ছবি : সংগৃহীত।
নিরামিষ শুনলেই মাছ-মাংসপ্রেমী জিভ খাওয়ার উৎসাহ হারায়। অথচ নিরামিষ খাবারে চমকে দেওয়ার মতো সম্ভার নেহাত কম নয়। শুধু বঙ্গদেশেই হরেক রান্নার প্রণালী মজুত। ঘণ্ট, চচ্চড়ি, বাটা, কোফতা— দৈনন্দিন আনাজপাতি দিয়ে কত রকম রান্নাই করা যায়! তাতে পেঁয়াজ-রসুনেরও প্রয়োজন পড়ে না। হালকা মশলাপাতি, অথচ থালায় তারা একাই একশো। তেমনই এক খাবার হল বাঁধাকপির শুভ্রানী।
নাম শুনে মনে হবে ঠাকুরবাড়ির রান্না হয়তো বা। কিন্তু এ রান্নার তেমন কোনও ইতিহাস জানা যায় না। খুব বেশি পরিচিত তা-ও নয়। অথচ এক বার চোখের সামনে দেখলে মনে হবে, এ রান্না এক বার অন্তত চাখতেই হবে। দুধসাদা ক্রিমে মাখো-মাখো বাঁধাকপির ঝাল-মিষ্টি স্বাদ। অদ্ভুত বিষয় হল, বঙ্গে এ রান্নার ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট না হলেও বিদেশে খানিকটা একই ধরনের রেসিপি জনপ্রিয়। তার নাম ‘ক্রিম ক্যাবেজ’।
ক্রিম ক্যাবেজ রান্নাটি জনপ্রিয় হয়েছিল ১৯৩০ সাল নাগাদ। সেই সময় গোটা বিশ্বে মন্বন্তর পরিস্থিতি। বেকারত্ব, দারিদ্র, অনাহার চলছে। সকলেই চেষ্টা করছেন টাকা বাঁচিয়ে রাখতে। সেই ভাবনা থেকেই দৈনন্দিন খরচে রাশ টানা। মুদির দোকানের খরচ কমানো। বাঁধাকপির মতো সব্জিকে দুধ বা ঘন ক্রিমে মাখিয়ে পেঁয়াজ-রসুন-গোলমরিচ দিয়ে খাওয়ার চল সেই সময় থেকেই। কারণ ফাইবারে সমৃদ্ধ বাঁধাকপি যেমন পেট ভর্তি রাখত অনেক ক্ষণ, তেমনই যে কোনও কিছুর সঙ্গে খাওয়াও যেত। ক্রিম ক্যাবেজের উৎপত্তি এব জনপ্রিয়তা সেই সময় থেকেই। পরবর্তী কালে সেই রান্নাই কোনও ভাবে বিদেশিদের হাত ধরে ভারতে এসেছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত অজানাই। তবে উৎপত্তি যেমনই হোক, স্বাদবদলে বাঁধাকপির শুভ্রানীর জবাব নেই। চেনা সব্জির অচেনা এই রান্না কী ভাবে বানাবেন দেখ নিন।
ছবি: সংগৃহীত।
উপকরণ:
১টি বাঁধাকপি (সবুজ পাতাগুলো বাদ দিয়ে জিরিজিরি করে কেটে নেওয়া)
১/২ কাপ কড়াইশুঁটি
১-২টি কাঁচালঙ্কা
১/২ কাপ নারকেল কোরা
১ টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ
১ চা-চামচ ময়দা
২টি ছোট এলাচ
৩-৪টি লবঙ্গ (মাথার ফুল গুলো বাদ দিয়ে নিতে হবে)
১ গাঁট দারচিনি
২টি তেজপাতা
১/২ চা-চামচ কালো জিরে
২ চা-চামচ সাদা তেল
১ চা-চামচ ঘি
স্বাদমতো নুন
স্বাদমতো চিনি
ছবি: সংগৃহীত।
প্রণালী:
কুচোনো বাঁধাকপিতে সামান্য নুন দিয়ে হাতে করে মাখিয়ে ঢাকা দিয়ে রেখে দিন, যাতে বাঁধাকপি থেকে জল বেরিয়ে যায় এবং পাতাগুলো নরম হয়ে যায়।
কোরানো নারকেলে এক কাপ উষ্ণ জল ঢেলে কিছু ক্ষণ রেখে দিয়ে তার পরে তা হাতে করে চেপে বা একটি কাপড়ে ছেঁকে নারকেলের দুধ বের করে নিন। নারকেলের দুধ বার করা হয়ে গেলে তাতে গুঁড়োদুধ এবং ময়দা ভাল ভাবে মিশিয়ে নিন।
কড়ায় সাদা তেল এবং ঘি দিয়ে তাতে তেজপাতা ছিঁড়ে দিন। এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি থেঁতো করে দিয়ে, কালো জিরে দিন, কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করার পরে সুগন্ধ বেরোলে ওর মধ্যে দিয়ে দিন নুন দিয়ে মেখে রাখা বাঁধাকপি (দেওয়ার সময় হাতে করে চেপে জল ঝরিয়ে নেবেন) এবং কড়াইশুঁটি।
আঁচ কমিয়ে বাঁধাকপিটা ভাজতে হবে, তবে রং ধরতে দেওয়া যাবে না। তরকারির নাম যে হেতু শুভ্রানী, তাই সাদা রং বজায় রাখতে হবে। বাঁধাকপি ভাজা হলে তাতে দিয়ে দিন আগে থেকে তৈরি করে রাখা নারকেলের দুধের মিশ্রণ এবং চিনি। এই পর্যায়ে নুনও চেখে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে এই সময়েই নুন দিয়ে নিতে হবে। নারকেলের দুধ দিয়ে বাঁধাকপি ভাল ভাবে মাখিয়ে ওর মধ্যে দিয়ে দিন দু’টি চেরা কাঁচা লঙ্কা। এর পরে ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিন।
মিনিট দুয়েক পরে নাড়াচাড়া করে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিতে হবে। এ ভাবে বেশ কয়েক বার নাড়াচাড়া করার পরে যখন দেখবেন তরকরি থেকে তেল ছেড়ে আসছে, তখন আরও এক বার নাড়াচাড়া করে আঁচ বন্ধ করে মিনিট দুয়েক রেখে তার পরে নামিয়ে নিন।
বাঁধাকপির শুভ্রানী রুটি-লুচি-পরোটার সঙ্গেই খেতে বেশি ভাল লাগবে।