Advertisement
০৫ মে ২০২৪
যথেষ্ট শক্ত শেয়ার বাজারের স্নায়ু

এ বার বর্ষা ভাল হলে ফল মিলবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে

না, এই দফায় রঘুরাম রাজন সুদ কমাননি। কমানোর কথাও ছিল না। খুচরো বাজার দর আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় সুদ কমার সম্ভাবনা আপাতত আর নে‌ই।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৯:৫০
Share: Save:

না, এই দফায় রঘুরাম রাজন সুদ কমাননি। কমানোর কথাও ছিল না। খুচরো বাজার দর আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় সুদ কমার সম্ভাবনা আপাতত আর নে‌ই। বর্ষা দেরিতে আসায় আগামী তিন মাসে পণ্যমূল্য কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং আরও বাড়তে পারে। আশার কথা, কেরল এবং খরাপীড়িত মহারাষ্ট্রে মৌসুমি বায়ু জোরকদমে ঢুকে পড়েছে এবং শুরু হয়েছে বর্ষণ। গোটা দেশে স্বাভাবিক এবং সমান বৃষ্টিপাত হলে আশা করা যায়, মাস তিনেকের পর থেকে জিনিসপত্রের দাম— বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দর কমতে শুরু করবে। অন্য দিকে চাষিদের হাতে টাকা এলে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। বাড়বে শিল্পপণ্যের চাহিদা। অন্ধ্র-ওড়িশা পেরিয়ে আগামী ৫/৭ দিনের মধ্যে বর্ষণ শুরু হওয়ার কথা আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও।

এখানে যেমন সুদ কমেনি, তেমন তা বাড়েনি মার্কিন মুলুকে। ফলে সুদ না-কমার কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি ভারতীয় বাজারে। বরং আমেরিকায় সুদ না-বাড়ায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল ভারত তথা বিশ্বের বহু বাজার। পাশাপাশি, ওবামার দেশে সুদ না-বাড়ার কারণে আবার তেজী হয়েছে সোনার দর। আমাদের দেশে পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম আবার ঘোরাফেরা করছে ৩০,৫০০ টাকার আশেপাশে। ফলে বেড়ে উঠেছে গোল্ড ইটিএফ-এর দামও।

শেয়ার বাজারের কাছে বেশ ভালই ছিল গত সপ্তাহটা। আট মাস বাদে সেনসেক্স আবার স্পর্শ করেছিল ২৭ হাজার অঙ্ক। শেষ বার সূচক ২৭ হাজারে ছিল গত অক্টোবরে। সপ্তাহের শেষ দিকে বাজার অবশ্য কিছুটা নেমে আসে বিক্রির চাপে। তবে মোটের উপর বাজারের স্নায়ু এখন বেশ শক্ত। যেটা লক্ষণীয় সেটা হল, এ বারের উত্থানে বাজারকে বিশেষ ভাবে মদত জুগিয়েছে স্থানীয় মিউচুয়াল ফান্ডগুলি, বিদেশি তহবিল নয়। মে মাসে বাজার ৪% বাড়ার পিছনে মূল ইন্ধন জুগিয়েছে এই সব দেশি ফান্ডই। বাজারের জন্য এটা ভাল লক্ষণ। এপ্রিল এবং মে মাসে লগ্নি হয়েছে মোট ১২,৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মে মাসে লগ্নির পরিমাণ ছিল ৮৩০২ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কে সুদ হ্রাস, ডাকঘরে পরিষেবার অভাব এবং অর্থনীতি আগামী দিনে চাঙ্গা থাকার লক্ষণ কিছুটা স্পষ্ট হওয়ায় মানুষ বেশি করে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারের সাম্প্রতিক উত্থানে মুম্বই বাজারে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার-মূল্য (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) আবার ১০০ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ মোট লগ্নিকারীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩ কোটি ১২ লক্ষ।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৫০ ডলার ছাড়ানোর পরে এখন তা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে। বর্তমানে দর ঘোরাফেরা করছে ব্যারেল পিছু ৫১.২০ ডলারের আশেপাশে। গত ৮ মাসের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দাম। এর ভাল এবং মন্দ দু’রকম প্রভাবই আছে ভারতীয় অর্থনীতির উপর। অশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় চিন্তায় পড়েছে এ দেশের অর্থ মন্ত্রক।

অনুৎপাদক সম্পদের চাপে নুয়ে পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পিছনে সরকার দাঁড়াবে— অরুণ জেটলির এই প্রতিশ্রুতিতে কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে এই সব শেয়ার। আবার ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম। ভাল বর্ষা হবে, এটাই বাজারের কাছে এখন বড় আশা। এতে কৃষি-শিল্প, দুইয়েরই এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। চাঙ্গা হবে ভারতীয় অর্থনীতি, তেজী থাকবে শেয়ার বাজার। অর্থনীতি চাঙ্গা হলে ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্ষার ভাল-মন্দ ছাড়াও আগামী দিনে বাজারের আর একটি ‘ট্রিগার’ হবে ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল, যা জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করবে। বর্ষা ভাল হলে তার সুফল কিন্তু ফলবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফলে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বাজারের ভিত আরও মজবুত হবে বলে আশা করা যায়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি পতনে বাছাই করে ইকুইটি এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sensex BSE NSE Second Quarter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE