Advertisement
E-Paper

দু’দশক বই বেচে এই প্রথম বিপণি খুলছে অ্যামাজন

উল্টোরথ। দু’দশক ডিজিটাল দুনিয়ায় চুটিয়ে বই বেচার পরে এ বার তার দোকান খুলছে ই-বইয়ের ভগীরথ। মঙ্গলবারই আমেরিকার সিয়াটেলে পর্দা উঠছে অ্যামাজনের প্রথম বই বিপণির।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৫১

উল্টোরথ।

দু’দশক ডিজিটাল দুনিয়ায় চুটিয়ে বই বেচার পরে এ বার তার দোকান খুলছে ই-বইয়ের ভগীরথ। মঙ্গলবারই আমেরিকার সিয়াটেলে পর্দা উঠছে অ্যামাজনের প্রথম বই বিপণির।

জেফ বেজোর হাতে গড়া সংস্থাটির দাবি, নিজেদের সদর দফতরের কাছে সিয়াটেলে এই বিপণিতে বই থাকবে পাঁচ-ছ’হাজার। ঠাঁই পাবে শুধু সেই সমস্ত বই, সংস্থার ওয়েবসাইটে যেগুলি সম্পর্কে পাঠকরা উচ্ছ্বসিত, বিক্রি মারকাটারি। সব মিলিয়ে, ছাপানো বইয়ের এই বিপণিকে নিজেদের নেট ব্যবসারই পরিপূরক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে তারা।

কিন্তু অ্যামাজনের এই ঘোষণায় বড় ‘পরিবর্তন’-এর গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এই বিপণি আসলে প্রতীকী। ইঙ্গিত ‘হার্ড ব্যাক’, ‘পেপার ব্যাক’-এর জমানা ‘ফিরে আসা’র। ইঙ্গিত বই ছাপা ও তা বিক্রির ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোরও।

গত দু’দশক ধরে অ্যামাজন বই বিক্রেতাদের পয়লা নম্বর ‘শত্রু’। ইন্টারনেটের শক্তিতে ভর করে এই সময়ে ছাপানো বইয়ের অস্তিত্বকেই ক্রমশ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিল তারা। তাদের ব্যবসার মডেলে ওয়েবসাইটই বইয়ের বিপণি। সেখানে বই কিনে হাতে ধরা গ্যাজেটে তা পড়ে ফেলতে পারেন পাঠক। কিংবা বরাত দিয়ে প্রায়শই বিপণির তুলনায় ‘কম’ দামে তা কিনতে পারেন তাঁরা।

এই কৌশলের সঙ্গে পাল্লা দিতে নাভিশ্বাস উঠেছে বই বিক্রির অধিকাংশ সংস্থার। এক দিকে, এক-দেড় দশক ধরে নাগাড়ে বেড়েছে ই-বুকের বিক্রি। বেড়েছে ওয়েবসাইটে বই কেনার বরাত দেওয়া মানুষের সংখ্যা। অন্য দিকে ব্যবসা খুইয়ে ধুঁকতে থেকেছে বহু বড় বই বিক্রির সংস্থা। অনেকে পাততাড়ি গুটিয়েছে। অনেকে আবার খরচ কমাতে গিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে একের পর এক বিপণি। এমনকী যে সিয়াটেলে অভিযান শুরু করছে অ্যামাজন, সেখানেই এক সময় ৪৬ হাজার বর্গ ফুটের বইয়ের বিপণি গুটিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন মুলুকের অন্যতম বৃহৎ বই বিক্রির চেন বার্নস অ্যান্ড নোব্‌ল। খরচের ধাক্কা সামাল দিতে ফি বছর ২০টি করে দোকানে তালা ঝোলাতে বাধ্য হয়েছে তারা।

তবে ‘বদল’ যে আসছে, তার ইঙ্গিত মিলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। সম্প্রতি একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ই-বুকের বিক্রি আর সে ভাবে দুদ্দাড় গতিতে বাড়ছে না। বরং কিছুটা পড়তির দিকে। গ্যাজেটের স্ক্রিনের বদলে ছাপানো বই হাতে ধরে পড়া ফের পছন্দ করছেন অনেকে। এমনকী কেনার আগে নেটে শুধু ‘রিভিউ’ না-পড়ে উল্টে দেখতে চাইছেন বইয়ের পাতা। ছাপানো বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। দীর্ঘ দিন পরে অন্তত না লাভ-না ক্ষতির জায়গায় পৌঁছেছে কয়েকটি বই বিক্রির সংস্থা। অনেকের মতে, অ্যামাজনের বিপণি খোলার পিছনে অন্যতম কারণ চাহিদার এই ছবি-বদল। সমীক্ষা বলছে, ই-কমার্স নিয়ে যতই নাচানাচি হোক না কেন, বিশ্বজুড়ে সার্বিক ভাবে পণ্য কেনাকাটায় ৯০ শতাংশের বেশি বাজার এখনও বিপণিতে পসরা সাজিয়ে রাখা রিটেল সংস্থাগুলির দখলে। ফলে সেই বাজার হারাতে চায় না অ্যামাজনও।

উল্টো মতও আছে। কেউ কেউ বলছেন, নিছকই পরীক্ষামূলক ভাবে এই বিপণি চালু করছে অ্যামাজন। তাই এখনই এ নিয়ে শেষ কথা না বলা ভাল। আগামী দিনে ইঁট-কাঠের বিপণিকে তারা ব্যবহার করতে পারে নিজেদের বিপণন কৌশলের অঙ্গ হিসেবে। যেখানে পাঠকের সঙ্গে একই সাথে বই এবং বই পড়ার যন্ত্রের পরিচয় করিয়ে দেবেন সংস্থার কর্মী। অনেকটা অ্যাপল যেমন করে।

কর্মীদের ঢালাও ছুটিছাটা দেওয়ায় কোনও দিনই তেমন সুনাম ছিল না অ্যামাজনের। সম্প্রতি সন্তান হলে সবেতন ছুটি বাড়িয়েছে তারা। তারপরই ফের এক দফা চমকে দিয়ে বইয়ের বিপণি খোলার এই সিদ্ধান্ত।

ভবিষ্যতের গর্ভে কী আছে, তা বলবে সময়ই। তবে বই-দোকানের ব্যবসা গোটানোর কারণ হিসেবে যে সংস্থার নাম সবার আগে আসে, তাদের নিজেদেরই বিপণি খোলা চমক বই কি!

Amazon books bookshop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy