Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
দাবি কর বিশেষজ্ঞদের

জালিয়াতির সুযোগ কমবে জিএসটি এলে

জিএসটি বা পণ্য-পরিষেবা কর চালু হলে কর ফাঁকি কমবে বলে মনে করছেন কর বিশেষজ্ঞরা। যার প্রধান কারণ, লেনদেনের খুঁটিনাটিতে নজর রাখার ব্যবস্থা পাকা করার চেষ্টা। এ সংক্রান্ত দায়িত্ব বর্তেছে কেন্দ্রের আওতাভুক্ত একটি সংস্থা জেএসটি নেট-এর উপর।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

জিএসটি বা পণ্য-পরিষেবা কর চালু হলে কর ফাঁকি কমবে বলে মনে করছেন কর বিশেষজ্ঞরা। যার প্রধান কারণ, লেনদেনের খুঁটিনাটিতে নজর রাখার ব্যবস্থা পাকা করার চেষ্টা। এ সংক্রান্ত দায়িত্ব বর্তেছে কেন্দ্রের আওতাভুক্ত একটি সংস্থা জেএসটি নেট-এর উপর। তারা লেনদেন ও পণ্য-পরিষেবা কর সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নথিবদ্ধ রাখবে তাদের নিজস্ব পোর্টালে। ফলে তথ্য লুকোনোর সুযোগ খুব বেশি না-থাকারই সম্ভাবনা বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, জিএসটি জমানায় যে সব পথে রাজস্ব বাড়ার সম্ভাবনা, এটি তার মধ্যে অন্যতম।

বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের প্রত্যক্ষ কর কমিটির চেয়ারম্যান তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘জিএসটি চালু হলে বিশেষত উৎপাদন শিল্পে তৈরি পণ্যের লেনদেন গোপন করা প্রায় অসম্ভব হবে। কমবে কালোবাজারি। কারণ, পণ্য সরবরাহ ও বিপণনের যাবতীয় তথ্যই নথিবদ্ধ থাকবে অনলাইনে। ফলে কর ফাঁকি দিতে ঘুর পথে লেনদেন করলে তা সহজেই ধরতে পারবে কর দফতর।’’

বস্তুত, এখন যে সব উপায়ে এক শ্রেণির বিক্রেতা ও ক্রেতা কর ফাঁকি দেন তার অন্যতম, বিল না দিয়ে পণ্য বিক্রি করা বা তা ছাড়াই কেনা। এ ভাবে লেনদেনটি গোপন রাখার চেষ্টা হয়। বিক্রেতার উদ্দেশ্য— প্রথমত, মুনাফা লুকিয়ে আয়কর বাঁচানো। দ্বিতীয়ত, বিল না দিয়ে বিক্রয় কর ছাড়া পণ্য বেচে তার দাম কম রাখা। এতে প্রতিযোগিতার বাজারে কিছুটা সুবিধা মেলে। অন্য দিকে, ওই সব ক্রেতার লক্ষ্য— বিল ছাড়া তুলনায় কম দামে জিনিস কেনা।

তিমিরবাবু জানান, জিএসটি জমানায় বেআইনি লেনদেন বন্ধের প্রধান কারণই হবে ট্যাক্স ক্রেডিট। অর্থাৎ কাঁচামাল কিনতে উৎপাদনকারী যে কর দিয়েছেন, তৈরি পণ্য বিক্রির সময় তা কেটে রেখে বাকি কর দেওয়ার নিয়ম চালু হবে। ধরুন, কোনও সংস্থা ঘড়ি তৈরি করে। তারা যন্ত্রাংশ কেনার সময় ১৬ টাকা কর দিয়েছে। পণ্য তৈরি করে তা বিক্রির সময় ধরা যাক কর দাঁড়াচ্ছে ১৮ টাকা। যে ডিলারকে সংস্থাটি ঘড়ি বেচবে, তার থেকে ১৮ টাকা কর আদায় করে, তা থেকে যন্ত্রাংশ কিনতে দেওয়া ১৬ টাকা কেটে রেখে বাকি ২ টাকা সরকারের কাছে জমা দেবে। তিমিরবাবুর মতে, যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) ব্যবস্থাতেও ট্যাক্স ক্রেডিটের নিয়ম আছে। কিন্তু ব্যবস্থাটি অনলাইনে হয় না এবং পুরো বিষয়টিতে আছে সমন্বয়ের অভাব। তাই লেনদেন গোপনের সুযোগও রয়েছে পুরোমাত্রায়।

কিন্তু এ বার থেকে উৎপাদনকারী সংস্থাকে বিক্রির হিসাবের পুরোটাই রিটার্নের মাধ্যমে অনলাইনে জিএসটি নেট-কে জানাতে হবে। সেখানেই বলতে হবে যে ডিলারকে বেচা হয়েছে তার নাম, পণ্যের পরিমাণ, দাম ইত্যাদি। একই ভাবে জিএসটি নেট-কে লেনদেনের সমস্ত তথ্য জানাতে হবে ওই ডিলারকেও। সেখান থেকে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেবে কর দফতর। ফলে কারও পক্ষেই কোথাও গরমিল করা মুশিকল, জানান তিমিরবাবু।

তাঁর দাবি, সে ক্ষেত্রে কর দফতর ডিলার কার কাছ থেকে কী দামে কতটা পণ্য কিনেছে তা মিলিয়ে নিতে পারবে জিএসটি নেট-এ দেওয়া উৎপাদনকারীর তথ্যের সঙ্গে। ফারাক থাকলে ধরা পড়বে তখনই। ডিলার যদি কোনও ভুল তথ্য দেয় জিএসটি নেট-এ পরিষ্কার ধরা পড়ে যাবে সেটাও। কারণ, ডিলারের পণ্য কেনার হিসাব সেগুলির বিক্রির হিসাবের সঙ্গে মিলতে হবে। না-হলেই পড়তে হবে কর দফতরের প্রশ্নের মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GST Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE