সুপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা - দুয়ের মিশেলে ভারতীয় অর্থনীতির যাত্রাপথ চমকপ্রদ। উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে ভারতের বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে দেশের জিডিপি আনুমানিক ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের ৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
আর্থিক বৃদ্ধিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকারি উদ্যোগ:
আর্থিক সমৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ভারত সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রায় এক দশক আগে চালু হওয়া মেক ইন ইন্ডিয়া স্কিম শুরুর দিন থেকেই রীতিমতো ভাল বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) নিয়ে এসেছে। এই উদ্যোগের অন্যতম চালিকাশক্তি হল ১৪টি শিল্পক্ষেত্রে বিস্তৃত প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) স্কিম। এই প্রকল্পের লক্ষ্য সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেন)-কে মজবুত করা, প্রতিযোগিতায় উৎসাহ দেওয়া এবং রফতানির সম্ভাবনাকে ত্বরাণ্বিত করা। যার মাধ্যমে বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ(MSME)-এর পরিসরে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে। এই সমস্ত উদ্যোগের পরিপূরক ‘আত্মনির্ভর ভারত’, যা কোভিড পরবর্তী সময়ে আত্মনির্ভরতায় জোর দিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই প্রকল্প, স্থানীয় উৎপাদনে গুরুত্ব দেয় এবং আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। শক্তি, কয়লা, প্রতিরক্ষা, বিমান পরিবহণ এবং খনন শিল্পে এই কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
যে সব শিল্প অর্থনীতির সহায়ক হবে:
স্বনির্ভর উৎপাদন এবং প্রভাবশালী রফতানির মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:
সফটওয়্যার ও পরিষেবা: বিগত দুই দশক ধরে ভারত আইটি এবং বিপিও পরিষেবার অন্যতম প্রধান রফতানিকারক। স্যাস (SaaS)-সহ অন্যান্য প্রযুক্তি পরিষেবার প্রদানকারী হিসেবেও ভারত সামনের সারিতে উঠে এসেছে। আধার এবং ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI)-সহ ‘ইন্ডিয়া স্ট্যাক’-এর প্রয়োগ ভারতের ইন্টারনেট অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করার নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
ফিনটেক ও ফিন্যান্সিয়াল পরিষেবা: স্মার্ট অ্যাপস এবং ইন্টারনেটের অগ্রগতির ফলে অতিমারি পরবর্তী পর্বে ফিনটেক পরিষেবায় গতি এসেছে। আগামী কয়েক বছরে এই শিল্পক্ষেত্র দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকে চালনা করবে।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি (রিনিউয়েবলস): বলিষ্ঠ নীতি এবং লগ্নিতে ভর করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্র দারুণ বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত জাতীয় হাইড্রোজেন মিশন এবং সৌরশক্তি নিয়ে সংহত উদ্যোগ ভাল পরিমাণে বিদেশি লগ্নি (FDI) নিয়ে আসার সহায়ক হচ্ছে।
পরিকাঠামো: ভারতের শিল্প করিডর উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে ১১টি করিডর রয়েছে। এর মতো কৌশলগত উদ্যোগ ভারতের যোগাযোগ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করছে। ভারতমালা পরিযোজনা এবং সাগরমালা প্রকল্প ভারতের যোগাযোগ এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনছে। এর ফলে ব্যবসা ও বাণিজ্য আরও মসৃণ ও সহজ হয়ে উঠবে।
উৎপাদন: এই সমস্ত কিছুর ফলে ভারতের উৎপাদনক্ষেত্র চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি করেছে। রাসায়নিক, অটোমোবাইল, বস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স এবং ওষুধ তৈরির মতো অনুসারী শিল্প এই শিল্পক্ষেত্রের অন্তর্গত। এই সমস্ত শিল্পই দেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের চালিকাশক্তি।
সরকারের লক্ষ্য দেশের জিডিপি-তে উৎপাদন শিল্পের অবদান বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা, যা ভারতকে বিশ্বের উৎপাদনী প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, অতিমারির আগে, অর্থাৎ ২০১৯ অর্থবর্ষে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩ অর্থবর্ষে সেটাই বেড়ে হয়েছে ৪৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই কৃতিত্ব তারিফযোগ্য।
এই শিল্পক্ষেত্রের চালিকাশক্তি হিসেবে রয়েছে যে সব অনুসারী শিল্প:
- রাসায়নিক: রাসায়নিক উৎপাদনে ভারত বিশ্বের ৬ষ্ঠ স্থানে এবং এশিয়ায় তৃতীয় স্থানাধিকারী। বস্ত্র, পেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অ্যাগ্রোকেমিক্যালস ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপনে এই শিল্পক্ষেত্র মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
- অটোমোবাইল: অটোমোটিভ মিশন প্ল্যানের মতো উদ্যোগে ভর করে এই শিল্পক্ষেত্র চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হতে চলেছে। যার হাত ধরে ২০২৬ সালের মধ্যে ৩২ লক্ষ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ২৫ থেকে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার লগ্নির প্রয়োজন হবে।
- হেলথকেয়ার ও ফার্মা: ভারতকে ‘ফার্মাসি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা হয়। এর কারণ হল, উৎপাদনের পরিমাণের নিরিখে ভারত বিশ্বের তৃতীয় স্থানে। ২০২২ সালে ভারতে তৈরি বায়োটেক পণ্যের সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে ৭০০ হয়েছে।
- প্রতিরক্ষা: ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন পরিকাঠামো রীতিমতো অগ্রগতি করেছে। বর্তমানে ভারত ৭৫-টির বেশি দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি করে।
- ইলেকট্রনিক সিস্টেমস: ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ভারত ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে রফতানির পরিমাণ ৩০০০ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প করেছে।
ভারতের রূপান্তরকামী অর্থনৈতিক উদ্যোগ:
সহায়ক সরকারি নীতি, ভূ-রাজনীতির বিশ্বমঞ্চে ভারতের উত্তরণ, বলিষ্ঠ সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ, দেশীয় চাহিদা, ডিজিটাল উদ্যোগ এবং রফতানির বৃদ্ধি - এই সমস্ত কিছু মিশেলে যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতে এটাই ভারতে বিনিয়োগ করার সেরা সময়।
ভারতের অগ্রগতির এই কাহিনি অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং দূরদর্শী শাসন ব্যবস্থার জীবন্ত দলিল। বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্র-সহ উৎপাদন ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ অগ্রগতি আগামিদিনে বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি ফোটাবে।
সূত্র: আইবিইএফ (IBEF), www.nicdc.in, ww.makeindia.com, আইবিইএফ(IBEF) রিপোর্ট – মে ২০২৩, অ্যাভেন্ডাস স্পার্ক (Avendus Spark) - ৩১ অগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত
এই তথ্য ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত
বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অ্যাক্সিস মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এই উদ্যোগ। বিনিয়োগকারীদের এককালীন কেওয়াইসি(KYC) প্রক্রিয়া পূরণ করতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা প্রতিটি শিল্পক্ষেত্র সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। এই নিবন্ধ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রতিটি তথ্য দেওয়ার জন্য লেখা হয়নি। তাই একে বিনিয়োগ পরামর্শ হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না। পূর্ববর্তী ফলাফল আগামী দিনেও যে জারি থাকবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।
এই নিবদ্ধে দেওয়া তথ্য এবং মতামতের যথার্থতা, সার্বিকতা কিংবা নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও অঙ্গীকার এখানে করা হচ্ছে না। প্রয়োজনে এই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি(AMC)-র এই বক্তব্য বদলানোর অধিকার রয়েছে।
বিধিবদ্ধ খুঁটিনাটি তথ্য: ১৮৮২ সালের ইন্ডিয়ান ট্রাস্টস অ্যাক্ট মোতাবেক অ্যাক্সিস মিউচুয়াল ফান্ড প্রতিষ্ঠা হয়। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক লিমিটেড এর পৃষ্ঠপোষক (ঋণ ১ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ)। ট্রাস্টি: অ্যাক্সিস মিউচুয়াল ফান্ড ট্রাস্টি লিমিটেড। ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার: অ্যাক্সিস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (এই এএমসি)। রিস্ক ফ্যাক্টর: স্কিম পরিচালনার ফলে কোনও ক্ষতি অথবা ঘাটতির ক্ষেত্রে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক লিমিটেড দায়ী থাকবে না।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। বিনিয়োগের আগে এই সংক্রান্ত সমস্ত নথি ভাল করে দেখে নিন।
এই প্রতিবেদনটি ‘অ্যাক্সিস মিউচুয়াল ফান্ড’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।