Advertisement
Durga Puja 2023 Theme

এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের গল্প শুনলে শিউরে উঠতে হয়!

কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো কমিটি। দশ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী মা দুর্গার বেদিতে বসে নিচু স্বরে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে পরবর্তী আক্রমণের ছক কষতেন। এ বারে তাদের পুজোর খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৫১
Share: Save:

সেটা ১৯৩০-এর দশক। বাংলা মায়ের একের পর এক সন্তান স্বাধীনতার লড়াইয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষ তখন উত্তপ্ত।

এ রকম অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ১৯৩৭ সালে অনুশীলন সমিতির কয়েকজন সদস্য, কাশী বোস লেনে দুর্গাপুজো আরম্ভ করেন। স্বভাবতই পুজোর দিকেও বিশেষ নজর ছিল ব্রিটিশ শাসকদের। কিন্তু মায়ের বেদিতে চামড়ার বুট পায়ে ওঠার সাহস ছিল না তাদের পুলিশ বাহিনীরও।

আর শোনা যায়, সেই মোক্ষম সুযোগটাই নিয়েছিলেন ওই অঞ্চলের আত্মগোপনকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। এই যে এখনও প্রতি বছর পাঁচ দিনের জায়গায় মহালয়ার পর দেবীপক্ষ পড়তেই প্রতিপদ থেকে কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো কমিটির পুজো শুরু হয়ে দশ দিনের মাথায় বিজয়া দশমীতে দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন হয়, তার শুরুও ওই গত শতাব্দীর তিরিশ-চল্লিশের দশকে স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা অতীব জরুরি পরিকল্পনা হিসেবে।

এই অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা, বিশেষ করে যাঁরা আত্মগোপন করে থাকতেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ঠিক করেন যে, এই পুজো কমিটি থেকে চারদিকে রটিয়ে দেওয়া হোক, কাশী বোস শেষের দুর্গাপুজো দেবীপক্ষ পড়তেই প্রতিপদ থেকে বিজয়া দশমী, দশ দিনব্যাপি হবে এবং এক জন নয়, এগারো জন পুরোহিত পুজো করবেন রোজ সকাল-সন্ধে, দু’ বেলা। আসলে কিন্তু সেটা একজন ব্রাহ্মণ পুরোহিত করতেন মা দুর্গার সামনে মুখ করে দাঁড়িয়ে বা বসে। সমাগত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের দিকে পিছন করে। বাকি যে দশ জন পুরোহিতকে একই সঙ্গে সেখানে পুজো করতে দেখা যেত, বা বসে পুজোর নানান জোগাড় করতে দেখা যেত প্রায় দিনভর, তাঁরা আসলে ছিলেন ওই অঞ্চলের একেক জন সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁরাও পুরোহিতের পোশাকে, গোঁফদাড়ি লাগিয়ে ছদ্মবেশে মা দুর্গার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতেন এমনভাবে যে, পিছন থেকে তাঁদের মুখ দেখা কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। অত্যাচারী ব্রিটিশ পুলিশের পক্ষেও নয়। সে ক্ষেত্রে তাদের দেবী দুর্গার বেদিতে চামড়ার জুতো সমেত উঠতে হয়! কিন্তু সেই অনুমতি তার পুলিশ বাহিনীকে দেওয়ার সাহস ছিল না ব্রিটিশ শাসকদেরও। সুযোগটাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগিয়ে পুরোহিত সেজে দুর্গাপুজো করার অছিলায় দশ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী মা দুর্গার বেদিতে বসে আদতে নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে পরবর্তী আক্রমণের ছক কষতেন। এমনকি দশ জনের দল প্রয়োজনে পাল্টে ফেলা হত গোপনে। যাতে আরও অনেক বেশি সংখ্যক স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ওই ভাবে পুরোহিত সেজে মায়ের বেদিতে বসে তাঁদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্ল্যান ভাঁজতে পারেন।

সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে কাশী বোস শেষের দুর্গাপুজোয়!

কীভাবে? সেই থেকে এখনও প্রতি বছর এঁদের পুজো প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায়, শুধু তাই নয়, ১১ জন পুরোহিত পুজো করেন। তবে সত্যিকারের ১১ জন ব্রাহ্মণ পুরোহিত। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কোনও জাত-ধর্ম হয় না। তাঁদের সবার একটাই ধর্ম — স্বাধীনতা-যুদ্ধ! ফলে, সেই যুগে পুরোহিতের ছদ্মবেশে এঁদের পুজোর বেদিতে সব ধর্ম-সব জাতের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ছিলেন।

এ বার কাশী বোস লেনের পুজোর থিম 'চাহি না হতে উমা'। যার বার্তা, দেশ জুড়ে, এমনকী পৃথিবী জুড়ে নাবালিকা পাচার প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এই পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সোমেন দত্ত আনন্দবাজার অনলাইন-কে জানাচ্ছেন, বছরে পাঁচ দিন কৈলাস থেকে উমাকে আমরা ফিরিয়ে আনি ধরাধামে, তাঁর বাপের বাড়িতে। তাঁকে বরণ করি, পুজো করি। কিন্তু আমাদেরই ঘরের কত শত উমা বাধ্য হয়ে হারিয়ে যায় চোরাগলির বাঁকে। নাবালিকা পাচারের দুষ্টচক্র এই সব অসহায় মেয়েদের নব্বই শতাংশকেই নানান অসামাজিক কাজে জোর করে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। এঁদের বরণ করে ঘরে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব কে নেবে আজ?

এ সবই গোটা পুজো মন্ডপ জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে কাপড়, চট, পারিবারিক নানা ধরনের সাবেকি জিনিসের সমাহারে এই পুজোয় এবার।

কী ভাবে যাবেন: হাতিবাগানের গা ঘেঁষে বিধান সরণি ধরে হেদুয়ার দিকে আরেকটু এগোলেই ডান হাতে কাশী বোস লেন।

ভাবনা : চাহি না হতে উমা

ভাবনায় : রিন্টু দাস

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Theme Durga Puja Pandal Hopping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE