Honey

জঙ্গলে না ঢুকেও মধুর ব্যবসায় লাভের মুখ

এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকার কারণেই জঙ্গলের উপরে বেশির ভাগ সময়েই নির্ভর করতে হয় সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষজনকে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:০০
Share:

মৌমাছি-পালন: সুন্দরবনে। নিজস্ব চিত্র

সুন্দরবনের মধু এ বার মিলবে জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটে। পাশাপাশি কলকাতার শপিং মলেও তা পাওয়া যাবে। বনদফতরের উদ্যোগে ‘বনফুল’ নাম দিয়ে সুন্দরবনের এই মধু বাজারজাত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। দ্রুত জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটে এই ‘বনফুল’ মিলবে বলে জানাচ্ছে বন দফতর।

Advertisement

এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকার কারণেই জঙ্গলের উপরে বেশির ভাগ সময়েই নির্ভর করতে হয় সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষজনকে। মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে প্রায়ই বিপদ ঘটে। বেশি বিপদ ঘটে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে। কারণ, মধু সংগ্রহের জন্য মৌচাকের খোঁজে জঙ্গলের অনেকটা গভীরে প্রবেশ করতে হয় মউলেদের। সরকারি ভাবে বছরের নির্দিষ্ট সময় মাত্র মাসখানেকের জন্য সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও পেটের তাগিদে বন দফতরের নজরদারি এড়িয়ে বেআইনি ভাবে মধু সংগ্রহের জন্য জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করেন মউলেরা।

এই সব মানুষদের জঙ্গল নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা বেশ কিছু দিন ধরেই করছেন বন দফতরের আধিকারিকেরা। মধু সংগ্রহ করতে যাতে জঙ্গলে প্রবেশ করতে না হয়, সে জন্যই জঙ্গল-লাগোয়া গ্রামগুলিতে মৌমাছি প্রতিপালন করে মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা করে বনদফতর। ২৪ পরগনা বনবিভাগের উদ্যোগে প্রথম ৭২ জনকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের উৎপাদিত মধুই সংশোধিত হয়ে বাজারজাত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে সরকারি সমস্ত নিয়ম মেনে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে ‘বনফুল’। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগীয় বনদফতরের ডিএফও সন্তোসা জি আর বলেন, ‘‘বাঘে-মানুষে সংঘাত কমাতেই আমরা মৌমাছি প্রতিপালনে উদ্যোগী হই। আমাদের ডিভিশনে ইতিমধ্যেই ৭২ জন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা লাভের মুখও দেখতে শুরু করেছেন। এই ভাবে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানুষকে জঙ্গল থেকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তেমনই, সুন্দরবনের বন্য মধু যাতে মধুপ্রেমীরা বাড়িতে বসেই পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”

Advertisement

বন দফতর সূত্রে খবর, জঙ্গলে মৌচাক থেকে যে মধু সংগ্রহ হত, সেই মধু বনদফতরকে বিক্রি করে কেজি প্রতি ১০০ টাকা দাম পেতেন মউলেরা। তবে এ বার ই-কমার্সের মাধ্যমে যে মধু বিক্রি হবে, সে জন্য কেজি প্রতি ৬০০ টাকা করে দাম পাবেন তাঁরা। লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন মৌমাছি প্রতিপালনে। ফলে জঙ্গল নির্ভরতা কমার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরও এই মধু কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর। আরও বিভিন্ন উপায়ে এই মধু ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ২৪ পরগনা বন বিভাগ।

মৌমাছি প্রতিপালনের মাধ্যমে এলাকার মানুষজনকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ এ বছরের শুরুতেই শুরু করে বন দফতর। জয়নগর নিমপীঠ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞেরা নিজেরাই এলাকায় গিয়ে এই প্রশিক্ষণ দেন আগ্রহী গ্রামবাসীদের। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগীয় বনদফতর, দু’টি এলাকাতেই প্রশিক্ষণ চলে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগই এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত মধুকে বাজারজাত করার জন্য প্রাথমিক ভাবে উদ্যোগী হয়েছে। এ বছর বনি ক্যাম্প, কলস দ্বীপ, ঝড়খালি ও চুলকাটি এলাকায় মৌমাছি প্রতিপালন হয়েছে। তবে আগামী মরসুমে লোথিয়ান, ধনচি-সহ অন্যান্য এলাকাতেও মৌমাছি প্রতিপালন করে মধু সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে বন দফতরের। মৌমাছি প্রতিপালন করে মধু সংগ্রহ করা ঝড়খালির বাসিন্দা প্রণব সর্দার, নিরাঞ্জন মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এ ভাবে মধু সংগ্রহ করে আমরা ভাল লাভের মুখ দেখেছি। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আর জঙ্গলে যেতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন