রাজ্যের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প ঘিরে তৈরি হচ্ছে আরও আইনি জট। এ বার চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে রাজ্য শিল্লোন্নয়ন নিগমের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে চলেছে মুম্বইয়ের বন্দর নির্মাতা সংস্থা আম্মালাইন্স। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের অন্তর্গত পূর্ব মেদিনীপুরের বিচুনিয়ায় ওই গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হওয়ার কথা। সেটি গড়ার জন্য বাম আমলে দেওয়া লেটার অব ইনটেন্ট অযৌক্তিক ভাবে নাকচ করার অভিযোগে রাজ্যের বিরুদ্ধে আগেই আদালতে গিয়েছে মুম্বইয়ের বন্দর নির্মাতা সংস্থা আম্মালাইন্স। ওই রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী রায় দেয়। সেই অনুযায়ী, প্রকল্পের জন্য দরপত্র চাইলেও আদালতের অনুমতি ছাড়া ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দিতে পারবে না রাজ্য।
এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করে রাজ্য সরকার ও কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। আদালত অবশ্য আগের রায়ই বহাল রাখে। আর তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ করতে চলেছে আম্মালাইন্স। নিগমের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
আম্মালাইন্স কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, চুক্তি অনুযায়ী বন্দর প্রকল্পে ২৬% অংশীদারি রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের, বাকি ৭৪% আম্মালাইন্সের। এই অংশীদারি বাবদ নিগমের কাছ থেকে সংস্থার ১৬০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা হয়। তবে সেই টাকার জন্য দাবি তোলেনি সংস্থা। কারণ তাদের মূল দাবি ছিল, বিল্ড, ওন, অপারেট, শেয়ার ও ট্রান্সফার (বুস্ট) বা যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প তৈরির চুক্তিপত্রে রাজ্য সই করে দিক। সে ক্ষেত্রে তারা কাজ শুরু করতে পারত।
বস্তুত সংস্থার অভিযোগ, ৬ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে রাজ্যের কোনও সাহায্য তারা পায়নি। উল্টে প্রতি পদে বিভিন্ন সরকারি দফতরের অসহযোগিতার মুখে পড়েছে। রাস্তা উন্নয়নের তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে জমি জরিপের কাজে রাজ্যের সহায়তা মেলেনি বলে সংস্থার অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়ে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানিয়ে একাধিক চিঠি দেয় লগ্নিকারী আম্মালাইন্স। কিন্তু উত্তর মেলেনি।
গত বছরের ৩ নভেম্বরের চিঠিতে তারা স্পষ্ট অভিযোগ জানায়, ধাপে ধাপে বন্দর গড়ার কাজে সংস্থা এক পা এগোলে, দু’পা পিছিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ সেই রাজ্যের অসহযোগিতা। একই সঙ্গে সংস্থা জানিয়েছে, প্রকল্পের পথে নতুন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। ২০১০-এর জানুয়ারিতে হলদিয়ায় শিল্প প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। আটকে যায় বন্দর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রও। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এর পরে কেন্দ্রের প্রাথমিক সবুজ সঙ্কেত ২০১৩ সালের ডিসেম্বরেই পায় সংস্থা। কিন্তু এই চিঠির পরেই ৫ নভেম্বর রাজ্য সরকার সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় লেটার অব ইনটেন্ট নাকচ করার কথা।
রাজ্যের এই চিঠিই গোটা প্রকল্প ঘিরে প্রশ্ন তুলে দেয়। গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের পাশাপাশি আটকে গিয়েছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত ‘সাবমেরিন গ্যাসলাইন’ প্রকল্পও। সব মিলিয়ে দশ হাজার কোটি টাকার বেশি লগ্নি আইনি জটে আটকে পড়েছে।
রাজ্যের শিল্পমহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নে অন্যতম বাধা কলকাতা ও হলদিয়া, দুই বন্দরেই নাব্যতার অভাবে জাহাজ আনাগোনায় চূড়ান্ত সমস্যা। সমাধানসূত্র হিসেবে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রসঙ্গ বার বার উঠে আসে। এই পরিস্থিতিতে বন্দর তৈরির জন্য লগ্নিকারী পেয়েও রাজ্য কেন তা হেলায় হারাচ্ছে, তার কোনও যুক্তি খুঁজে পায়নি শিল্পমহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy