E-Paper

খরচের চাপে বাড়ছে দেনা, গত আর্থিক বছরে গৃহস্থের সঞ্চয় নেমেছে তলানিতে, চিন্তা মোদী সরকারের

সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০২২-২৩ সালে গৃহস্থের নিট সঞ্চয় জিডিপির ৫.১ শতাংশে নেমে এসেছে। যা তার আগের বছরে ছিল ৭.২%। ১৯৭৬-৭৭ সালের পরে সঞ্চয়ের হার আর কখনও এত নীচে নামেনি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৯
representational image

—প্রতীকী ছবি।

মুখে স্বীকার না করলেও, গৃহস্থের সঞ্চয় কমে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছে মোদী সরকার। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত আর্থিক বছরে গৃহস্থের নিট সঞ্চয় নেমে এসেছে জিডিপির ৫.১ শতাংশে। গত পাঁচ দশকে যা সর্বনিম্ন।

মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক সরকারি ভাবে জানিয়েছে, এ নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, চলতি অর্থবর্ষে গৃহস্থের নিট সঞ্চয় আরও কমতে পারে। সূত্রের খবর, ওই সঞ্চয় কমে জিডিপির ৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০২২-২৩ সালে গৃহস্থের নিট সঞ্চয় জিডিপির ৫.১ শতাংশে নেমে এসেছে। যা তার আগের বছরে ছিল ৭.২%। ১৯৭৬-৭৭ সালের পরে সঞ্চয়ের হার আর কখনও এত নীচে নামেনি। উল্টো দিকে, গৃহস্থের দেনার বোঝা জিডিপির ৩৭.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। যা তার আগের বছরে ছিল ৩৬.৯ শতাংশ। এক বছরে দেনার বোঝা ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। স্বাধীনতার পরে মাত্র এক বারই গৃহস্থের দেনার বোঝা এত দ্রুত গতিতে বেড়েছিল। সেটা ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিসংখ্যানের অর্থ হল, সাধারণ গৃহস্থ পরিবার সঞ্চয় করছে কম। ধার করছে বেশি। ধারের টাকাতেই খরচ করছে আমজনতা। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, মোদী জমানায় অর্থনীতির দুরবস্থার এটাই প্রমাণ। কোভিডের পরে মানুষের আয় কমেছে। তাই সঞ্চয় কমেছে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি, খরচের চাপে দেনা বেড়েছে। তার পরে অর্থ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে দাবি করে, এর সঙ্গে অর্থনীতির দুরবস্থার সম্পর্ক নেই। লোকে আসলে সঞ্চয় কম করে সেই টাকায় গাড়ি-বাড়ি কিনছে।

গৃহস্থের নিট সঞ্চয়

২০২২-২৩: ৫.১% (পাঁচ দশকে সর্বনিম্ন)

২০২১-২২: ৭.২%

অর্থ মন্ত্রকের চিন্তা: ২০২৩-২৪ সালে নেমে আসতে পারে ৪ শতাংশে

গৃহস্থের দেনার বোঝা

২০২২-২৩: ৩৭.৬%

২০২১-২২: ৩৬.৯%

স্বাধীনতার পরে একবারই, ২০০৬-০৭ সালে এই বোঝা বেড়েছিল এত দ্রুত

অর্থ মন্ত্রকের চিন্তা: বাস্তবে আয় না বাড়লে, সঞ্চয় কমিয়ে এবং দেনা করে খরচের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।

* সমস্ত হিসাব জিডিপি-র নিরিখে।

** তথ্যসূত্র: রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট

সরকারি ভাবে এই দাবি করা হলেও অর্থ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, চিন্তার কারণ যথেষ্ট। শুধু গৃহস্থ পরিবার নয়, ক্ষুদ্র শিল্প, যেগুলি অনেকক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যদের দিয়েই চালানো নয়, তাদেরও আয় থমকে রয়েছে। তার ফলে সঞ্চয় কমতে পারে। ধার বাড়তে পারে। এতে ভবিষ্যতে আর্থিক বৃদ্ধি মার খেতে পারে। কারণ কেনাকাটা না বাড়লে আর্থিক বৃদ্ধির গতিতে ছন্দ ফিরবে না। বিশেষত গ্রামের চাহিদা চাঙ্গা হওয়া কিংবা গ্রামীণ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর হার খুবই শ্লথ।

অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘‘দেশে প্রায় ৪০ কোটি পরিবারকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ধনী, গরিব ও মধ্যবিত্ত। গরিবদের আয়ের ৯০ শতাংশই খরচ হয়ে যায়। ধনীরা আয়ের অনেকটাই সঞ্চয় করেন। কিন্তু ধনীদের সংখ্যা দেশে কম। ফলে মূল সঞ্চয় আসে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। মধ্যবিত্তরা আয়ের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ সঞ্চয় করার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে তাঁরা রোজগারের টাকা বাঁচিয়ে বাড়ি, গাড়ি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, এয়ার-কন্ডিশনারের মতো দামি বৈদ্যুতিন পণ্য কেনেন। এটা ঠিক যে, গৃহস্থের সঞ্চয় যে পরিমাণ কমেছে, তার একটা অংশ নিশ্চিত ভাবেই বাড়ি, গাড়ি বা বৈদ্যুতিন পণ্য কেনার জন্য খরচ হয়েছে। কিন্তু তা বাদ দিলেও গৃহস্থের সঞ্চয়ের পরিমাণ জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।’’

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের কাছে এর থেকেও চিন্তার কারণ হল, ধার করে বাড়ি-গাড়ির পাশাপাশি দামি বৈদ্যুতিন পণ্য কেনার প্রবণতা বৃদ্ধি। তাঁদের বক্তব্য, ব্যাঙ্ক থেকে শিল্পকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ গত কয়েক বছরে প্রায় একই রকম রয়েছে। অথচ গৃহস্থকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ লাফিয়ে-লাফিয়ে বেড়েছে। এত দিন ব্যাঙ্কগুলি গৃহস্থের ব্যাঙ্কে জমানো টাকা শিল্পকে ঋণ দিত। এখনগৃহস্থের জমানো টাকাই গৃহস্থকে বেশি করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গৃহস্থ পরিবার সঞ্চয় কম করে, ধার করে দামি জিনিসপত্র কিনে চলেছে। এই প্রবণতা বজায় থাকারই সম্ভাবনা। তার উপরে বহু পরিবারে কোভিডের পরে আয় ধাক্কা খেয়েছে। তার জেরে আগামী অর্থবর্ষে সঞ্চয়ের হার ৪ শতাংশে নেমে যেতে পারে।

২০২১-২২ সালে গৃহস্থের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ১৬.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে তা ১৩.৭৬ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘অর্থনীতির গতি বাড়লে এবং সেই সূত্রে বাস্তব আয় বাড়লে এই কম সঞ্চয় ও বেশি দেনার প্রবণতা বিপরীত মুখে হাঁটতে পারে। কিন্তু সঞ্চয় যথেষ্ট না বাড়লে, ভবিষ্যতে কেনাকাটা ও লগ্নি দুই-ই ধাক্কা খাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Narendra Modi Bank Loan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy