কালো টাকা সাদা করতে ‘শেষ সুযোগের’ জানলা খুলল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী গরিব জনকল্যাণ প্রকল্প নামের ওই ঘোষণা আগেই হয়েছিল। তা চালু হচ্ছে আজ, শনিবার থেকে।
কর, জরিমানা, সারচার্জ মিলিয়ে ৫০% গুনে টাকা সাদা করার সুযোগ মিলবে। তবে পুরনো নোটে কালো টাকা জমা দিতে হবে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে। গোড়াতেই মেটাতে হবে কর ও জরিমানা। তার পরে অবশ্য সেই কালো টাকা কেন্দ্রের কাছে ঘোষণার সময় মিলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। অর্থাৎ, আর সাড়ে তিন মাস। এবং কেন্দ্রের দাবি, কালো টাকা সাদা করতে এটাই শেষ সুযোগ।
কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিল করেছিলেন। কিন্তু সরকার বুঝতে পারছিল যে, আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা চলছে। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে তা হচ্ছেও। যেমন, অভিযোগ উঠছিল অনেকে কালো টাকা সাদা করতে তা গরিবের জনধন অ্যাকাউন্টে জমা করছেন। এই সমস্ত দেখেই ফের কালো আয় ঘোষণার জানলা খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। একে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা’ নাম দিয়ে ঘোষণা করেন, কর-জরিমানার একাংশ যাবে গরিবদের কল্যাণে। আজ মোদী সরকার জানাল, পুরনো নোট জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩০ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে বটে। কিন্তু তা সাদা না কালো, তা জানানোর জন্য আগামিকাল, ১৭ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় মিলবে। একই সঙ্গে কালো টাকা ধরতে সাধারণ মানুষকেও সামিল করেছে কেন্দ্র। কারও কাছে তার খবর থাকলে জানানোর জন্য দেওয়া হয়েছে ই-মেল ঠিকানা।
চলতি বছরেই জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কালো আয় ঘোষণার জন্য চার মাসের জানলা খুলেছিল মোদী সরকার। তারপরেও ফের কেন এত সময় দেওয়া হচ্ছে?
রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢ়িয়ার জবাব, ‘‘আয়ের হিসেবনিকেশ করতে যথেষ্ট সময় দেওয়াই এর কারণ। যাতে কর ফাঁকির টাকা থাকলে এই প্রকল্পে যোগ গিয়ে ৫০ শতাংশ কর-জরিমানা মিটিয়ে দিয়ে লোকে গরিবদের কল্যাণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। কারণ এরপর ধরা পড়লে ৭৭.২৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ কালো টাকাই বাজেয়াপ্ত হবে। সিবিআইয়ের মামলা হবে। রেহাই মিলবে না। তা ছাড়া, ৩০ ডিসেম্বর পুরনো নোট জমার মেয়াদ ফুরোনোর পরে, সেই পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা ও গরমিল ধরা পড়লে নোটিস পাঠানোর জন্য আয়কর দফতরও যথেষ্ট সময় পাবে।’’
এই প্রকল্প চালুর জন্য আয়কর আইনে সংশোধন করেছিল মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতির সই মেলার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আগামী কাল থেকে তা চালু হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে আগে কর মিটিয়ে দিতে হবে। তারপর প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য সেই কর জমার রসিদ দেখিয়ে কালো টাকার ঘোষণা করতে হবে। এর আগে যে স্বেচ্ছায় কালো টাকা ঘোষণা প্রকল্প চালু হয়েছিল, সেখানে আগে তা ঘোষণা করে, পরে কিস্তিতে কর এবং জরিমানা মেটানোর সুযোগ ছিল।
বিরোধীরা বলছেন, আসলে নোট বাতিল করেও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইতে সুবিধা হচ্ছে না দেখেই মোদী সরকারকে কালো টাকার মালিকদের স্বেচ্ছা ঘোষণার উপরে ভরসা করতে হল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের দাবি, কোথায় পুরনো নোটে কালো টাকা জমা পড়ছে, তা সবই টের পাচ্ছে আয়কর দফতর, ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ)। রাজস্ব সচিবের যুক্তি, ‘‘আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমায় সমস্যা হবে না বলে অনেকে একাধিক অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ টাকা করে জমা করেছেন। তা-ও টের পেয়েছি আমরা। আয়কর দফতরের তল্লাশিতে যে বিপুল টাকা উদ্ধার হচ্ছে, পরিসংখ্যান ঘেঁটে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সেই সব অভিযান হচ্ছে।’’
এক দিকে এই দাবি করলেও আজ আমজনতার থেকেও কোথায় কালো টাকা জমা পড়ছে, তার সন্ধান জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে অর্থ মন্ত্রক। আয়কর দফতরে ই-মেল পাঠিয়ে কালো টাকার খবর জানানো যাবে।
আয়কর দফতরের তল্লাশিতে নোট বাতিলের পর থেকে মোট ৩৯৩ কোটি টাকার নগদ-গয়না আটক হয়েছে এবং কর ফাঁকির স্বীকারোক্তিতে ২৬০০ কোটি টাকা মিলেছে। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের চেয়ারম্যান সুশীল চন্দ্র বলেন, ‘‘নোট বাতিলের পর থেকে সোনার গয়না বা বার কিনে, আগের তারিখের বিল বানিয়ে কেনাকাটা করে, একাধিক অ্যাকাউন্ট, জন ধন অ্যাকাউন্ট বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে, নগদে ঋণ শোধ করে, অংশীদারি সংস্থায় পুরনো নোট জমা করে টাকা সাদা করার চেষ্টা হয়েছে।’’
প্রশ্ন হচ্ছে, কালো টাকা সাদা করার সুলুকসন্ধান জানা থাকলেও, মাত্র ৫০ শতাংশ কর-জরিমানা নিয়েই কালো টাকার মালিকদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে কেন?
রাজস্ব সচিবের জবাব, ‘‘আমরা ইন্সপেক্টর-রাজ চাই না। ৩১ মার্চের পর থেকে আয়কর দফতর যাবতীয় হিসেব-নিকেশ পরীক্ষা করবে, নোটিস পাঠাবে। আমরা চাই না, আয়কর দফতর মানুষের পিছনে পড়ে থাকুক। আয়কর দফতর যাবতীয় হিসেব-নিকেশ খতিয়ে দেখবে। কিন্তু কাউকে বিরক্ত করবে না।’’
সুশীলের দাবি, যাবতীয় নোট জমার রোজ হিসেব চাওয়া হচ্ছে, এফআইইউ তা পরীক্ষা করছে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আয়কর দফতর অভিযান চালাচ্ছে। সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই নজরদারি চলছে। জমা করা টাকায় কর মেটানো হয়েছে কি না, পরীক্ষা হচ্ছে। যাদের কালো টাকা রয়েছে, শেষ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের একেবারে দায়মুক্ত হয়ে যাওয়া উচিত।
জানলা হাট
• কালো টাকা ঘোষণার জানলা খুলছে আজ, ১৭ ডিসেম্বর থেকে
• কর, জরিমানা ও সারচার্জ হিসেবে ৫০% গুনে টাকা সাদা করার এটাই শেষ সুযোগ, দাবি কেন্দ্রের
• জানানোর সময় ৩০ ডিসেম্বর থেকে বেড়ে আগামী ৩১ মার্চ
• আগে কালো টাকা জমা দিয়ে কর-জরিমানা মিটিয়ে তারপরে ঘোষণা
মামলা ক’টি
• তল্লাশি-অভিযান: ২৯০টি
• অনুসন্ধান: ২৯৫টি
• নোটিস ৩০০০টি
তল্লাশি-প্রাপ্তি
৮ নভেম্বরের পর থেকে আয়কর হানার তল্লাশিতে—
• মোট আটক ৩৯৩ কোটি টাকা • পুরনো নোট ২৩৬ কোটির • নতুন নোট ৮০ কোটির • গয়না ৭৭ কোটির • ২,৬০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি স্বীকার
কোথাও কালো টাকা জমার খবর
থাকলে জানান:
blackmoneyinfo@incometax.gov.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy