বিশ্বকাপ জেতার পর ট্রফি হাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।
ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। এই জয়ের নেপথ্যে রয়েছে দলগত খেলা। একক দক্ষতার উপর ভরসা না করে একটি দল হিসাবে খেলেছেন হরমনপ্রীত কৌরেরা। তার মধ্যেই কেউ অনেক রান করেছেন বা উইকেট নিয়েছেন। কারও বিশ্বকাপ আবার ততটা ভাল যায়নি। আবার কেউ সুযোগই পাননি প্রথম একাদশে। এ বারের বিশ্বকাপে মোট ন’টি ম্যাচ খেলেছে ভারত। এই ন’টি ম্যাচের নিরিখে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ১০-এর মধ্যে নম্বর দিয়েছে আনন্দবাজার ডট কম। উল্লেখ্য, খেলায় সব সময় উন্নতির জায়গা থাকে। সেই কারণে কাউকে ১০-এর মধ্যে ১০ দেওয়া হয়নি। কে বেশি নম্বর পেলেন? কার ভাগ্যে জুটল কম নম্বর?
ভারতীয় ক্রিকেটারদের মার্কশিট:
শেফালি বর্মা (৯)— বিশ্বকাপে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলেছেন। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। দলের বাইরে ছিলেন। প্রতিকা রাওয়াল চোট পাওয়ায় হঠাৎ দলে যোগ দিতে হয়। কোনও প্রস্তুতি ছাড়া ভাল খেলা কঠিন। শেফালি সেটাই করে দেখিয়েছেন। ফাইনালে ৮৭ রান করেছেন। পাশাপাশি ২ উইকেটও নিয়েছেন। দলকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। শুধুমাত্র ফাইনালের পারফরম্যান্সের জন্য সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন তিনি।
স্মৃতি মন্ধানা (৮)— বিশ্বকাপে ৪৩৪ রান করেছেন। দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাঁর। কিন্তু সেমিফাইনালে বড় রান পাননি। ফাইনালেও অর্ধশতরান হাতছাড়া হয়েছে। শেষ দুই ম্যাচে বড় রান না পাওয়ায় নম্বর কাটা গিয়েছে মন্ধানার।
প্রতিকা রাওয়াল (৮)— ৩০৮ রান করেছেন। বিশ্বকাপে চতুর্থ সর্বাধিক রান তাঁর। কিন্তু চোট পেয়ে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলতে পারেননি। চোট পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু যদি শেফালি তাঁর অভাব না মেটাতেন, তা হলে সমস্যা হত ভারতের। তাই প্রতিকারও নম্বর কাটা গিয়েছে।
জেমাইমা রদ্রিগেজ় (৯)— বিশ্বকাপে ২৯২ রান করেছেন। শুরুতে ভাল না খেললেও নিউ জ়িল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান করেছেন। বিশেষ করে সেমিফাইনালে তাঁর ১২৭ রানে ভর করে জিতেছে ভারত। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইনিংসের কারণে শেফালির মতো জেমাইমাও সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন।
হরমনপ্রীত কৌর (৮)— ব্যাট হাতে ২৬০ রান করেছেন ভারত অধিনায়ক। সেমিফাইনালে জেমাইমার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৮৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু ফাইনালে তাঁর অধিনায়কত্ব মুগ্ধ করেছে। যদিও বিশ্বকাপের বেশ কিছু ম্যাচে তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। তাই নম্বর কাটা গিয়েছে অধিনায়কের।
দীপ্তি শর্মা (৯)— বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে করেছেন ২১৫ রান। তার মধ্যে ফাইনালে এসেছে মূল্যবান অর্ধশতরান। বল হাতে নিয়েছেন ২২ উইকেট, যা চলতি বিশ্বকাপে সর্বাধিক। ফাইনালে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাটে-বলে দীপ্তির এই পারফরম্যান্স তাঁকে সবচেয়ে বেশি নম্বর দিতে বাধ্য করেছে।
রিচা ঘোষ (৮)— চলতি বিশ্বকাপ ২৩৫ রান করেছেন বাংলার মেয়ে। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯৪ রান করেছিলেন। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ঝোড়ো ইনিংস। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর স্ট্রাইক রেট। চলতি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট (১৩৩.৫২) তাঁর। তার পরেও রিচার নম্বর কাটা গিয়েছে। উইকেটের পিছনে বেশ কয়েকটি ক্যাচ ফেলেছেন তিনি। রিভিউয়ের ক্ষেত্রেও অনেকগুলি ভুল করেছেন শিলিগুড়ির মেয়ে।
আমনজ্যোৎ কৌর (৭)— ১৪৬ রান করেছেন। ৬ উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বকাপ মাঝারি গিয়েছে আমনজ্যোতের। কিন্তু প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করা তাঁর অর্ধশতরান দলকে জিতিয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর করা রান আউট ও লরা উলভার্টের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচের জন্য নম্বর পেয়েছেন তিনি।
রাধা যাদব (৪)— বিশ্বকাপে যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন, বিশেষ কিছু করতে পারেননি। তিনটি ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ফাইনালে খারাপ বল করেছেন রাধা। তাই নম্বর কাটা গিয়েছে। তবে ফিল্ডিং ভাল করেছেন তিনি।
ক্রান্তি গৌড় (৭)— নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমে নজর কেড়েছেন ক্রান্তি। ৯ উইকেট নিয়েছেন। সেমিফাইনালে অ্যালিসা হিলির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট গিয়েছে তাঁর দখলে। কিন্তু ফাইনালে খুব একটা ভাল বল করতে পারেননি। তিন ওভারের বেশি তাঁকে বল দিতে পারেননি হরমনপ্রীত। তাই নম্বর কাটা গিয়েছে।
শ্রী চরণী (৮)— প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমে ভাল বল করেছেন শ্রী চরণী। ১৪ উইকেট নিয়ে ভারতের দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ফাইনালেও ভাল বল করেছেন শী চরণী। তাই ভাল নম্বরও পেয়েছেন তিনি।
রেণুকা সিংহ ঠাকুর (৬)— ভাল বল করলেও উইকেট কম পেয়েছেন রেণুকা। মাত্র ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর বলে হাত খুলতে পারেননি ব্যাটারেরা। ওভার প্রতি রান কম দেওয়ায় নম্বর পেয়েছেন রেণুকা। উল্টো দিকে তাঁর ফিল্ডিংয়ের কারণে নম্বর কাটা গিয়েছে।
স্নেহ রানা (৫)— বিশ্বকাপে ছ’টি ম্যাচ খেলেছেন। ৭ উইকেট নিয়েছেন। শেষ তিনটি ম্যাচে প্রথম একাদশের বাইরে বসতে হয়েছে তাঁকে। ফিল্ডিংও খারাপ হয়েছে তাঁর। তাই নম্বর কাটা গিয়েছে এই স্পিনারের।
হরলীন দেওল (৫)— হরলীন বিশ্বকাপে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। শুরুর দিকে তিন নম্বরেই নামছিলেন। ১৬৯ রান করলেও তাঁর স্ট্রাইক রেট খুব কম। ফলে ভুগতে হয়েছে ভারতকে। সেই কারণে, শেষ দিকে জায়গা হারিয়েছেন হরলীন। তাই নম্বর কাটা গিয়েছে তাঁর।
উমা ছেত্রী (খেলার সুযোগ পাননি)— বাংলাদেশ ম্যাচে দলে ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা ভেস্তে যায়। তেমন কিছু করার সুযোগ পাননি উমা। ফলে তাঁকে নম্বর দেওয়া যাচ্ছে না।
অরুন্ধতী রেড্ডি (খেলার সুযোগ পাননি)— ভারতের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি একটিও ম্যাচ খেলেননি। সুযোগ না পাওয়ায় তাঁকেও নম্বর দেওয়া যাচ্ছে না।