জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমির দাম না মেটানোয় পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের বাংলো বাজেয়াপ্ত (ক্রোক) করার নির্দেশ দিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) বিশ্বরূপ শেঠ। শুক্রবার বিচারক তাঁর নির্দেশে, বাংলোর ভবন, বাগান ও ফাঁকা জমি বাজেয়াপ্ত করার পরে বাংলোর বাজার দর জানাতে বলেছেন জেলা আদালতের নাজিরকে। বাজেয়াপ্ত করার জন্য কত পুলিশ প্রয়োজন হতে পারে, তার রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলো নিলাম করা সংক্রান্ত বিষয়েও ১৯ জুলাই নাজিরকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বর্ধমানের সরকারি আইনজীবী (জিপি) মুরারিমোহন কুমার বলেন, “সরকারের তরফে হাই কোর্টে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সময় চাওয়া হয়েছে। দু’পক্ষের শুনানি হয়েছে। আদালতের নির্দেশ না দেখে বিস্তারিত বলতে পারব না।”
সূত্রের খবর, জাতীয় সড়ক (দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে) চার লেন করার জন্য ২০০৩ সালে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পশ্চিম বর্ধমানের কাঠপুকুর মৌজায় কলকাতার সরশুনা থানার হো-চি-মিন সরণির বাসিন্দা সুশান্তকুমার গোস্বামীর ০.৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমির মূল্য স্থির হয় ২৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৪০ টাকা। যদিও সরকার সেই টাকা মেটায়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের নানা মহলে দরবার করেন জমির মালিক। টাকা না পেয়ে বাধ্য হয়ে জমির মূল্য বাবদ নির্ধারিত দাম পেতে তিনি ২০১৩ সালে মামলা করেন বর্ধমান আদালতে। আদালত জমির মূল্য বাবদ ৫৪ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকারকে। তার পরেও সরকার প্রাপককে ওই টাকা মেটায়নি।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৫ সালে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন ওই জমির মালিক। সেই থেকে মামলাটি বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে চলছিল। এরই মধ্যে জমির মালিক মারা গেলে তিন উত্তরসূরি, মিতালি গোস্বামী, পার্থসারথি গোস্বামী ও সিদ্ধার্থ গোস্বামী মামলাটি চালিয়ে যান। এ বছরের ১২ এপ্রিল আদালত জমির মূল্য বাবদ মালিককে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৯০ টাকা ১৭ মে-র মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তা-ও মানেনি সরকার।
এ দিনের শুনানির শুরুতে জিপি ১২ এপ্রিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে পুনর্বিবেচনা দাখিল করার জন্য আরও দু’মাস সময় চান। সিদ্ধার্থ আইনজীবী হওয়ায় তিনি নিজেই সওয়াল করেন। সরকার পক্ষের সময় চাওয়া নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি জানান। আইনজীবীদের দাবি, দু’পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, ২০১৫ সাল থেকে মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আগের দিনের শুনানিতেই আর কোনও সময় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানানো হয়েছিল। এরপরে রায় কার্যকর করা নিয়ে সময় দিলে ন্যায় বিচার লঙ্ঘিত হবে। সরকার পক্ষের আবেদন খারিজ করে ৩.০৪ একর জমির উপর তৈরি জেলাশাসকের বাংলো বাজেয়াপ্ত করার নির্দশ দেন বিচারক। সিদ্ধার্থ জানান, সরকার দীর্ঘ দিন ধরে নানা অছিলায় জমির দাম মেটাচ্ছিল না। আইনজীবীর যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বিষয়টি পশ্চিম বর্ধমানের। মামলা স্থানান্তরিত না হওয়ায় আমাদের জেলার উপরে দায় বর্তাচ্ছে। নির্দেশ দেখার পরে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)