পাকিস্তানি হামলায় বিধ্বস্ত বালোচিস্তান। ছবি: সংগৃহীত।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং পড়শি দেশ আফগানিস্তানের পরে এ বার বালোচিস্তানে বিমান হামলার অভিযোগ উঠল পাকিস্তানি ফৌজের বিরুদ্ধে। বালোচিস্তানের আত্মনিয়ন্ত্রণের সমর্থক সংগঠন ‘বালোচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট’ (বিএনএম)-এর মানবাধিকার শাখা ‘পঙ্খ’ অভিযোগ করেছে, ওই প্রদেশের রাজধানী কোয়েটার অদূরে চিল্টন পাহাড়ের জনবসতিতে বিমানহানায় ন’জন যুবক গুরুতর জখম হয়েছেন।
বালোচ মানবাধিকার সংগঠনটির তরফে শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার কমিশনের কাছে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। পাক বিমানহানায় জখন বালোচ যুবকদের তালিকাও শুক্রবার প্রকাশ করেছে তারা। জানিয়েছে, চিল্টন পাহাড়ে পিকনিক করতে গিয়ে পাক যুদ্ধবিমানের নিশানা হয়েছেন স্থানীয় ওই যুবকেরা। ‘পঙ্খে’র অভিযোগ, পাকিস্তানের সেনা এবং প্রশাসন ঘটনাটি আড়াল করার জন্য সক্রিয়।
প্রসঙ্গত, সাত দশক আগে পাকিস্তানি সেনা বালোচিস্তান দখল করেছিল । অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তৎকালীন শাসককে বাধ্য করেছিল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে। বালোচিস্তানের পরবর্তী ইতিহাস ফের নতুন স্বাধীনতার যুদ্ধের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর কয়েক হাজার মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার। পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালোচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবেও সবচেয়ে সম্পদশালী। ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে ভূমিপুত্রদের হাত থেকে। ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) তৈরির পরে গত কয়েক বছরে সেই লুট আরও বেড়েছে। পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া ওই রাস্তা কারাকোরাম পেরিয়ে ঢুকেছে পাকিস্তানে। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দরে।
ওই রাস্তা ব্যবহার করেই ইসলামাবাদ এবং বেজিঙের শাসকেরা বালোচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে বলে ‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ (বিএনএ), ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)-র মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ। এমনকি, সম্প্রতি গ্বদর উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরাও চিনাদের আপত্তিতে বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।‘বালোচিস্তানের গান্ধী’ বলে পরিচিত মানবাধিকার নেতা আব্দুল কাদির বালোচ বছর কয়েক আগে দিল্লি এসে জানিয়েছিলেন, তাঁরা চান ১৯৭১-এ ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে ভাবেই পাশে দাঁড়াক বালোচিস্তানের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বালোচিস্তানের উপর ইসলামাবাদের নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি।