০১ মে ২০২৪
NEP 2020

বদলাচ্ছে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা, চার বছরের নতুন পাঠক্রমের ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা

আর ৩ বছর নয়। স্নাতক স্তরের অনার্স কোর্স এ বার থেকে ৪ বছরের। চলতি বছরেই রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020)

অধ্যাপক সৈকত মিত্র, অধ্যাপক মহুল ব্রহ্ম, এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের চিফ মেন্টর সিসিল অ্যান্টনি, অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু সরকার

অধ্যাপক সৈকত মিত্র, অধ্যাপক মহুল ব্রহ্ম, এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের চিফ মেন্টর সিসিল অ্যান্টনি, অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু সরকার

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ১৭:২১
Share: Save:

আর ৩ বছর নয়। স্নাতক স্তরের অনার্স কোর্স এ বার থেকে ৪ বছরের। চলতি বছরেই রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020)। এই নতুন শিক্ষানীতিরই অন্তর্গত চার বছরের পাঠক্রম। বিষয়টা যেহেতু নতুন, তাই উঠে আসছে নানা প্রশ্নও। যার উত্তর দিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট অধ্যাপকেরা।

৩ বছরের কোর্সের বদলে ৪ বছরের কোর্স। জেনারেল কোর্স কি তা হলে উঠে যাচ্ছে? কোর্সের মাঝপথে কেউ পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হলে কী হবে সেই ছাত্রের ভবিষ্যৎ? উত্তর মিলল রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাকাউট-এর প্রাক্তন উপাচার্য, অধ্যাপক সৈকত মিত্রের কাছে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাকাউট-এর প্রাক্তন উপাচার্য, অধ্যাপক সৈকত মিত্র কী বলছেন? দেখুন

সৈকতবাবু বলেন, “নতুন নিয়মে পাঠক্রম হবে ক্রেডিট পয়েন্ট নির্ভর। প্রত্যেক বছরে ৪০ ক্রেডিট পয়েন্ট পেতে হবে। সব মিলিয়ে চার বছরে পেতে হবে ১৬০ ক্রেডিট পয়েন্ট। চার বছরের কোর্সে কোনও পড়ুয়া ৭৫ শতাংশ নম্বর পেলে সরাসরি গবেষণা বা পিএচডি করার সুযোগ পাবে। কোনও পড়ুয়া ৩ বছরের শেষে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে সে স্নাতক হবে, অনার্স ডিগ্রি পাবে না। চার বছরের কোর্স শেষ করলে তবেই মিলবে অনার্স। পুরনো নিয়মে কেউ কোর্সের মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে তার আর স্নাতক হওয়ার সুযোগ থাকত না। নতুন নিয়মে মাঝপথে কেউ কোর্স ছাড়তে বাধ্য হলেও তার সামনে ফের পড়াশোনা চালু করার সুযোগ থাকবে। এমনকি সুযোগ থাকব অনার্স করারও। পড়ুয়ার প্রাপ্ত ক্রেডিট পয়েন্ট জমা থাকবে ব্যাঙ্কে। পরবর্তী সময়ে পড়াশোনা চালু করলে সেই পয়েন্ট ব্যবহার করা যাবে।”

চার বছরের পাঠক্রমে কি বাড়তি কোনও সুবিধা পাওয়া যাবে?

সৈকতবাবুর কথায়, “বিশ্বের অনেক দেশে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরের পঠনপাঠনের সঙ্গে সাযুজ্য আনতে সাহায্য করবে নতুন এই ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা এ দেশে এসে তাদের পড়াশোনা জারি রাখতে পারবে। আবার এ দেশের কোনও পড়ুয়া মাঝপথে কোর্স ছেড়ে গেলে বিদেশে গিয়ে সেই পড়াশোনা জারি রাখতে পারবে। উচ্চশিক্ষাকে গবেষণামুখী করতে এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে এই ব্যবস্থা।”

চার বছরের কোর্স শেষে গবেষণা করার সুযোগ অবশ্য এ দেশে নতুন নয়। সৈকতবাবু জানান, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে এই ব্যবস্থা আগেই ছিল। সেখানে চার বছরের কোর্স শেষে কয়েকটা পরীক্ষা দিলেই গবেষণা করার সুযোগ মেলে। বলা যায়, নতুন শিক্ষানীতিতে সেই ব্যবস্থার ব্যাপ্তি ঘটছে।”

নতুন শিক্ষানীতিতে যে ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব ক্রেডিট-এর কথা বলা হচ্ছে, সেই বিষয়টা ঠিক কী?

এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের চিফ মেন্টর সিসিল অ্যান্টনি এই বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কোর্স নিয়ে পড়াশোনা করলে সেই তথ্য় ও দলিলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। সেই ছাত্র বা ছাত্রী কী নিয়ে পড়াশোনা করেছে জানতে ভরসা স্রেফ মার্কশিট। নতুন শিক্ষানীতিতে একটা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে পড়ুয়াদের ক্রেডিট পয়েন্ট জমা থাকবে, তা সে যে বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করে থাকুক না কেন। সেই সেন্ট্রাল রিপোজিটরি দেখলে খুব সহজেই সেই শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ইতিবৃত্ত জেনে ফেলা যাবে। এতে গোটা প্রক্রিয়ায় একটা স্বচ্ছতা আসবে। কর্পোরেট সংস্থাগুলোও নতুন চাকরি দেওয়ার সময়ে এই তথ্যভাণ্ডারকে কাজে লাগাতে পারবে।”

এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের চিফ মেন্টর সিসিল অ্যান্টনি

নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষাকে ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি’ করে তোলার কথা বলা হয়েছে। এর মানে কি এক বিষয়ের স্নাতক অন্য বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষায় যেতে পারবে? খুব সহজ ভাষায় বললে এই ব্যবস্থায় এক জন হেলথ সায়েসের শিক্ষার্থী কি মিডিয়ার কোর্স নিয়ে এগোতে পারবে?

এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের অধিকর্তা অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু সরকার বললেন, “অবশ্যই পারবে। এর জন্য নতুন শিক্ষানীতিতে অডিট কোর্স, ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে।”

নতুন শিক্ষানীতিতে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে গেলেও পরে তা শুরু করার সুযোগ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের কারও কারও প্রশ্ন, পুরনো পাঠক্রমের কেউ মাঝপথে পড়া ছাড়তে বাধ্য হলে তাদের নতুন পাঠক্রমের কোর্সে ফেরার সুযোগ থাকছে কি না। এ নিয়ে অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু সরকার জানান, পুরনো এবং নতুন, এই দুই পাঠক্রম আলাদা ভাবে তৈরি। তাই পুরনো থেকে নতুন পাঠক্রমে আসা সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে নতুন করেই নাম নথিভুক্ত করতে হবে। স্নাতক স্তরে চার বছরের পাঠক্রম বিদেশে, বিশেষত আমেরিকায় সুপ্রতিষ্ঠিত। ভারতের নতুন শিক্ষানীতি এ দেশের পড়ুয়াদের আন্তর্জাতিক স্তরের পঠনপাঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে সাহায্য করবে।

এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের অধিকর্তা অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু সরকার

নতুন শিক্ষানীতিতে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রমের উল্লেখযোগ্য বিষয় হল গবেষণার সুযোগ। তবে কৃষ্ণেন্দুবাবু জানিয়েছেন, চার বছরের পাঠক্রমে উত্তীর্ণ হওয়া মানে স্রেফ গবেষণা করার যোগ্যতা অর্জন করা। সেই পড়ুয়া কোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ পাবে কি না, তা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই ঠিক করবে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মাপকাঠি অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সব যোগ্য ছাত্রছাত্রীই যে নির্দিষ্ট কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবে, তা নয়। ইউজিসি স্বীকৃত মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই শিক্ষানীতির সুবিধেগুলো পেতে পারে।

অধ্যাপক সরকারের মতে, জাতীয় শিক্ষানীতির উজ্জ্বল দিক হল, “এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী আদানপ্রদানের পরিসর তৈরি হবে। শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক শুধুমাত্র প্লেসমেন্ট দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সেখানে গিয়ে গবেষণাকেন্দ্রিক কাজ করার সুযোগও তৈরি হবে বলে আশা করা যায়।”

জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাল্টিপল এন্ট্রি এক্সিট ঠিক কী ভাবে কাজ করবে, এটা ইতিবাচক দিকগুলো কোনটি, এতে খামতিই বা কী– তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন এনএসএইচএম মিডিয়া স্কুলের ডিন, অধ্যাপক ডঃ মহুল ব্রহ্ম। তিনি বলেন, “মাল্টিপল এন্ট্রি-এক্সিট জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর সুবিধা হচ্ছে– এক জন পড়ুয়া তার স্নাতক স্তরের যে কোনও বছরে প্রয়োজনে বেরিয়ে যেতে পারে এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরেও আসতে পারে। প্রথম বছরের শেষে বেরোলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া সার্টিফিকেট পাবে, দ্বিতীয় বছরের শেষে ডিপ্লোমা। তৃতীয় বছরে বেরোলে সে স্নাতক হবে এবং চতুর্থ বছরের শেষে সে অনার্স-সহ স্নাতক হবে। নতুন নিয়মে এই প্রতিটা ধাপে এক জন পড়ুয়া যে যোগ্যতা অর্জন করবে, কর্মক্ষেত্রে তার একটা মূল্য থাকবে। একটা বছরের পড়াশোনা শেষ করার ৭ বছরের মধ্যে পরের পর্বের পড়াশোনা শুরু করার সুযোগ থাকবে। নতুন নিয়মে আপাতত এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় স্নাতকোত্তর হবে এক বছরের পাঠক্রম। কোনও পড়ুয়া অনার্স ডিগ্রি নিয়ে পাঠক্রম শেষ করলে স্নাতকোত্তর পড়তে পারে। নম্বর ভাল থাকলে সরাসরি গবেষণাতেও যেতে পারে।”

এনএসএইচএম মিডিয়া স্কুলের ডিন, অধ্যাপক মহুল ব্রহ্ম

কোনও পড়ুয়া চার বছরের পাঠক্রম শেষে স্নাতকোত্তর না করতে চাইলে তার কাছে কী সুযোগ থাকছে?

অধ্যাপক ব্রহ্ম বলেন, “নতুন পাঠক্রমের চতুর্থ বর্ষের শেষ ছয় মাস পড়ুয়াদের কাছে ইন্ডাস্ট্রি ইন্টার্নশিপের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকবে। ফলে কেউ স্নাতকোত্তর না করলেও তার ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে না।”

তাঁর মতে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমাতে এই জাতীয় শিক্ষানীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

এই প্রতিবেদনটি ‘এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাস’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE