coronavirus

চাই সুস্থ জীবন, কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে? কী বললেন চিকিৎসকেরা?

সামগ্রিক ভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অসুখ বিসুখকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ভাল থাকার অন্যতম শর্ত, শরীর ও মনের সুস্থতা, মত চিকিৎসকদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ১৪:০৪
Share:

বাড়ির ছোটদের সুষম খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ছবি: শাটারস্টক

বিশ্বের উন্নত দেশের মহা মহা পণ্ডিতদের হিসেব নিকেশ বদলে দিয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মহাশক্তিধর ভাইরাস কোভিড-১৯। কয়েক বছর আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিশেষজ্ঞরা শপথ নিয়েছিলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ‘হেলথ ফর অল’ মিশন সফল করার। তবে এখন সব বিশেষজ্ঞদের ভাবনা-চিন্তা বদলে গেছে। সকলের একটাই লক্ষ্য— কোভিড-১৯-কে জব্দ করা। একটা ব্যাপারে সকলেই একমত যে, সামগ্রিক ভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অসুখ বিসুখকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ভাল থাকার অন্যতম শর্ত, শরীর ও মনের সুস্থতা, বললেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (সিএনসিআই)মেডিক্যাল সুপারিন্টেডেন্ট শঙ্কর সেনগুপ্ত।

Advertisement

রোজকার জীবনে কিছু ভাল অভ্যেস গড়ে তুলতে পারলে ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার, হার্টের অসুখের মতো নানান লাইফস্টাইল ডিজিজ প্রতিরোধ করা যায়, একই সঙ্গে নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সুবিধে হয় বলে জানালেন শঙ্করবাবু।

কোভিড-১৯-এর কারণে এখন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে জায়গা পাওয়া লটারি পাওয়ার মতো হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করার শপথ নিতে হবে সকলকে। আমাদের দেশের একটা বড় সমস্যা ওভার ওয়েট। এর মূলে আছে বদলে যাওয়া খ্যাদ্যাভ্যাস আর কায়িক পরিশ্রমের অভাব, বললেন ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। ইদানীং আচমকা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঘটনার কথা খুব শোনা যাচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রোগ থাকবে দূরে, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কোন ব্যায়াম করতে হবে, কোনটা নয়​

দীপঙ্করবাবুর মতে, কোনও কিছুই আচমকা আসে না। কিছু কিছু সিগনাল অবশ্যই দেয়, আমরা অবজ্ঞা করি, তাই আচমকা বিপদে পড়তে হয়। জীবনে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে কিছুটা রদবদল করে আর সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন গা ঘামিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটাচলা করে ব্লাড সুগার, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে সঙ্গে ও আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

নিয়মিত শরীরচর্চায় বাড়বে রোগ প্রতিরোধ শক্তি। বাড়ির খুদেকেও অভ্যস্ত করুন এতে। ছবি: শাটারস্টক

যাঁদের প্রেশার বা রক্তে চিনির মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী, তাঁদের অবশ্যই নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ওজন ঠিক রাখা জরুরি। সুদীর্ঘ লক ডাউনের ফলে গৃহবন্দী থাকায় অনেকেরই ওজন বেড়ে গিয়েছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। বাড়তি ওজন ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, ডায়াবিটিস-সহ নানান রোগ ডেকে আনে, বললেন দীপঙ্করবাবু। এমনকি নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ওবিসদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা স্বাভাবিক ওজনের মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি হয়। সিগারেট সহ যে কোনও তামাক ক্যানসার ও হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ। তাই তামাককে জীবন থেকে গেট আউট করে দিতেই হবে বলে দুই চিকিৎসকেরই অভিমত।

আরও পড়ুন: বাইরে বেরলেও কমেনি ঝুঁকি, ‘নিউ নর্ম্যাল’-জীবনে কী করবেন, কী করবেন না​

আচমকা হার্ট অ্যাটাক অথবা ব্রেন স্ট্রোকের জন্যে রক্তের কোলেস্টেরল অনেকাংশে দায়ী, বললেন দীপঙ্করবাবু। বিভিন্ন নামে এই শত্রু আমাদের শরীরের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। এলডিএল, ভিএলডি, অ্যাপো বি, ট্রাইগ্লিসারাইড— এই সব নামের লাইপোপ্রোটিন অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস অর্থাৎ রক্তবাহী শিরা ধমনীর মধ্যে চর্বির প্রলেপ পড়ার গতি বাড়িয়ে দিয়ে হার্ট, ব্রেন-সহ শরীরের সব ক’টি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে অকেজো করে দেয়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় এক নতুন ফ্যাটের কথা জানা গেছে। এক মেগা ট্রায়ালের পর দেখা গেছে যে, আমাদের স্টেপল ফুড কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলেই শরীরের বিশেষ এক এনজাইমের প্রভাবে তা লো ডেনসিটি কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হয়, বললেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী দত্ত। এর থেকে ডায়াবিটিসের আর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে। এর মানে অবশ্য এই নয় যে, কার্বোহাইড্রেটকে একেবারেই বাদ দিতে হবে। ভাত রুটি অল্প পরিমাণে খেয়ে পেট ভরাতে হবে সবজি, স্যালাড, ফল আর বাদাম দিয়ে, বললেন ইন্দ্রাণী। আবার হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল আমাদের শরীরের বন্ধু। এটি আমাদের হার্টকে রক্ষা করে।

আরও পড়ুন: করোনাকালে অটিস্টিকদের নিয়ে চিন্তা, হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছে এই সব নেটওয়ার্ক​

টাটকা ফল, সমুদ্রের মাছ, বাদাম, বিনস, অলিভ অয়েল-সহ কিছু খাবার এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রোজকার ডায়েটে এই সব খাবার রাখতে বললেন ইন্দ্রাণী দেবী। আবার যাঁদের ডায়বিটিস বা হাই ব্লাড প্রেশার আছে, বাড়তি প্রোটিন তাঁদের কিডনির উপর চাপ ফেলে। যা-ই খাবেন মাপসই, কিন্তু মাত্রা ছাড়াবেন না।

ত্যাগ করুন ধূমপানের অভ্যাস। ছবি:শাটারস্টক

বিভিন্ন অসুখের বাড়বাড়ন্ত আটকে দিতে রোগের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনও অবস্থাতেই নিজের ডাক্তারি নিজেরা করবেন না, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খেলে আচমকা বিপদে পড়তে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খাবেন। করোনা, ডেঙ্গির মতো সংক্রামক অসুখের পাশাপাশি লাইফস্টাইল ডিজিজ প্রতিরোধ করার চাবিকাঠি কিন্তু নিজেদের হাতেই থাকে। সচেতন থাকুন, ভাল থাকুন।

আরও পড়ুন: মাথা-ঘাড়ে অসহ্য ব্যথা? নার্ভের সমস্যা নয় তো? কীভাবে বুঝবেন​

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন