Advertisement
E-Paper

এমন বন্ধু আর কে আছে!

আলোচনা হয়েছে বহু বার। তবু জীবন বিমা নিয়ে প্রশ্নের যে কোনও শেষ নেই, তা আমাদের কাছে আসা চিঠি, ই-মেলেই বোঝা যায়। সে সবের উত্তর দিতে আজ ফের এক বার বিমা সংক্রান্ত একেবারে গোড়ার কিছু কথা মনে করাচ্ছে বিষয় আশয়।আলোচনা হয়েছে বহু বার। তবু জীবন বিমা নিয়ে প্রশ্নের যে কোনও শেষ নেই, তা আমাদের কাছে আসা চিঠি, ই-মেলেই বোঝা যায়। সে সবের উত্তর দিতে আজ ফের এক বার বিমা সংক্রান্ত একেবারে গোড়ার কিছু কথা মনে করাচ্ছে বিষয় আশয়।

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০০

মিঠে রোদ গায়ে মেখে শীতের শিরশিরে ঠান্ডা আমেজ। পাটালি গুড়ের মনমাতানো গন্ধে বিভোর হয়ে একটা-দু’টো রুটি বেশি খেয়ে ফেলা। সারা দিন দৌড়োদৌড়ির পরেও বাড়ি ফিরে বাচ্চাকে পড়ানো বা অতিথি আপ্যায়নে এতটুকু খামতি না রাখা। এ সবের মাঝেই উঁকি মারে চিন্তা। হঠাৎ করে আপনার কিছু হয়ে গেলে পরিবার পথে দাঁড়াবে না তো? বন্ধ হয়ে যাবে না তো ছেলেমেয়ের পড়াশোনা? তাই ভালোবাসার মানুষদের দুশ্চিন্তা ও ভেসে যাওয়া থেকে আটকাতেই জীবন বিমার দরজায় কড়া নাড়া। অথচ বিমা করতে হবে এটা জানা থাকলেও, কোন ধরনের প্রকল্প আমার পক্ষে জরুরি, কত টাকার বিমা করা ঠিক হবে, কোন প্রকল্পের সুবিধা-অসুবিধা কী রকম, তা আমরা অনেকেই জানি না।

অনেকের কাছে আবার বিমাটাও এক ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প। কিন্তু আদৌ তা যুক্তিযুক্ত কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁদের মনে। তাই আসুন, আজ সেই চেনা বন্ধুর বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়েই আলোচনায় বসি।

প্রকল্পের রকমফের

সাধারণত বাজারে তিন ধরনের জীবন বিমা প্রকল্পের দেখা মেলে—

• টার্ম পলিসি

• এনডাওমেন্ট

• ইউনিট লিঙ্কড (ইউলিপ)

প্রত্যেকটি পলিসিরই নানা সুবিধা রয়েছে। তেমনই অসুবিধাও আছে। ধাপে ধাপে সেগুলিই খতিয়ে দেখব।

টার্ম পলিসি

যাঁরা বিমাকে সঞ্চয় হিসেবে না দেখে, সত্যি সত্যি শুধু ঝুঁকির রক্ষাকবচ হিসেবেই এতে লগ্নি করেন, তাঁদের পছন্দ টার্ম পলিসি। কারণ, একমাত্র গ্রাহক মারা গেলেই এই প্রকল্প থেকে টাকা পাওয়া যায়। নইলে মেয়াদ শেষে টাকা মেলে না। আর তাই আমাদের দেশে এ ধরনের প্রকল্প এখনও তেমন জনপ্রিয় নয়। তবে সময়ের সঙ্গেই অল্প অল্প করে মানুষের মনোভাব পাল্টাচ্ছে। ফলে আগ্রহ বাড়ছে এই পলিসি সম্পর্কে জানারও।

কিনবেন কী ভাবে?

• কত টাকার প্রকল্প কিনতে চান, অর্থাৎ তার সাম অ্যাশিয়োর্ড কত হবে, তা ঠিক করুন। সাধারণত, বার্ষিক আয়ের ২০গুণ বিমা করার কথা বলা হয়। ধরুন, বছরে আয় ৫ লক্ষ টাকা। তা হলে বিমামূল্য হবে ১ কোটি।

• এ বার গ্রাহকের বয়স এবং বিমার অঙ্কের ভিত্তিতে ঠিক হবে প্রিমিয়াম। সেই কারণে বিমার অঙ্ক বা বয়স যত বেশি, তত বেশি হবে প্রিমিয়ামও।

সুবিধা-অসুবিধা

• টার্ম পলিসির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এতে প্রচলিত এনডাওমেন্ট প্রকল্পের তুলনায় কম টাকায় অনেক বেশি অঙ্কের কভারেজ মেলে।

• মেয়াদ শেষে টাকা হাতে আসে না। তবে একে এনডাওমেন্ট বা ইউলিপের মতো করে না ভেবে স্বাস্থ্য বিমার মতো ভাবলে বিষয়টি ততটা গায়ে লাগে না।

• চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে কিছু সংস্থা এখন সারা জীবনের জন্যও টার্ম পলিসি চালু করেছে। যেখানে গ্রাহকের মৃত্যুর পর বোনাস-সহ বিমার টাকা ফেরত পাবেন নমিনি। অনেক ক্ষেত্রে বয়স ৮০ বছর হলে, টাকা পেতে পারেন গ্রাহক নিজেও। তবে সব সময়েই প্রকল্প বাছাইয়ের আগে তার খুঁটিনাটি দেখে নিন।

এনডাওমেন্ট প্রকল্প

চাকরিতে ঢুকেই জীবন বিমা অনেকেই কেনেন। এ জন্য আবার তিন ধরনের জীবন বিমা প্রকল্পের মধ্যে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় এনডাওমেন্ট প্রকল্পটি। এতে বিমার সুরক্ষা যেমন পাওয়া যায়, তেমনই নিয়মিত প্রিমিয়াম দিয়ে গেলে মেয়াদ শেষে হাতে আসে বোনাস-সহ টাকা। ফলে অনেকে লগ্নির পথ হিসেবেও একে বেছে নেন।

কিনবেন কী ভাবে?

• টার্ম পলিসির মতো এ ক্ষেত্রেও কত টাকার প্রকল্প কিনতে চান ঠিক করুন।

• এই প্রকল্পে প্রিমিয়াম কিন্তু বেশি। ফলে যত টাকার প্রিমিয়াম নিয়মিত দিতে পারবেন, তার ভিত্তিতেই বিমার অঙ্ক স্থির করুন।

• প্রিমিয়াম দেওয়া যায় প্রতি মাসে, তিন মাসে, ছ’মাসে বা বছরে। অনেক প্রকল্পে এককালীন টাকাও রাখা যায়।

সুবিধা-অসুবিধা

• গ্রাহক বেঁচে থাকলে ও পুরো মেয়াদ টাকা দিলে (কিছু ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ও বিমার মেয়াদ আলাদা হয়), তার পর বোনাস-সহ টাকা ফেরত পান।

• মেয়াদ শেষের আগে গ্রাহক মারা গেলে, শর্তসাপেক্ষে বোনাস-সহ বিমার টাকা ফেরত পাবেন নমিনি।

• সংস্থাই বোনাসের অঙ্ক স্থির করে। সেই অঙ্কে হেরফের হলেও, যত টাকার বিমা করা হয়, অন্তত সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায়ই। তাই প্রিমিয়ামের অঙ্ক মার যাওয়ার ভয় নেই। এখন অনেক ক্ষেত্রে আবার পলিসি কেনার আগেই বোনাসের অঙ্ক স্থির করে সংস্থা।

• এমন প্রকল্পও এখন এনেছে অনেক সংস্থা, যাতে বিমাকারী মেয়াদ শেষে বোনাস-সহ পুরো টাকা পাওয়ার পরেও পলিসি চালু থাকে। কিন্তু তখন তাঁকে আর প্রিমিয়াম দিতে হয় না। এর পরে তিনি মারা গেলে নমিনি ফের বিমার টাকা পান। সেই প্রয়োজন না থাকলে, পলিসি সারেন্ডার করে টাকা তুলে নিতে পারবেন গ্রাহক নিজেই।

ইউলিপ প্রকল্প

এটিতে বিমার সুবিধা পুরোদস্তুর বহাল থাকে। তার বাইরে ইউলিপ কিছুটা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো মূলত শেয়ার বাজার ও ঋণপত্রের বাজার ভিত্তিক প্রকল্প। অর্থাৎ, এই প্রকল্পে সংগৃহীত টাকা লগ্নি করা হয় শেয়ার, ঋণপত্র ও মূলধনী বাজারে। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা থেকে প্রকল্প চালানোর খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে, সেটাই ভাগ করে দেওয়া হয় গ্রাহকদের মধ্যে। আর যেহেতু আয়ে তারতম্য হতে পারে, তাই এতে মেয়াদ শেষে প্রাপ্য টাকার অঙ্ক বাজারের উপর নির্ভরশীল।

কিনবেন কী ভাবে?

• এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ঠিক করতে হবে কত টাকা প্রিমিয়াম দিতে পারবেন।

• সেই সঙ্গে স্থির করুন কত টাকার বিমা চান। কারণ এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ও কভারেজের অঙ্ক দুই-ই কিন্তু বিমাকারীর হাতে। সাধারণত বার্ষিক প্রিমিয়াম যত টাকার, তার ৫, ১০, ১৫ বা তারও বেশি গুণ হতে পারে কভারেজ। বিমাকারীর চাহিদা মাফিক তা বাছতে হবে।

সুবিধা-অসুবিধা

• এই প্রকল্পের টাকা বাজারে খাটে, তাই সেখানে মুনাফা বা লোকসান কী হয়েছে, তার উপরে নির্ভর করবে প্রাপ্য টাকার অঙ্ক। সুতরাং বাজার উঠলে পাওনা ছাপিয়ে যেতে পারে ‘সমতুল্য’ প্রকল্পের বোনাসকে। কিন্তু বড় লোকসান হলে, রিটার্ন তো দূর অস্ত্‌, এমনকি হারাতে হতে পারে প্রিমিয়ামের অংশও। যে কারণে এনডাওমেন্টের মতো বোনাস পাওয়ার আশা এখানে না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বরং লগ্নির আগে ঝুঁকির বিষয়ে খবর নিন।

• মেয়াদ শেষের আগে বিমাকারী মারা গেলে অবশ্য কভারেজের অঙ্ক এবং ন্যাভের (নেট অ্যাসেট ভ্যালু) ভিত্তিতে হিসেব করে পাওয়া তহবিলের মূল্য, এই দু’য়ের মধ্যে যেটি বেশি, সেই টাকাই পাবে নমিনি।

• যদি এমন অবস্থা হয় যে, বাজার খারাপ থাকায় প্রিমিয়ামের পুরো টাকাও মিলছে না। তখন সেই অবস্থা থেকে রেহাই দিতে বিশেষ সুবিধা দেয় বেশ কিছু সংস্থা। সে ক্ষেত্রে তখনই না তুলে প্রাপ্য টাকা পরে তুলতে পারেন।

খেয়াল রাখুন

প্রকল্প কেনার আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। যেমন—

• পলিসি কেনার সময় তথ্য গোপন করবেন না। বিশেষত সেই সব তথ্য, যার ভিত্তিতে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়। কারণ তা করলে, ১৯৩৮ সালের বিমা আইনের ৪৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী পলিসির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে পারে বিমা সংস্থা।

• অন্তত ৩ বছর প্রিমিয়াম দিতে হবে। না হলে দেওয়া পুরো টাকা মার যাবে।

• নির্দিষ্ট সময়ে টাকা মেটাতে হবে। না হলে পলিসি বন্ধ হতে পারে।

• দেখে নিন সংস্থাটির বিমার টাকা মেটানোর হার (ক্লেম সেটল্‌মেন্ট রেশিও) কেমন।

• টাকা পেতে কত সময় লাগছে।

করছাড়

আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে প্রিমিয়ামে করছাড় মেলে।

Insurance Policy Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy