sad

দুঃখবিলাসী হয়ে উঠছেন না তো? এ সব উপায়েই মনকে বশে আনুন

ডিপ্রেশন খুব স্বাভাবিক সমস্যা। জ্বর-সর্দি-কাশির মতোই অসুখ। শরীর খারাপ হলে যেমন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, মনের বেলাতেও তাই।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ১৭:২২
Share:

দুঃখকে আঁকডে বেঁচে থাকাও আদতে মনেরই অসুখ। ছবি: আইস্টক।

দুঃখের ঘটনায় দুঃখ তো পেতেই হবে৷ ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা গেলে যদি জীবনে চলার পথে কিছুটা কষ্ট না কুড়োন, তবে তো আপনি তো রোবট! কিন্তু সামান্য একটা ঘটনা ঘটল কি ঘটল না, কষ্টের পাহাড় বানিয়ে ফেললেন, ঘটনাটা কতটা খারাপ দিকে যেতে পারে তা নিয়ে সোৎসাহে আলোচনা শুরু করলেন এবং সেটাই হয়ে দাঁড়াল আপনার ওই মুহূর্তের ‘প্রধান বিনোদন’, তা হলে আপনি ‘দুঃখবিলাসী’৷ দুঃখ–কষ্ট–ঝামেলাই আপনাকে ভুলিয়ে রাখে। কোন কোনও ক্ষেত্রে সে সবই আপনার সারা দিনের ভাবনার খোরাক।

Advertisement

কেউ কেউ আবার সে সব কষ্টের কারণ হিসেবে অন্যকে দায়ী করতেও পিছপা হন না। এমন অভ্যাস ‘বাতিকে’ পরিণত হলে মনোবিদদের ভাষায় আসলে তা ‘পেসিমিস্ট প্লাস’ বা ‘সিনিক’। শুধু পেসিমিস্ট হলে ঘটনাটা থেকে কষ্ট পেতেন, তা থেকে অন্যের দোষ খুঁজতে বসতেন না।

ধরা যাক, কেউ বাস মিস করেছেন৷ ‘পেসিমিস্ট’ হলে ধরে নেবেন, নিজের দোষ৷ দেরি করেছেন বলে এরকম হল৷ এ রকম স্বভাব বলেই জীবনে কিছু হল না৷ এর পর এই নিয়ে শুরু হবে ভাবনা৷ অর্থাৎ বাস মিস করায় তেমন ক্ষতি হয়তো হয়নি, কিন্তু তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে দিন কাবার হয়ে যাবে৷ আর ‘সিনিক’ হলে দোষটা যাবে অন্য কারও উপর৷ তার জন্য আপনার কত ক্ষতি হয়ে গেল, তা একে-তাকে বলেন৷ গল্প ধীরে ধীরে আরও পল্লবিত হবে৷ অর্থাৎ সারা দিনের মতো একটা বিষয় পেয়ে গেলেন সেই মানুষটি।

Advertisement

আরও পড়ুন: কিছুতেই পোশাকের নাছোড় দাগ তুলতে পারছেন না? এ সব ঘরোয়া উপায় হতে পারে মুশকিল আসান

অন্য দিকে ‘ডিসথাইমিয়া’ বা লো–গ্রেড ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভুগলে উৎসাহ এবং আনন্দ বলে কিছু থাকে না জীবনে৷ চরম আনন্দের মধ্যেও দুঃখের ছায়া দেখে নিরানন্দে দিন কাটান এঁরা৷ এমন মানুষরাও পেসিমিস্ট৷ ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন হলে তো কথাই নেই৷ চূড়ান্ত পেসিমিস্ট৷ সঙ্গে ডিপ্রেশনের অন্যান্য উপসর্গ৷

উপযুক্ত চিকিৎসায় সারে দুঃখবিলাসী মনোভাবও।

অর্থাৎ এঁরা সবাই দুঃখের রাজ্যে বাস করেন৷ ব্যতিক্রম কেবল সিনিক মানুষজন৷ তাঁদের রাজ্যে দুঃখের সঙ্গে মিশে থাকে আনন্দ৷ বা বলা যায় দুঃখেই তাঁদের আনন্দ৷ কিন্তু এই সব সমস্যা সবই মনের অসুখ। তাই কী ভাবে দুঃখ থেকে মুক্তি পেয়ে মনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখা যায়, সেই রাস্তাই দেখিয়েছেন মনোরোগবিশেষজ্ঞ সঞ্জয় সেন৷

ডিপ্রেশন খুব স্বাভাবিক সমস্যা। জ্বর-সর্দি-কাশির মতোই অসুখ। শরীর খারাপ হলে যেমন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, মনের বেলাতেও তাই। কাজেই ডিপ্রেশন ঘাঁটি গাড়ছে বুঝলেই মনোচিকিৎসকের কাছে যান৷ ওষুধ শুরু করার মাস দেড়েকের মধ্যেই ভাল বোধ করবেন৷ লো গ্রেড ডিপ্রেশন, নিস্তেজ, নিরুৎসাহ ইত্যাদি উপসর্গ দু’–বছরের বেশি চললে তাকে ডিসথাইমিয়া বলে৷ এ ক্ষেত্রেও ওষুধে ভাল কাজ হয়৷

আরও পড়ুন: নতুন জুতোয় পায়ে ফোস্কা? এ সব মানলে রেহাই মিলবে সহজেই

সিনিকদের বদলানো মুশকিল৷ কারণ দুঃখবিলাসেই তাদের আনন্দ৷ এতে তাঁদের কাছের মানুষদের যত সমস্যাই হোক, তাঁদের নিজস্ব জীবনযাপনে কোনও অসুবিধে হয় না৷ কাজেই দীর্ঘ চিকিৎসা লাগে না৷ মুড খুব লো হয়ে গেলে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা সিবিটি করা যেতে পারে৷

পেসিমিস্টদের বদলানোর একমাত্র রাস্তা সিবিটি৷ ভাল মনোবিদের তত্ত্বাবধানে করলে ধীরে ধীরে চিন্তা–ভাবনার ধরন বদলায়৷ সমস্যা কমে৷ ধরুন, বস কোনও দিন তাকিয়ে না হাসলে পেসিমিস্টরা ধরে নেন তিনি কোনও কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন৷ এটা যে ভুল এবং একপেশে ভাবনা তা তাঁদের মাথায় আসে না৷ নানা কারণে বসের ব্যবহারে তারতম্য হতে পারে৷ শরীর খারাপ, কাজের টেনশন, বাড়ির কাজ৷ কাজেই একটা ঘটনা থেকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো এবং তা নিয়ে টেনশন করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়৷ সিবিটি–র উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতিটি বিষয়কে ঘিরে পেসিমিস্টদের ভাবনা–চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করা৷ এবং বিকল্প ভাবনা ভাবতে শেখানো৷ এই পর্যায়ে সামান্য হতাশা বা ডিপ্রেশন আসে কখনও৷ তা সত্ত্বেও চালিয়ে গেলে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন