের সুবিধা দিয়েছেন ট্রাম্প। ভারতও তেমনই চাইছিল বলে জানিয়েছে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।যেমন, ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে নিচ্ছে ১৫ শতাংশ। জাপান-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তিতেও টোকিওর পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও তেমনটাই সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছিল নয়াদিল্লি।
(এই প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশের সময় ভুলবশত রাশিয়ার সঙ্গে চিনেরও উল্লেখ করা হয়েছিল। তা ঠিক নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েই রুষ্ট। অনিচ্ছাকৃত ওই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)