bone

সারা ক্ষণ এক জায়গায় বসে কম্পিউটারে কাজ? হাড় ও স্নায়ুর ক্ষতি এড়াবেন কী ভাবে

সারা দিন এক জায়গায় বসে কাজ? চেয়ার, টেবিল আর কম্পিউটার ভরসা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে চোখ আর আঙুল। শরীরে কী কী রোগ বাসা বাঁধছে জানেন? কী ভাবেই বা ঠেকাবেন সে সব? অস্থিবিশেষজ্ঞ অমিতাভ নারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানালেন মনীষা মুখোপাধ্যায়কে।সারা দিন এক জায়গায় বসে কম্পিউটারে কাজ করতে বসে কী কী অসুখ ডেকে আনছেন জানেন?

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৬
Share:

এক জায়গায় বসে কাজ করলে মেনে চলুন কিছু নিয়মকানুন। ছবি: শাটারস্টক।

সারা দিন এক টানা বসে কাজ করতে হয় অনেক মানুষকেই। কতটা রিস্ক আছে এতে?

Advertisement

খুবই সচেতন থাকতে হবে এতে। প্রাথমিক কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া খুবই প্রয়োজন। রিস্ক ফ্যাক্টর সবচেয়ে বেশি এই একটানা কাজ করায়। অস্থিসন্ধি, স্নায়ু প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও নানা অসুখ ডেকে আনে।

ঠিক কী কী অসুখের শিকার হতে পারেন?

Advertisement

অস্টিওপিনিয়া, অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস এ সব অসুখ তো বটেই, সঙ্গে হাড়ের সন্ধিতে নানা জটিলতা আসতে পারে। স্নায়ুর নানা সমস্যাও এ থেকে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পেশীতে টান, ব্যথা এ সব তো হয়ই। এমনকি, দীর্ঘ সময় এ ভাবে বসে থেকে কাজ করায় হাঁটুতে ক্ষয় হয়। হাঁটু পাল্টানোর দিকেও যেতে পারে তা। এ ছাড়া এক জায়গায় বসে কাজ মানসিক অবসাদও ডেকে আনে। একটানা এসিতে বসে থাকা মানেই বাইরে রোদে বেরনো কমে যাওয়া। এতে ভিটামিন ডি পায় না শরীর। তাই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে হাড় এমনিই দুর্বল হয়ে পড়ে।

দিনে মোটামুটি কত ক্ষণ এক ভাবে বসে থাকলে এই সব অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়?

দেখুন, নিয়ম অনুসারে, একটানা এক ঘণ্টার বেশি এক ভাবে বসা উচিত নয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, টানা সাত-আট ঘণ্টা এ ভাবে বসে থাকলে তা কতটা ক্ষতি করতে পারে!

আরও পড়ুন: মাথা যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভাঙে প্রায়ই? সমস্যা এড়াতে মেনে চলুন এ সব

এ ভাবে বসে থাকলে হাড়ের অসুখ হয়, এ তো সকলের জানা। তবু তো উপায় নেই। তা হলে কি এর কোনও সমাধানও নেই?

এমন করে বসে থাকা যদি পেশার অংশ হয়ে থাকে, তবে তা না করে উপায় নেই। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, এর মধ্যেই যাবতীয় সাবধানতাও নিতে হবে। জরুরি ব্যায়ামগুলোও সারতে হবে। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনও আনতে হবে। একটানা বসে থাকতে হয় বলে অন্য সময় বেশ কিছু বাড়তি সতর্কতা মানতে হবে।

কেবল তো বসে থাকাই নয়, কম্পিউটারে সারা ক্ষণ কাজ করেও যেতে হয় অনেককে। সে ক্ষেত্রেও তো হাতের পেশী, হাড়ে নানা সমস্যা হয়?

আলবাত। কম্পিউটারে কী ভাবে কাজ করছেন, সেটা খুব দরকারি। যে টেবিলে কম্পিউটার রাখা আছে, তার উচ্চতা যেন কোমরের স্তরে থাকে। এমন উচ্চতার চেয়ারেবসতে হবে যেন দু’ পায়ের পাতা মাটি স্পর্শ করে থাকে। মাউস ধরার সময় হাতের কব্জি যেন টেবিলের সাপোর্ট পায় সে দিকেও নজর রাখতে হবে।

না হলে কী কী অসুখ আসতে পারে?

হাতের কব্জিতে ট্রায়াঙ্গুলার ফাইব্রোকার্টিলেজ কমপ্লেক্স (টিএফসিসি) খুব প্রচলিত অসুখ আজকাল। টেনিস এলবোও হতে পারে এ থেকে।

আরও পড়ুন: গলা-বুক জ্বালা, চোঁয়া ঢেকুর প্রায়ই ভোগায়? ওষুধ ছাড়াই মুক্তি পান এ সব খাবারে

কব্জি ও কনুইয়ের ক্ষতি এড়াতে মেনে চলুন জরুরি ব্যায়াম।

এ থেকে নিষ্কৃতির উপায়?

ওই যে বললাম, মাউস ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বসার বেসিক নিয়ম মানতে হবে। আর জরুরি কিছু ব্যায়ামও করতে হবে রোজ। অন্য কোনও অসুবিধা না থাকলে ক্যালসিয়াম ও ওষুধও খেতে পারেন রোজ। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারদাবারও পাতে রাখুন। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এমন খাবার খান।

কিছু ক্ষণ আগে একটানা বসে থাকার জন্যও ব্যায়াম করার কথা বলছিলেন...

হ্যাঁ, প্রথমেই বলি, একটানা বসে থাকার সময় মাঝে মাঝে এক হাঁটুর উপর অন্য পা তুলে বসুন। এ ভাবেও অনেক ক্ষণ বসবেন না। কিছু ক্ষণ বসার পর পা নামান। প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর সিট ছেড়ে উঠুন। যাঁদের ইতিমধ্যেই হাড়ের অসুখ ধরেছে, তাঁরা একটানা বসে থাকতে গেলে একটা নিক্যাপ পরুন। হাঁটাহাঁটি করে আসুন বা ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসুন, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আসুন। এটুকু করতেই হবে। রোদ লাগান শরীরে। টিফিনের সময় বা মাঝে মাঝেই বাইরে বেরিয়ে মিনিট পাঁচ-সাত কাটিয়ে আসুন। ওতে কাজের ক্ষতি হয় না। চেয়ারে বসে বসে লেফট রাইট করা, বা একটু উঠে মিনিট দুই-তিন স্পট জগিং করে এলেও পেশীর সঞ্চালন হবে। এতে পেশীর স্টিফনেস কাটে। হাঁটতে হবে অন্য সময়। পেশীর জোর বাড়াতে স্ট্রেচিং ও আইসোমেট্রিক জাতীয় কিছু ব্যায়াম করতে পারেন, যা করার আগে অবশ্যই ফিজিক্যাল ট্রেনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।​

আরও পড়ুন: কতটা পরিমাণ নুনে নিরাপদ থাকবে শরীর জানেন?

আর একটানা কম্পিউটারে কাজের জন্য কী কী ব্যায়াম করতে হয়?

এ ক্ষেত্রে খুব ভাল স্মাইলি বল। অফিস ডেস্কে রাখুন। কাজের মাঝে পনেরো-বিশ সেকেন্ড ধরে চাপ দিন তাতে। যাঁদের ইতিমধ্যেই টিএফসিসি আছে, তাঁরা ব্যথা বাড়লে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি, মাঝে মাঝে আলট্রাসাউন্ড নিন, এতে অনেকটা উপকার মেলে। এ ছাড়া কম্পিউটারে বসে কাজ করার পাশাপাশি হাতে রিস্ট ব্যান্ড পরুন। যখনই সিট ছেড়ে উঠবেন, তখন পারলে ফ্রি হ্যান্ড করে নিন। ​চেষ্টা করুন বাকি সময়টা মোবাইলে টেক্সট করা কমাতে আর বাড়ি ফিরে কম্পিউটারে বসা এড়িয়ে চলুন।

​(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন