মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরে ছ’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের ভাগ্যে জোটেনি বিশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বা টাউনশিপ অথরিটি-র তকমা। এই অধিকারের অভাবে দূষণ ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত সমস্যার সমাধান সেই তিমিরেই। আর, তার জেরে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়েই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জন্মলগ্ন থেকেই ১,১০০ একরের বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (এস ই জেড)-কে তাড়া করে ফিরছে দূষণের ভূত। এখানে চর্মশিল্পের পাশেই রয়েছে ১২০ একরের তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। চর্মনগরীর বেহাল বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বারবার। বছর তিনেক আগে রফাসূত্র হিসেবে বর্জ্য নিকাশি নালা আলাদা করা হয়। অর্থাত্ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রকল্পে ঢুকে পড়বে না চর্মনগরীর বর্জ্য। কিন্তু বিশেষ ফল হয়নি।
দূষণের কারণে কাজ চলাকালীন নির্মাণকর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়ায় টেক মহীন্দ্রা প্রকল্প শেষ করতে পারেনি। পরে আগ্রহ দেখালেও কাজ শুরু হয়নি এখনও। ধনসেরি ও ফোরাম প্রজেক্টস-এর বিশাল দু’টি বাড়িও প্রায় তৈরি। কিন্তু স্রেফ দূষণের জেরে বিপণন করা যাচ্ছে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ফলে কোনও সংস্থা অফিস তৈরির জন্য এখানে জায়গা লিজ বা ভাড়ায় নিতে এগোচ্ছে না।
রাজ্যে উৎপাদন ও বড় শিল্পের মতো তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও নতুন লগ্নি নেহাতই কম। লগ্নির এই খরায় বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে অফিস তৈরির চাহিদা তলানিতে ঠেকেছে। তার উপরে রয়েছে দূষণ সমস্যা। বিক্রির আশা ফিকে হওয়ায় প্রকল্পের জন্য আর টাকা খরচ করতে নারাজ নির্মাণ সংস্থাগুলি। প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে তা রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়বে। ক্রেতার অভাবে অনির্দিষ্টকাল বাড়তি টাকা গুনতে চাইছে না তারা।
রাজ্যে এখন অফিস তৈরি ও বাণিজ্যিক কাজের জন্য জায়গার চাহিদা না-থাকার মতোই। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, গত বছর এ জন্য মাত্র ১০ লক্ষ বর্গ ফুট জায়গার চাহিদা ছিল। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভাগ অনেকটাই। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অভিজিৎ দাস জানান, চাহিদা কম। সরবরাহ বেশি। সেক্টর ফাইভেই এখনও অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বানতলার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা যে ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে, তা স্পষ্ট।
সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের হুঁশিয়ারি। কয়েক মাস আগেই মন্ত্রক জানিয়েছে, এখানে দ্রুত প্রকল্প চালু না-করলে এসইজে়ড তকমার দৌলতে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা হারাতে হতে পারে তাদের। এমনিতেই সরকারের এসইজে়ড বিরোধী অবস্থানের জেরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বড় লগ্নি হারাচ্ছে রাজ্য। ইনফোসিস তার উদাহরণ।
রাজ্যে জমি সমস্যার জেরেই তৈরি হয় বানতলার কলকাতা আই টি পার্ক। সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমির অভাব। যেটুকু আছে, তারও দাম আকাশছোঁয়া। সমস্যার সমাধান করে বানতলা। ১৮টি সংস্থা জমি নেয় এখানে। কিন্তু সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের তুলনায় বানতলা ‘দুয়োরানি’ থেকে যায় বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ। সমস্যা সামলাতে বিশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, ‘বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ তৈরির ভাবনা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকেই। সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাস্তা, আলো, নিকাশি, জল, নিরাপত্তা, দূষণ ইত্যাদি পরিষেবার অভাব কাটেনি।
পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগ তুলেছে বানতলার চর্মশিল্পও। বর্জ্য সরানো ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত ত্রুটি নিয়ে সম্প্রতি প্রকল্পের নির্মাতা সংস্থা এম এল ডালমিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে বানতলার ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন। তাদের ক্ষোভ, দূষণের যাবতীয় দায় তাদের উপরে চাপিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে নির্মাতা সংস্থা। ডালমিয়ার তরফে এ নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই টানাপড়েনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে টাউনশিপ অথরিটির তকমার দিকেই তাকিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও চর্মশিল্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy