পুজো আসছে! এই সময়ে সবার মনে একটাই চিন্তা– কী ভাবে নিজেকে আরও সুন্দর করে তোলা যায়। নতুন পোশাকে নিজেকে যদি আরও আকর্ষণীয় দেখায়, তবে আনন্দ যে কয়েক গুণ বেড়ে যায়! কিন্তু এখনকার রোজনামচায় ব্যস্ততা আর দেদার খাওয়া-দাওয়া সামাল দিতে গিয়ে ওজন কমানোটা যেন এক অসম্ভব চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ইদানীং ওজন কমানোর অন্যতম উপায় হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং?
কী এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং?
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং মানে খাওয়া-দাওয়ার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে উপোস। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এটি শরীরের বিপাকক্রিয়াকে গতিশীল করে এবং ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ায় যেমন ১৬ ঘণ্টা উপোস, আর ৮ ঘণ্টা খাওয়ার জন্য রাখা যেতে পারে। এর ফলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, চর্বি পোড়ার হার বাড়ে, বিপাকতন্ত্রও একটু বিশ্রাম পায়। তবে এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ জরুরি।
ব্যাপারটা অনেকটা যে রকম– সারা দিনের ব্যস্ততার পরে সন্ধ্যায় যেমন এক কাপ গরম চা মনকে শান্ত করে এনার্জি জোগায়, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংও তেমনই শরীরের ভিতরকার কর্মক্ষমতাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। শরীর যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ধরে খাবার পায় না,, তখন ওই সময়কালে সে জমে থাকা ফ্যাট ভেঙে শক্তি তৈরি করে। ফলে শুধু ওজনই কমে না, মনও সতেজ থাকে। মনকে শান্ত রাখতে ও হজমের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে এই প্রক্রিয়া।
মনে রাখতে হবে, যে কোনও নতুন অভ্যাস শুরু করার আগে যেমন প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি, তেমনই এই উপোস শুরু করার আগেও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, এই প্রক্রিয়া মেনে চলাকালীন পর্যাপ্ত জল পান করা দরকার। এ ছাড়াও, তেল-মশলা ছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হঠাৎ করেই খুব কঠিন সময়সীমা বেছে না নিয়ে ধীরে ধীরে শুরু করা ভাল। এতে শরীর নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় পায়।
তবে, এই পথে হাঁটার আগে কিছু জরুরি বিষয় জেনে নিতেই হবে। যেমন, সবার পক্ষেই কি এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং উপযোগী? ডায়েটিশিয়ান অন্বেষা গুহ-র কথায়, ''ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং মোটেই সবার জন্য নয়। মূলত যাঁদের ক্রনিক কিডনির সমস্যা আছে, তাঁদের এটি একেবারেই করা উচিত নয়। এ ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা বা টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস মেলিটাস-সহ অন্যান্য একাধিক রোগে যাঁরা আক্রান্ত, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং তাঁদের জন্য নয়।''
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে কী কী উপকার পেতে পারেন? অন্বেষা বলেন, ''ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে ওজন তো কমেই, একই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়া এটি কোষকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি লিভারকে টক্সিন-মুক্ত করে, পেটের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় রাখে।'' ফলে চাইলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতেই পারেন, কিন্তু তার আগে অবশ্যই যেন নেওয়া হয় কোনও বিশেষজ্ঞর পরামর্শ।
সব শেষে মনে রাখতে হবে—ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কোনও ম্যাজিক নয়, বরং সঠিক জীবনযাপনের অংশ। পুজোর নতুন পোশাকের মতো নিজের শরীরকেও যত্নে রাখা দরকার, যাতে অষ্টমীর সেলফিতে হাসিটাও বেশ লাগে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।