বাসেল থ্রি-র শর্ত পূরণ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি তো বাড়তি শেয়ার মূলধন পেতে চাইবেই। কিন্তু বাজেটের বাধ্যবাধকতার জন্য তা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বরং শুক্রবার বৈঠকে ব্যাঙ্ক কর্তাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা দ্রুত মেটান। তা হলেই উজ্জ্বল হবে হিসেবের খাতার ছবি। ওই খাতে টাকা আটকে থাকা কমবে। সেই সঙ্গে কমবে সরকারের জোগানো মূলধনের উপর নির্ভরশীলতা। ঋণ দেওয়ার জন্য আরও বেশি অর্থ মজুত থাকবে ব্যাঙ্কগুলির হাতে। রাস্তা প্রশস্ত হবে ধারে সুদ কমানোরও।
এমনিতেই ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বাড়তি শেয়ার মূলধন জোগাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। গত অর্থবর্ষে ২৫ হাজার কোটি দেওয়া হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত জোগানো হয়েছে আরও ২২,৯০০ কোটি টাকা। কিন্তু ফিচ, মুডিজের মতো আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাগুলি মনে করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত রাখতে হলে এর থেকে অনেকটাই বেশি পুঁজি জোগাতে হবে কেন্দ্রকে। কিন্তু এ দিন জেটলি ও অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের কথা থেকে স্পষ্ট যে, তাঁরা সেই যুক্তি মানতে নারাজ। বরং অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যায় রাশ টেনে প্রয়োজনীয় বাড়তি পুঁজি নিজেদেরই জোগাড় করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, ব্যাঙ্কগুলি যে আরও পুঁজি পেতে চাইবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাজেটেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজকোষের পরিস্থিতি অনুযায়ী জেটলির এই রণকৌশল নেওয়া ছাড়া উপায়ও তেমন নেই। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে আরও পুঁজি জোগাতে বাজেটেও বাড়তি অর্থ সংস্থান করতে হবে। পরিকাঠামোয় বিপুল অঙ্ক ঢালতে হওযায় সেই সুযোগ ক্রমশ কমছে। ফলে এই অবস্থায় পুঁজি জোগাড়ের জন্য আগে ঋণ খেলাপের সমস্যার অসুর দমনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে সাহায্য করবেই। কিন্তু এই মুহূর্তে অনুৎপাদক সম্পদের জন্য তাদের বিপুল অঙ্ক প্রাথমিক মুনাফা থেকে তুলে রাখতে হচ্ছে। বিশেষত ইস্পাত-সহ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এই শোধ না-হওয়া ঋণ সবচেয়ে বেশি। জেটলির আশা, অর্থনীতির চাকায় গতি বাড়লে এই ক্ষেত্রগুলিতে উন্নতি হবে। কমবে অনুৎপাদক সম্পদ।
জেটলি বলেন, প্রাথমিক ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি সম্মিলিত ভাবে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছিল। কিন্তু কর ও অনুৎপাদক সম্পদের জন্য টাকা তুলে রাখার পরে লাভ ২২২ কোটিতে নেমে এসেছে। অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ২০১৪-’১৫ সালের ২.৬৭ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে বেড়ে হয়েছে ৪.৭৬ লক্ষ কোটি। অর্থমন্ত্রীর মতে, এই ঋণ খেলাপে রাশ টানা গেলে মূলধন জোগাড় তো সহজ হবেই, সেই সঙ্গে সুবিধা হবে ঋণে সুদ ছাঁটাইয়ে।
পরবর্তী ঋণনীতি অক্টোবরে। তার আগেই ঋণনীতি পর্যালোচনার কমিটি তৈরির ইঙ্গিত দিয়ে জেটলি বলেন, সুদের হার ঠিক করার সময় মূল্যবৃদ্ধির হার কমা এবং বর্তমান পরিস্থিতির কথা মনে রাখা হবে বলেই তাঁর আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy