দু’টাকায় চাল, তালিকায় অর্ধেক শহরই!

কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ। যার প্রায় ৫০ শতাংশ বাসিন্দার জন্য দু’টাকা কেজি দরে চাল ও গম নেওয়ার কার্ড করেছে পুর প্রশাসন। অর্থাৎ, এ শহরের অর্ধেক বাসিন্দাই দু’টাকা কেজির চাল ও গম পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করছেন পুরসভার কর্তারা!

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৬
Share:

কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ। যার প্রায় ৫০ শতাংশ বাসিন্দার জন্য দু’টাকা কেজি দরে চাল ও গম নেওয়ার কার্ড করেছে পুর প্রশাসন। অর্থাৎ, এ শহরের অর্ধেক বাসিন্দাই দু’টাকা কেজির চাল ও গম পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করছেন পুরসভার কর্তারা!

Advertisement

দেশের ‘এ ওয়ান’ শহরগুলির তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে কলকাতা। যে শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের জন্য সরকারি ভর্তুকির চাল ও গম বরাদ্দ হচ্ছে, সেই শহরের ‘এ ওয়ান’ তকমা কতটা যুক্তিযুক্ত? এ সব নিয়ে তোলপাড় পুর মহল। পুরসভা সূত্রে আরও খবর, এখনও কার্ড নথিভুক্তির কাজ চলছে। তাই সংখ্যাটা কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে অস্বস্তিতে পুর কর্তাদের একাংশ। এ ব্যাপারে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে সমাজের বিশেষ শ্রেণির আর্থিক অসুবিধার কথা ভেবেই ওই প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছে, অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (এএওয়াই), বিশেষ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (এসপিএইচএইচ), অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (পিএইচএইচ) বাসিন্দারা তিন টাকা কেজি দরে চাল এবং দু’টাকা কেজি দরে গম পাবেন। এর জন্য প্রতিটি রাজ্যে ওই খাতে অর্থ বরাদ্দও করছে কেন্দ্রীয় সরকার। খাদ্যমন্ত্রক সূত্রের খবর, মূলত আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষের জন্যই ওই প্রকল্প। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত তিন টাকার পরিবর্তে চালের দর দু’টাকা করেছে। অর্থাৎ, প্রতি কেজি চালে বাড়তি এক টাকা করে আলাদা ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় ওই প্রকল্পের বাইরেও রাজ্য সরকার রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১ এবং ২ নামে পৃথক দু’টি প্রকল্প চালু করেছে। যার মধ্যে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ১ (আরকেএসওয়াই) তালিকাভুক্ত মানুষ দু’টাকা কেজি দরে চাল ও গম পাবেন। আর যোজনা ২ (আরকেএসওয়াই) তালিকাভুক্ত মানুষকে ১৩ টাকা কেজি দরে চাল এবং ৯ টাকা কেজি দরে গম দেওয়া হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাবা-ছেলেকে দেড় বছর পর মেলাল এক্সপায়ার্ড চকোলেট

এখন দেখা যাচ্ছে, দু’টাকা কেজি দরে চাল এবং গম পাওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তিনটি এবং রাজ্যের একটি, মোট চারটি প্রকল্পে কলকাতা শহরে কার্ড করা হয়েছে ২১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭৭৫ জনের। গত জনগণনা অনুসারে কলকাতাবাসীর সংখ্যা ৪৫ লক্ষের কাছাকাছি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, শহরে ওই প্রকল্পের কার্ড নেওয়ার এত লোক বাস্তবে রয়েছে কি? কী ভাবেই বা এত কার্ড করা হল?

পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, কার্ড করার পদ্ধতিতেই গলদ ছিল। কারা ওই প্রকল্পের আওতায় আসবেন, তা যাচাইয়ের কাজ নিয়ম মেনে হয়নি। খাদ্যসাথীর ডিজিটাল কার্ড এত দ্রুত করতে হয়েছে যে, কারা তা পাওয়ার যোগ্য তা বাছা হয়নি। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই ধরনের কার্ড করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যাঁদের, তাঁরা তা হলে কী করেছেন? পুর মহলে গুঞ্জন, পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করতে গিয়ে দেদার নাম ঢোকানো হয়েছে খাদ্যসাথীর তালিকায়। অভিযোগ উঠেছে, শাসক দলের অনেক নেতা, কাউন্সিলরের লোকজন ভোটের রাজনীতির কথা ভেবে এমনটা করেছেন। সেই সংখ্যা এখন এতটা বেড়ে যাওয়াতেই টনক নড়েছে পুর কর্তাদের। এখন তাঁদের চিন্তা, ‘এ ওয়ান’ শহর হিসেবে কলকাতা যে সুযোগ-সুবিধা ও অর্থ বরাদ্দ পায়, তা বহাল থাকবে তো!

কারা ওই কার্ড পাওয়ার যোগ্য?

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে, যে সব পরিবার আর্থ সামাজিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে, তারাই ওই কার্ড পেতে পারে। তবে, তার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলি পূরণ হলে তবেই ওই কার্ড পাওয়া যাবে। পুরসভার এক পদস্থ অফিসারের কথায়, সেই মাপকাঠি ধরলে ২১ লক্ষের তালিকা যে নিয়ম মেনে হয়নি, তা পরিষ্কার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন