Bhabanipur & CM Mamata Banerjee

ভবানীপুরে ৪৫ হাজার ভোটার বাদ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্ক্রুটিনি করতে বিএলএ-দের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

মঙ্গলবার নবান্ন থেকে কালীঘাটের বাসভবনে ফিরে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার তৃণমূলের বিএলএ-দের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:২৩
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে বড়সড় গরমিল সামনে আসতেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ৪৫ হাজার ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ার তথ্য সামনে আসতেই অবিলম্বে তৃণমূলের বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ)-দের নতুন করে ‘স্ক্রুটিনি’ বা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে কালীঘাটের বাসভবনে ফিরে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার তৃণমূলের বিএলএ-দের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। মেসিকে ঘিরে যুবভারতীতে অশান্তির ঘটনার পরেও যে তাঁর নজর নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) থেকে সরেনি, বৈঠকে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন উপস্থিত নেতা-কর্মীদের।

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬ হাজার ২৯৫। কিন্তু ডিজিটাইজড বা ভেরিফায়েড তালিকায় রয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০৯ জনের নাম। অর্থাৎ প্রায় ৪৪ হাজার ৭৮৬ জন ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, যা মোট ভোটারের প্রায় ২১.৭১ শতাংশ। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, বাদ পড়া নামের একটি বড় অংশে ভোটারদের ‘মৃত’ বলে উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন। এই তথ্য শুনে মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৭ এবং ৮২ ওয়ার্ড নিয়ে ভবানীপুর বিধানসভা। তৃণমূল সূত্রে খবর, ৭০,৭২ এবং ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বেশি সংখ্যায় ভোটার বাদ গিয়েছে। ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডটি আবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত, তাই এই ওয়ার্ডটির স্ক্রুটিনিতে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বুথ থেকেই একাধিক জীবিত ভোটারের নামের পাশে ‘মৃত’ দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে জীবিত মানুষদের মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বৈধ ভোটারদের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে? এরপরেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি বাদ পড়া নাম খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিএলএ-দের একাংশ বৈঠকে দাবি করেন, তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দিয়েছেন, কিন্তু অনেক ভোটার ফর্ম পূরণ করে ফেরত দেননি। ফলে তাঁদের বর্তমান অবস্থান বা ঠিকানায় থাকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যদিও এই যুক্তি পুরোপুরি মেনে নেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশ, কোনও অজুহাত নয়—প্রত্যেক বাদ পড়া ভোটারের বাড়িতে আবার যেতে হবে এবং সরেজমিনে যাচাই করতে হবে।

ভবানীপুরে বাঙালিদের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ওড়িশার বাসিন্দাদেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম রেখে ভবানীপুরের তালিকা থেকে নাম সরিয়েছেন বলে কমিশনের দাবি। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তার আড়ালে যেন কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ না যায়। বিশেষ করে বহুতল আবাসনগুলিতে বেশি নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সামনেই ভোটার তালিকা সংশোধনের শুনানি শুরু হবে। সেই প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, পাড়ায় পাড়ায় ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প চালু রাখতে হবে। যাদের কাগজপত্রে সমস্যা বা ফর্ম পূরণে অসুবিধা হচ্ছে, তাদের হাতেকলমে সাহায্য করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি গিয়েও সহায়তা করার নির্দেশ দেন তিনি।

এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, কলকাতার মেয়র ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট ফিরহাদ হাকিম, দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার-সহ একাধিক কাউন্সিলর ও দলের শীর্ষ নেতারা। বিএলএ-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখার কাজ করলেও, তাতে দলের শীর্ষ নেতাদের নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন ভবানীপুরের বিধায়ক মমতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement