ঔদ্ধত্য শুধু অন্যকে কষ্টই দেয় না, নিজেরও যথেষ্ট ক্ষতি করে। ছবি: শাটারস্টক।
ঔদ্ধত্য— আধুনিক প্রজন্মের এক বড় সমস্যা। যে সমস্যায় জেরবার হয় তাদের পরিবারও । হাজার বুঝিয়েও কমে না এই স্বভাব। এই স্বভাবের জেরে জীবনে অনেক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়।
‘কঠিন পরিস্থিতি থেকে কাজ বার করে আনতে কিছুটা ঔদ্ধত্য দরকার৷ ভাল কথায় কাজ না হলে ধমকে, ভয় দেখিয়ে, অপমান করে হলেও কাজ উদ্ধার করতে হতে পারে৷ তবে একে জীবনের অঙ্গ করে ফেললেই ঝামেলা৷ বেজায়গায় ঔদ্ধত্য দেখালে বিপদের সম্ভাবনা প্রতি পদে৷’ বললেন মনোচিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম৷
তাঁর মতে, ঔদ্ধত্য যাঁদের বেশি, তাঁরা অত জায়গা–বেজায়গা মেনে চলতে পারেন না৷ কারণ তাঁদের চাহিদা খুব বেশি৷ নিজের মত-ই শেষ কথা৷ কাজেই, উগ্রতা দেখিয়ে বিরুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে যেমন কাজ উদ্ধার করে আনতে পারেন, আবার কাজ বিগড়োতেও এঁদের জুড়ি মেলা ভার৷ সঙ্গে একগুঁয়েমি যুক্ত হলে তো হয়েই গেল৷ বাজে জেদ আর মেজাজের ঠেলায় অস্থির হয়ে ওঠেন কাছের মানুষরা৷ আর দিনে দিনে একা হতে থাকেন উদ্ধত মানুষটি৷
আরও পড়ুন: ঘন ঘন ওষুধ নয়, আঞ্জনি সারান ঘরোয়া এই উপায়ে
অনুভূতিপ্রবণ হলে এই পর্যায়ে এসে চোখ খোলে৷ যখন বুঝতে পারেন শুধু ক্ষতিই হচ্ছে, নিজেকে পাল্টানোর ইচ্ছা জাগে৷ পরিস্থিতি যদিও তত দিনে খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে৷ কম বয়সে বোধোদয় হলে তো ভালই। ঘনিষ্ঠ লোকজনের প্রশ্রয় থাকলে বা চরম একগুঁয়ে হলে মধ্য বয়স পার হয়ে যায়৷ কারও আবার শেষ দিন পর্যন্ত স্বভাব বদলায় না৷
তবে যদি কেউ নিজেকে পাল্টাতে চান, তার রাস্তা আছে৷ যার সন্ধান দিয়েছেন চিকিৎসক জয়রঞ্জনবাবু।
কী ভাবে কমতে পারে ঔদ্ধত্য
নিজেকে বদলাতে চাইলে ভাল করে ভেবে দেখুন, কেন দিনে দিনে একা হয়ে যাচ্ছেন? কেন সকলে আপনার উপর বিরক্ত? কেন সবাই দূরে সরে যাচ্ছেন? আপনি ‘ঠিক’ আর বাকি সবাই ‘ভুল’, তা তো হয় না৷ কোথায় ভুল হচ্ছে তবে? স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া না করে ভাবতে বসলে বুঝবেন, আপনার প্রধান দোষ অসহিষ্ণুতা৷ অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝেন না৷ তাঁদের ভাল লাগা–মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দেন না৷ তা হলে তাঁদেরই বা কী দরকার আপনার ভাল–মন্দ বোঝার? অপর এক ভুল— অবুঝ মনোভাব৷ নিজেকে বড় বেশি মূল্য দিয়ে ফেলেছেন৷ ধরে নিয়েছেন আপনি সব চেয়ে বেশি বোঝেন৷ কাজেই সবাই আপনার মতামত মেনে নিতে বাধ্য৷ তাঁরা যে মানতে চাইছেন না সেটা তাঁদের নির্বুদ্ধিতা বা অন্যায়৷ এ রকম একপেশে মনোভাবের জন্যই সমস্যা হচ্ছে৷ এখনই এই স্বভাব না বদলালে আস্তে আস্তে আরও একা হয়ে যাবেন৷ মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে৷ অবস্থার পরিবর্তন চাইলে কাউকে আদর্শ হিসেবে বেছে নিন৷ যাঁর কথাবার্তা দৃঢ়তায় পূর্ণ অথচ হাবভাব বেশ নরমসরম৷ যে পরিস্থিতিতে আপনি রূঢ় ব্যবহার করেন, সেই পরিস্থিতি তিনি কীভাবে সামলান তা লক্ষ করুন৷ তাঁর প্রতিবাদ করার পদ্ধতি কী রকম, আর আপনি কী ভাবে প্রতিবাদ করেন, দেখুন৷ এবং এই পার্থক্যের জন্য তিনি কী কী সুবিধে পাচ্ছেন, আর আপনার কী কী ক্ষতি হচ্ছে তারও তালিকা তৈরি করুন৷
অন্যকে পাত্তা না দেওয়া এই অসুখের মূল লক্ষণ। ছবি: শাটারস্টক।
ক্ষতির লিস্ট লম্বা হলে, ভেবে দেখুন নিজেকে বদলে ভাল থাকবেন, না কি যেমন চলছে তেমনই চলবে সব! বদলাতে চাইলে নিজেকে আপনার আদর্শ মানুষের মতো করে তৈরি করার চেষ্টা করুন৷ একা ঘরে আয়নার সামনে কাঙিক্ষত পরিস্থিতি ভেবে মহড়া দিন৷ আপনি নিজে অন্যের কাছে যেমন ব্যবহার আশা করেন, তেমন ভাবেই সকলের সঙ্গে ব্যবহার করুন৷ সদ্ভাব বজায় রাখতে চাইলে ভাল ব্যবহার না করলে চলবে কেন যে কোনও বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে মুখ খোলার করার আগে ১০ বার ভাবুন৷ সম্ভব হলে, কখন কী বলবেন তা আগে থেকে তৈরি করে নিন৷ বন্ধু–বান্ধবদের বলুন দরকার মতো ভুল ধরিয়ে দিতে৷ তাঁরা আপনার আগের রূপের কথা মনে করে হয়তো ভয় পাবেন৷ সব খুলে বলে তাঁদের সাহস জোগান৷ সঙ্গে সঙ্গেই ফল পাবেন না৷ বহুদিনের অভ্যাস তো৷ মাঝেমাঝে ভুল হয়ে যাবে৷ তবে লেগে থাকলে আস্তে আস্তে শুধরে যাবেন৷ ধাতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিভিন্ন আপোশ–রফা করতে হচ্ছে বলে হতাশা আসতেই পারে৷ নিজের উপর, অন্যের উপরও রাগ জন্মাতে পারে৷ অনেক সময় তা সামলাতে বিস্তর কাঠ–খড় পোড়াতেও হয়৷ তাই ধৈর্য হারাবেন না৷ দিনের খানিকটা সময় অন্তত যে কোনও ভাল লাগার কাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন৷ সকাল–বিকেল নিয়ম করে হাঁটা, সাঁতার কাটা বা জিমে যাওয়া শুরু করুন৷ এতে মন ভাল থাকবে৷ তার পাশাপাশি মাথা ঠান্ডা করতে যোগা, মেডিটেশন বা অন্য কোনও ধরনের মনঃসংযোগ বাড়ানোর শরীরচর্চা করুন৷ উদ্ধত মানুষের সঙ্গে মেলামেশা কমান৷ ভদ্র ও ব্যক্তিত্ববান মানুষদের সঙ্গে ওঠা-বসা করার চেষ্টা করুন৷
এতেও ফল না পেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
আরও পড়ুন: মানসিক চাপে বিপর্যস্ত? ওষুধ ছাড়াই উড়িয়ে দিন এ সব উপায়ে