আজ বাজেট। উচ্ছ্বাস এক রকম নেই। আশঙ্কার রসদ অবশ্য যথেষ্টই মজুত আছে। কঠিন অঙ্ক দেওয়া হয়েছে জেটলিকে। কতটা মেলাতে পারেন তাই এখন দেখার অপেক্ষা।
একই সঙ্গে শিল্পে প্রাণ ফেরাতে হবে। মদত দিতে হবে কৃষিকে। অক্সিজেন জোগাতে হবে ব্যাঙ্কিং শিল্পকে। বাড়াতে হবে রফতানি। ত্বরান্বিত করতে হবে আর্থিক সংস্কার। ফিরিয়ে আনতে হবে বিদেশি লগ্নিকারীদের। বেসরকারি লগ্নি কমে আসায় সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে বিনিয়োগের ঝাঁপি নিয়ে, বিশেষ করে পরিকাঠামো শিল্পে। এক ঢিলে এতগুলি বড় মাপের সমস্যা সামাল দেওয়া কিন্তু সহজ কাজ নয়। এর উপর যদি বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে হয়, তবে তার জন্যও গুনতে হবে বড় অঙ্কের টাকা। তহবিলের যা অবস্থা, তাতে এতগুলি বড় ব্যাপার সামলানো কিন্তু কঠিন।
এই অবস্থায় করের হার কমবে অথবা করছাড়ের সীমা উপরের দিকে উঠবে, এমন আশা না-করাই ভাল। ছিটেফোঁটা কিছু হলে তাকে বোনাস হিসেবে ভাবতে হবে। ধাপে ধাপে ছাড় তোলা হবে, এমন কথা আগেই বলে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যদি কিছু করছাড় দেওয়াও হয়, পাশাপাশি তুলে নেওয়া হতে পারে কিছু ছাড়ের সুবিধা।
বাজেটে এ বার কৃষিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হবে, এ কথা সরকারের তরফে আগেই বলা হয়েছে। কৃষির উন্নতি হলে তবেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে টাকা আসবে। বাড়বে শিল্প-পণ্যের চাহিদা। নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। আবার মূল্যবৃদ্ধি কমলে সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত হবে। লাভবান হবে শিল্প। পাশাপাশি মোটা টাকা ঢালতে হবে অনাদায়ী ঋণের কারণে
বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের ভারে নুয়ে পড়া ব্যাঙ্কিং শিল্পে। তবে বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে সরকারের খরচ অনেকটা বাড়লেও মানুষের হাতে টাকার জোগানও বাড়বে। ফলে বাড়বে পণ্যের চাহিদা। আশার আলো দেখবে শিল্প।
এ ছাড়া, যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে রফতানিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে। জ্বালানি তেলের দাম যদি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং পাশাপাশি যদি রফতানি না-বাড়ে, তবে ভবিষ্যতে তা দুঃখের কারণ হবে। অর্থাৎ জেটলির সামনে সমস্যার কোনও অভাব নেই। একসঙ্গে এত সবের মোকাবিলা করার জন্য আজ বাজেটই তাঁর হাতিয়ার।
এ বার বিভিন্ন শিল্পেরও আছে নানা ধরনের সমস্যা। প্রস্তাব ও দাবি এসেছে বহুবিধ। সরকারের পক্ষেও থাকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি। এই সব প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি নিয়েই সাধারণত বাজেটের আগে কিছুটা চঞ্চল হয়ে ওঠে বাজার। এ বার কিন্তু তা আদৌ হয়নি। বরং আশঙ্কা গ্রাস করেছে বাজারকে। ২২ হাজারে নেমে আবার কোনও রকমে ২৩ হাজারে উঠেছে সেনসেক্স। বাজেট যদি বাজারের মনঃপূত না-হয়, তবে আরও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে সূচক। অন্য দিকে বাজারের জন্য যদি কোনও সঞ্জীবনী থাকে, তবে সাময়িক ভাবে তা উঠতে পারে।
তবে বাজারের পাকাপাকি উত্থানের জন্য বিভিন্ন বিদেশি আর্থিক সংস্থাকে ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। সংক্ষেপে বলতে গেলে: ১) শিল্পে যদি প্রাণ ফেরে, ২) সংস্থাগুলি যদি ভাল ফলাফল প্রকাশ করতে শুরু করে, ৩) সরকার যদি সত্যি সত্যিই পুরনো বকেয়া কর আদায়ের প্রস্তাব থেকে সরে এসে ভোডাফোনের মতো সংস্থাকে স্বস্তি দেয় এবং ৪) আর্থিক সংস্কারে আবার উৎসাহ দেখায়, তবেই চলে যাওয়া বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলিকে বাজারে ফেরানো যেতে পারে। এই ব্যাপারে বাজেটে কতটা রসদ থাকে, তা-ই এখন দেখার।
ব্যক্তিগত করের ক্ষেত্রে এ বার বিরাট কিছু আশা করা হচ্ছে না। টুকিটাকি এটা-ওটা থাকতে পারে। বড় সুবিধা থাকার সম্ভাবনা কম। সামনে কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন। এই কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু দেওয়া হলেও হতে পারে। এর আওতায় পড়তে পারে বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার বিষয়টি। এটা হলে চাপ বাড়বে বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির উপর।
বিভিন্ন জমা প্রকল্পে সুদ কমে আসায় প্রবীণ নাগরিকরাও কিছু বাড়তি সুবিধা আশা করছেন এ বারের বাজেট থেকে। তাঁদের দাবি, প্রবীণদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে বছরে ৩.৫ লক্ষ টাকা করা হোক। প্রশ্ন হল, সীমিত অর্থের ভাণ্ডার নিয়ে জেটলি কতটা দরাজ হতে পারবেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার নয়। সব জল্পনার শেষ হবে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। পাওয়া এবং হারানোর উপাখ্যান লেখা হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ হতে যা সামান্য দেরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy