Thailand-Cambodia Clash

‘কূটনীতির অধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছে’, ঘোষণা তাইল্যান্ডের! কম্বোডিয়ায় ঢুকে পড়ে অভিযান শুরু করল সেনা

সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দুই সেনার গুরুতর আহত হওয়ার পরেই গত ১০ নভেম্বর পড়শি দেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি মুলতুবি রাখার কথা ঘোষণা করেছিল তাইল্যান্ড। সোমবার হয় বিমানহামলা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৪
Share:

সীমান্তে সংঘর্ষে তাইল্যান্ড সেনা। ছবি: রয়টার্স।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর সীমান্তবিরোধ ঘিরে এ বার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের বার্তা। বিমান হামলার পরে এ বার সরাসরি কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠল তাইল্যান্ড সেনার বিরুদ্ধে। যদিও ব্যাঙ্ককের দাবি, তাদের উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাতের অন্দরে কম্বোডিয়ার বাহিনীর উপস্থিতি নজরে আসার পরে তাদের হটিয়ে দিতে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে।

Advertisement

সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই দু’তরফের বেশ কয়েক জন সেনা নিহত হয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি থেকে দু’দেশেরই কয়েক হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। তাইল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী শিহাসাক ফুয়াংকেটকিও মঙ্গলবার সংঘর্ষবিরতির সম্ভাবনা নাকচ করে বলেন, ‘‘কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন করে সংঘাতের ক্ষেত্রে কূটনীতির আর কোনও ঠাঁই নেই। অন্য দিকে, কম্বোডিয়ার পার্লামেন্ট সেনেটের প্রধান হুন সেন মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমরা সর্বশক্তি দিয়ে তাইল্যান্ডের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালাব।’’

মিয়াঞ্চে প্রদেশে তাইল্যান্ড সেনার আক্রমণে একবিংশ শতকে নির্মিত পারসাত তা ক্রাবে মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে কম্বোডিয়ার তরফে মঙ্গলবার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাইল্যান্ড জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার গোলান্দাজ বাহিনীর হামলার জেরে ঘরছাড়াদের ঠাঁই দিতে ৫০টি আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছে। তাইল্যান্ড মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা আগ্রাসন শুরু করেনি, বরং এই পরিস্থিতিতে দেশ আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। সামরিক বাহিনীকে সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত পদক্ষেপ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, কম্বোডিয়া সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি (ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল্‌) মোতায়েন করেছে তাইল্যান্ড।

Advertisement

সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দুই সেনার গুরুতর আহত হওয়ার পরেই গত ১০ নভেম্বর পড়শি দেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি মুলতুবি রাখার কথা ঘোষণা করেছিল তাইল্যান্ড। তখন থেকেই নতুন করে সংঘাতের জল্পনা ছড়াতে শুরু করেছিল। এই আবহে সোমবার সকালে তাইল্যান্ড সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল উইনথাই সুবারি জানান, ভোরবেলা কম্বোডিয়ার হানায় তাঁদের এক সেনার মৃত্যু হয়েছে। আহত সাত জন। তাইল্যান্ডের অনুপং সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে মর্টার ছুড়েছে কম্বোডিয়া ফৌজ। তার পরেই কম্বোডিয়ার সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

যদিও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র মালি সোচিয়াতা সেই অভিযোগ খারিজ করে তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে একতরফা ভাবে বিমানহানার অভিযোগ তুলেছেন। গত ২৬ অক্টোবর মালয়েশিয়া আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে তাইল্যাল্ড এবং কম্বোডিয়া স্থায়ী সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছিল। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে শান্তিচুক্তিতে সই করিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘এই দিনটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সকল মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’’ কিন্তু দেড় মাসের মধ্যেই ট্রাম্পের সেই ‘সাফল্যের দাবি’ ফিকে হয়ে গেল।

বিতর্কিত ‘পান্না ত্রিভুজ’-এর দখলদারি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টানাপড়েন চলছে ব্যাঙ্কক-নম পেনের মধ্যে। তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং আর এক পড়শি দেশ লাওসের সীমান্তবর্তী ওই ভূখণ্ডের দখল নিয়ে ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজে) যে রায় দিয়েছিল, তা অনেকটা কম্বোডিয়ার পক্ষেই গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসের শেষপর্বে কম্বোডিয়া সেনা সেখানে শিবির ও পরিখা নির্মাণের তৎপরতা শুরু করার পরে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। জুলাইয়ের গোড়ায় সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া— দুই দেশের সেনাবাহিনী। তাতে দু’তরফেরই বেশ কয়েক জন সেনা ও অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছিলেন। আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়েছিলেন, সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েক হাজার নাগরিক। পাঁচ দিন পরে ট্রাম্পের মধ্যস্থতাতেই হয়েছিল সাময়িক সংঘর্ষবিরতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement