ছবি: এক্স থেকে নেওয়া।
সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিককে কলার ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে অফিসের বাইরে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা! মুখে একের পর এক লাথি। মাটিতে শুইয়ে মার। সোমবার ওড়িশার ভুবনেশ্বর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি) অফিসে দেখা গেল এমনই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। সেই ঘটনার একটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিয়োটিকে কেন্দ্র করে হইচই পড়েছে। ওড়িশার ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে একযোগে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। যদিও ভাইরাল সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার সকালে বিএমসি অফিসে ঢুকে পড়েন একদল যুবক। বিএমসির অতিরিক্ত কমিশনার রত্নাকর সাহুকে অফিস থেকে টেনে বার করে আনেন তাঁরা। কলার ধরে হিড়হিড় করে টেনে অফিসের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এর পর মাটিতে শুইয়ে ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বার বার ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন রত্নাকর। কিন্তু তাঁর আবেদনে সাড়া না দিয়ে চলতে থাকে মারধর। বিএমসির অতিরিক্ত কমিশনারের মুখে একের পর এক লাথিও মারা হয়। সেই ভিডিয়োই প্রকাশ্যে এসেছে।
রত্নাকরের অভিযোগ, অফিসে জনগণের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছিলেন তিনি। তখনই কয়েক জন যুবক তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েন। বিজেপি নেতা জগন্নাথ প্রধান ওরফে ‘জগভাই’-এর সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন, এই অজুহাতে তাঁকে মারধর শুরু করে যুবকের দল। মারধরের পর তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন বিএমসি কর্তা। রত্নাকরের কথায়, ‘‘আমি যখন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জনগণের অভিযোগ শুনছিলাম, তখন বিএমসি কর্পোরেটর জীবন রাউত-সহ পাঁচ-ছ’জন আমার চেম্বারে ঢুকে পড়ে। চেম্বারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কর্পোরেটর আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি জগভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি কি না। কিন্তু আমি যখন তা জানাতে রাজি হইনি, তখন ওরা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং মারধর করে। আমায় অফিস থেকে টেনে বার করে, মারধর করে এবং জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করা হয়।’’
প্রহৃত ওই বিএমসি কর্তা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জীবন রাউত, রশ্মি মহাপাত্র এবং দেবাশিস প্রধান নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। বিএমসির মেয়র সুলোচনা দাস ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়েরের দাবি করেছেন।
অন্য দিকে, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্তার মারধরের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী বিজু জনতা দল (বিজেডি)। বিএমসির কর্মীরাও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। ওড়িশার রাজধানী শহরের ব্যস্ততম পথ অবরোধ করে প্রতিবাদ দেখান তাঁরা। বিএমসি কর্তার উপর হামলার প্রতিবাদে ওড়িশা প্রশাসন পরিষেবা সমিতি মঙ্গলবার থেকে ‘গণ ছুটি’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঘটনার নিন্দা করে বিএমসি কর্তার উপর আক্রমণকে ‘নৃশংস’ তকমা দিয়েছেন বিজেডি-প্রধান তথা ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝির উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে পট্টনায়েক লিখেছেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখে আমি হতবাক। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন ঊর্ধ্বতন কর্তা, বিএমসির অতিরিক্ত কমিশনার রত্নাকর সাহুকে তাঁর অফিস থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একজন বিজেপি কর্পোরেটরের সামনে নির্মম ভাবে লাথি মারা হয়। ঘটনার নিন্দা করছি।’’